সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)

ইসলাম ডেস্ক-মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) সর্বশেষ নবী। দুনিয়ার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব। কুরআন এবং মুসলিম উম্মাহই কেবল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছেন অমুসলিম মনীষীরাও।

‘মাইকেল হার্ট’ যিনি বিশ্বের সর্বকালের সবচাইতে প্রভাবশালী একশত সেরা মনীষীর জীবনী লিখেছেন, তিনি সেই জীবনী তালিকায় প্রথমেই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে স্থান দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “মুহাম্মদ (সা.) এর সাফল্যের মধ্যে জাগতিক ও ধর্মীয় উভয় বিধ প্রভাবের এক অতুলনীয় সংমিশ্রণ ঘটেছে। এজন্য সংগতভাবেই তাঁকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।” -(দ্যা হ্যান্ড্রেড)

সৌদিআরবের মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়াল মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। দুনিয়ায় আসার পুর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান। আবার ছয় বছর বয়সে মা আমিনাও মারা যান। পিতা-মাতা উভয়কে হারিয়ে মহানবী (সা.) অসহায় ও এতিম হয়ে পড়েন। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি দাদা আবদুল মুত্তালিব এর আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। কিন্তু আট বছর বয়সে দাদাকেও হারান। এরপর চাচা আবু তালিবের স্নেহে লালিত পালিত হন।

বয়স যখন কৈশোরে তখন একটি সত্য ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘হিলফুল ফুযুল’ অর্থাৎ শান্তিসংঘ। হিলফুল ফুযুলের উদ্দেশ্য ছিল, আর্তমানবতার সেবা করা। অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। গোত্রে গোত্রে সম্প্রীতি বজায় রাখা ইত্যাদি।

মহানবী (সা.) -এর প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খুওয়াইলিদ কন্যা খাদিজা লোক মারফত মহানবী (সা.)-কে তাঁর ব্যবসায়ে নিযুক্ত করার প্রস্তাব করেন। চাচা আবু তালিবের সাথে আলোচনা করে মহানবী (সা.) তাতে রাজী হলেন। সততা ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দেখে মক্কার সম্পদশালী মহিলা খাদিজা (রা:) নিজ ব্যবসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মহানবী (সা.) এর ওপর অর্পন করেন। অতি কম সময়ে খাদিজার ব্যবসা পরিচালনায় মহানবী (সা.) সততার অনন্য নজির স্থাপন করেন। খাদিজা মহানবী (সা.) এর বিশ্বস্ততা ও কর্মদক্ষতায় অভিভূত হন। মুগ্ধ হন। তারপরই খাদিজা নিজেই মহানবী (সা.) এর সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। চাচা আবু তালিবের সম্মতিতে খাদিজার সঙ্গে মহানবী (সা.) এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ সময় তাঁর বয়স পচিশ বছর হলেও খাদিজার বয়স ছিল চল্লিশ বছর।

নবুয়ত প্রাপ্তির সময় খুব কাছাকাছি। মহানবী (সা.) যেন পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী নির্জনতাপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এসময় তাঁর বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়ে যায়। হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় একাধারে কয়েকদিন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। হঠাৎ এক রাতে জিবরাইল (আ:) তাঁর কাছে ওহী নিয়ে আসেন। জিবরাইল (আ:) কুরআনের আয়াত পাঠ করে শুনালেন- “পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” তখন তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।

নবুওয়ত পেয়ে মহানবী (সা.) মানুষদের আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দেন। এতে মূর্তিপূজারী লোকজন তাঁর দাওয়াতের বিরোধিতা শুরু করে। তাঁর ওপর নানারকম নির্যাতন চালাতে থাকে। তারা মহানবী (সা.)-কে সমাজের নেতা বানানোর প্রলোভন দেখায়। ধন-সম্পদের লোভ দেখায়। মহানবী (সা.) তাদের বলেন, “আমার এক হাতে সূর্য ও অন্য হাতে চাঁদ এনে দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হবো না। মহানবী (সা.) এর ওপর মক্কার কাফেররা ভীষণ ক্ষেপে ওঠে। অত্যাচার শুরু করে। তাঁর সাথে করে দুর্ব্যবহার। তাদের দুর্ব্যবহারে মহানবী (সা.) অনেক কষ্ট পান।

একসময় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে তিনি মদীনায় চলে যান। মদীনাকে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। তিনি সেখানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ সব স¤প্রদায়ের লোকের পরস্পরের মধ্যে শান্তি, স¤প্রীতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ‘মদীনা সনদ’ সম্পাদন করেন। এ মদীনা সনদই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত চুক্তি বা সংবিধান। এ সনদের ফলে মুসলমান আর অমুসলমানদের মধ্যে এক অপূর্ব সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়। নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

মদীনায় যাওয়ার আট বছর পর অর্থাৎ অষ্টম হিজরির রামাদ্বান মাসে দশ হাজার সাহাবী নিয়ে মহানবী (সা.) আবার নিজের জন্মভূমি মক্কায় ফিরে আসেন। মহানবী (সা.) এর বিশাল সৈন্যবাহিনী দেখে মক্কার অমুসলিমরা ভীষণ ভয় পায়। প্রতিরোধ করার সাহস তারা হারিয়ে ফেলে। মহানবী (সা.)-কে যারা তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছে, জানে মেরে ফেলতে চেয়েছে, প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে এবং স্বদেশ ত্যাগ করার পরও স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। মক্কা বিজয়ের দিন ইচ্ছা করলে মহানবী (সা.) প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ভীতসন্ত্রস্ত কোরায়েশদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তোমরা সকলেই মুক্ত। আজ তোমাদের প্রতি কোন কঠোরতা নেই। নেই কোন প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ স্পৃহা। তোমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। মহানবী সা. এর অনুপম আচরণ ও অপূর্ব দুর্ধর্ষ আরব কোরায়েশদের পাষাণ হৃদয় মুহুর্তে দ্রবীভূত হয়ে যায়। চারিদিকে আকাশে বাতাশে ধ্বনিত হয় “মারহাবা ইয়া রাসূলুল্লাহ- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।”

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন