মোদি বিরোধী আন্দোলন ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম  শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের আহবানে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিকে দাওয়াত করা হয়েছে।সরকার শুধুমাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি করেনি বরং মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও অতিথি করেছে।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। জো বাইডেন,বরিস জনসন,জাস্টিন ট্রুডো এবং এরদোয়ান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৭ সালেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিশ্বের আলোচিত রাষ্ট্র নায়কদের দাওয়াত করেছিলেন। ন্যালসন মেন্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদি ২০১৫ সালে ও বাংলাদেশে আগমণ করেছিল এবং বিএনপি ও অন্যান্য দলের সাথে বৈঠক করেছিলো। যদিও তখন ধর্মভিত্তিক কোন দল বিরোধিতা, বক্তৃতা-বিবৃতি বা আন্দোলনের ডাক দেয়নি। আবার ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বিএনপি সহ ডান পাড়ার রাজনৈতিক কার্যালয় গুলোতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। তার মানে মোদি বিরোধী আন্দোলন আসলে কোন ইসলামী বা ঈমানী আন্দোলন নয় বরং গুটিকয়েক ধর্মীয় নেতাদের ক্ষমতায় আরোহণের সিড়ি মাত্র।

 

বাংলাদেশি ‍হুজুরদের কেবলা হলো ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ। তাঁদের প্রায় সকল আকাবিরের বসবাস ভারতে।  নরেন্দ্র মোদী ভারতেরই প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সেই আকাবিরগণের বক্তব্য ও তৎপরতা কী? দারুল উলূম দেওবন্দের কয়জন ছাত্র-শিক্ষক মোদী-বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন?  বাংলাদেশে মাদ্রাসা-ছাত্রদের সামনে রেখে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোজীরা, গভীর জলের অক্টোপাসেরা এবং রাজনীতির প্রমোদবালকেরা যে-লীলাখেলা করে তার পরিণাম কেন ছাত্রদেরই ভোগ করতে হয়?  ২০১৩ থেকে নিয়ে গতকাল পর্যন্ত যত মাদ্রাসা-ছাত্র নিহত হয়েছে, যত ছাত্র পঙ্গুত্ববরণ করেছে সে ব্যাপারে কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলাই হয় নি, বিচার হওয়া তো দূরের কথা। পরিবার কেবল তাদের সন্তানের লাশটুকু পায়, এর বাইরে কিছু নয়।  মোদী-বিরোধী গতকাল যারা নিহত হয়েছে তাদের দায়-ভার কেউই নেবে না। না রাষ্ট্র, না মাদরাসা।

 

ইসলামে অতিথির সম্মান করাঃ

 

ইসলাম অতিথিকে পরিপূর্ণ সম্মান দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে, চাই সে মুসলিম হোক, বিধর্মী হোক। বরং এটি কল্যাণ ও মহত্তের প্রতীক। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আ.)  পৃথিবীতে আতিথেয়তার প্রথা চালু করেন। রাসূল (সা.) ও  অতিথি সেবার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। মেহমানদারির সাথে ঈমানদারির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার অতিথিকে  সম্মান করে।’ (বুখারী, হাদীস-৬০১৮; মুসলিম, হাদীস-৪৮)

 

আতিথেয়তা নবীদের সুন্নাহ, আদর্শ। কুরআনে হযরত ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমার ফেরেশতারা (পুত্র সন্তানের সুসংবাদ নিয়ে) ইবরাহীমের কাছে আগমণ করল। তারা বলল, ‘সালাম’। তিনিও বললেন, সালাম। তিনি অবিলম্বে কাবাবকৃত গোবৎস নিয়ে এলো।’ (সূরা হুদ, আয়াত-৬৯)।

 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা আমাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল যা ছিল স্পষ্টতই জুলুম। তা সত্যেও ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের ভুট্টু আসলে কোনো প্রতিবাদ হয়নি বরং আনন্দ মিছিল করা হয়েছিল। আজও আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি থাকলে সব হালাল হয়ে যেত কেননা বিএনপির মাধ্যমে ক্ষমতার চেয়ারে বসার সম্ভবনা থেকে যায়।তাছাড়া মোদি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফর করেছে, কই তখন তো ঈমানের প্রশ্ন আসে নাই।

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন