শত্রুর বিষে মরল পুকুরভর্তি পাঙাশ, বিপাকে তরুণ খামারি

কিশোর বয়স থেকেই ঢাকার সাভারে মাছ চাষ শুরু করেন রাসেল খান। কঠোর পরিশ্রম করে এখন তিনি সফল খামারি। বেশ কয়েকটি মাছের খামারের পাশাপাশি একটি গরুর খামারও করেছেন তিনি। কিন্তু কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের কারণে বারবার তাকে হোঁচট খেতে হচ্ছে। গত বছরও একটি খামারের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার পর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার দুটি পুকুরের প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার মাছ বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৭ ‍জুন) ভোর থেকে বেলা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আশুলিয়ার মোজার মিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দুটি পুকুর থেকে বিপুল সংখ্যা মরে যাওয়া পাঙাশ মাছ সংগ্রহ করেন রাসেল ও তার কর্মীরা।
ভুক্তভোগী খামারি রাসেল খান বলেন, ‘একটার মইদ্দে ১২ হাজার আর আরেকটার মইদ্দে ৬ হাজার পাঙাশ আছিল… একেকটা পাঙাশ এক-দেড় কেজি ওজন হইছিল। এখন বাজারে নিম্নে ৮০ টাকা কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়। সেই হিসাবে আমার ৮-১০ লাখ টাকার ক্ষতি হইছে।’
তিনি বলেন, ‘মনে হয় রাত ৩টার দিকে বিষটা দিছে। সকালে যখন খাবার দিতাছি তখন মাছ নড়ে না। পরে লোক নামাইয়া দেহি যে, পানির নিচে সব মাছ মইরা পইড়া গেছে। প্রায় ৮০-৯০ মণ মাছ উঠাইছি।’
কেন বা কারা এমন কাজ করল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মাছ চাষ করি প্রায় আট বছর। আর ট্রেড লাইসেন্স করছি তিন বছর ধইরা। অহন অনেক শত্রু আছে না ভাই। আরও প্রায় ৮-৯ মাস আগেও এই রকম ২০ লাখ টাকার মতোন মাছ মাইরা ফালাইছিল। আমি অল্প বয়সে এই রকম একটা ব্যবসা গোছাইছি। তাছাড়া আমার আরও অনেক খামার আছে। বাংলা মাছের (দেশি) খামার আছে আরও চারটা। এমনতে একটা গরুর খামারও আছে।’
রাসেল বলেন, ‘গেল বন্যায় এমনি আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হইছি। ইপিজেডের বিষাক্ত পানি ঢুইকা আমার এক পুকুরের প্রায় এক কোটি টাকার মাছ মইরা গেছিল। অনেক ঋণ হয়ে গেছি। আবার এই মাছগুলো মাইরা ফালাইল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলাম।’
সাভার উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘এই ধরনের বিষয়গুলাতে আসলে আমাদের করার কিছু থাকে না। কারণ বিষটা যে এখানে দিছে এটার কোনো সাক্ষী নেই। আবার পানি পরীক্ষা করে যে বিষ, আইডেন্টিফাই করার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই। একমাত্র ময়মনসিংহে থাকতে পারে সেটাও সুনিশ্চিত না।’
‘এখন প্রথম করণীয় হচ্ছে, উনি যদি কাউকে সন্দেহ করে; তাহলে ওই খামারি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সুস্পষ্ট কারণ দেখাতে হবে। এ জন্য আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’
ওই খামারিকে আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে খামারি বা কৃষককে প্রণোদনা কিংবা অনুদান দেওয়া হবে এমন কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। সরকারি ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকেও প্রধানমন্ত্রীর একটা ফান্ড কৃষি ক্ষাতের জন্য দেওয়া আছে। সেক্ষেত্রে খামারি বা চাষিকে সার্টিফাই করে তারা লোন দেবে। যেহেতু তিনি ক্ষতিগ্রস্ত তাই আমরা তাকে চাষি হিসেবে বা তরুণ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সার্টিফাই করে দিব।’
Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন