ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হালেন মাদ্রাসার ছাত্র জাকারিয়া

নিউজ২৪লাইন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া। তিনি রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ঢাবিতে প্রথম হওয়ার সব কৃতিত্ব জাকারিয়া তার মাকে দিয়েছেন।

জাকারিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য যদি আমি কারও অবদান মনে করি সেটা হলো আমার মা। এর পেছনে তার অবদান শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ। তারপর রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। আমার পরীক্ষার আগে এলাকাবাসী আমার জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেছিল। তাদের এ ঋণ শোধ করার মতন নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে প্রথম হওয়া মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, রাজনীতি আর পড়াশোনা এক সাথে কোনোদিন সম্ভব না। যে কারণে আমি ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাই। তারপর নিজে স্বয়ং সম্পন্ন হবো। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। যেটা আমার মা বাবারও ইচ্ছা। আমি চাই তাদের ইচ্ছাকে পূরণ করতে।

ছেলের এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য আনন্দে আত্মহারা মা কাজী তাহেরা পারভিন জাকিয়া। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে শোনান ছেলে জাকারিয়ার এই গৌরব অর্জনের কথা।

পারভিন জাকিয়া জানান, জাকারিয়ার জন্ম ২০০১ সালের ২ জুন। দুই ভাইয়ের মধ্যে জাকারিয়া বড়। ১৪ বছরের ছোট ভাই মো. জারিফ বর্তমানে জাকারিয়ার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেমরা এলাকার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বাবা মো. শহিদুল ইসলাম সেলিম মোল্লা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর এলাকায় উইলস মার্কেটিং কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার হিসাবে ১৯৯৮ সাল থেকে কর্মরত আছেন। মা কাজী তাহেরা পারভিন জাকিয়া বরিশালের বাকেগঞ্জের দুধলমৌ ফয়েজ হোসাইন ফাজিল মাদরাসায় ২০০৪ সাল থেকে সহকারী মৌলভী হিসাবে কর্মরত আছেন।

২০০২ সালে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার পরিবারের সবাই শিক্ষিত হওয়ায় ছেলেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাড়ির পাশে দক্ষিণ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ওই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম হয় জাকারিয়া এবং ২০১১ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

জাকারিয়ার মা আরও বলেন, বাড়ি সংলগ্ন পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদরাসায় ২০১২ সালে জাকারিয়াকে ভর্তি করানো হয়। পরের বছর তার বাবার কর্মস্থল গাজীপুরের মাওনা শ্রীপুর এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া কওমি মাদরাসায় কোরানে হাফেজ করানোর জন্য হেফজখানায় ভর্তি করান। সেখান থেকে ২০১৫ সালে জাকারিয়া কোরানে হাফেজ উত্তীর্ণ হয়। এই ফাঁকে ৭ম শ্রেণির লেখাপড়া প্রাইভেট পড়ে সম্পন্ন করে। পরে তাকে আবার পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে জাকারিয়া ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। যেটি ছিল দুমকী উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয়। সেখান থেকে ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া এলাকার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ওই ভর্তি পরীক্ষায়ও এক হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে জাকারিয়া তখন প্রথম হয়েছিল।

২০১৮ সালে দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকা বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন জাকারিয়া। ২০২০ সালে আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকা বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি।

গত ২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন মোহাম্মদ জাকারিয়া। জাকিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সর্বদা নজরদারির মধ্যে রাখতে পেরেছি বলেই মহান রাব্বুল আলামিন আজ আমার মনের আশা পূর্ণ করেছেন।

জাকারিয়ার মা জানান, ছেলে হিসাবে কখনও আমার কাছে অতিরিক্ত কোনো আবদার করেনি। যখন যেভাবে পেরেছি ওর মন জয় করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিল সেকারণে স্থানীয়রাও ওকে দারুণ পছন্দ করতো। আমি

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন