সেই ইউএনওকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, এলাকায় আনন্দের বন্যা

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা ঘর নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে ওএসডি করা হয়।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সোমবার রাতে ইউএনওকে ওএসডির খবরে আমতলী সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।

জানা গেছে, মো. আসাদুজ্জামান গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর আমতলীতে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর অধীনে দ্বিতীয় ধাপে আমতলীর হতদরিদ্রদের ৩৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ওই প্রকল্পের ঘরপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ঘরপ্রতি বরাদ্দে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা থাকলেও তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন।

এ ছাড়া তার কার্যালয়ের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক বাদশার নিজ গ্রাম হরিদ্রবাড়িয়ায়ায় টাকার বিনিময়ে ধনাট্য ব্যক্তিদের ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেন ইউএনও।

ইউএনও আসাদুজ্জামান ঘর নির্মাণে সুজন মুসল্লি ও হাবিব গাজী নামে দুজনকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা ঘরপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা আদায় করে এনামুলের মাধ্যমে ইউএনওর হাতে পৌঁছে দেন। যারা টাকা দেন তাদের বাড়িতেই পৌঁছে যায় ঘর নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রী।

ইউএনও ঘর বরাদ্দের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন নজরে আসে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের। তাৎক্ষণিক তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

ওই তদন্ত কমিটি ঘরের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ঘর দেওয়ার সত্যতা পায়। এর পর বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান ওই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।

ওই প্রতিবেদনের আলোকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে আমতলীর ইউওনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একই অভিযোগে গত ৫ মে তার কার্যালয়ের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক বাদশাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান।

এদিকে সোমবার রাতে ইউএনও আসাদুজ্জামানকে ওএসডির খবর আমতলীতে জানাজানি হলে সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করার আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। আদেশ মোতাবেক তাকে ইতোমধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন