মিথ্যা মামলার আক্রোশে গণমাধ্যমের মালিক, প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিনিধি :
কুমিল্লার ছোটরা এলাকায়, মামলাবাজ নারী আয়েশা আক্তারের মিথ্যা মামলার রোষানলে পড়েছেন গণমাধ্যমের এক মালিক ও তার পরিবার। ওই গণমাধ্যম মালিকের নাম তাওহীদ হোসেন মিঠু ও তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার লাভলী। তিনি কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত বর্তমান প্রতিদিন পত্রিকা এবং কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি’র চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি জাতীয় গনমাধ্যম মোহনা টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এবং প্রত্যাহার করার দাবিতে ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লায় কর্মরত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সকল সাংবাদিকবৃন্দ কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। মানব বন্ধনে সাংবাদিক নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, গনমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এসব ষড়যন্ত্র করে গণমাধ্যমকে দাবিয়ে রাখা যাবেনা। আয়েশা আক্তার নামের ওই মহিলা রাজীব হত্যা কান্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ নিয়েই কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি রিপোর্ট করেছে। যার প্রেক্ষিতে ওই টেলিভিশনের চেয়ারম্যান এবং তার পরিবারকে হয়রানী করার উদ্দ্যেশ্যে মিথ্য মামলা দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে কুমিল্লার সকল সাংবাদিক বিষয়টি জেনে গেছে।
সাংবাদিক নেতারা আরো বলেন, এই মিথ্যা মামলার পেছনে কিছু লোক রয়েছে, যারা পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে এই হয়রানী করছেন। তাদেরকে এসব ঘৃন্য কাজ থেকে অনতিবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানা তারা।

এসব ঘটনায় আয়েশা আক্তার বলেন, কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি’র চেয়ারম্যান ও তার পরিবার একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা নেয়। এই ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে।
ফ্ল্যাট ক্রয়ের উদ্দ্যেশ্যে টাকা দেয়ার সময় কোনো চুক্তি বা ডকুমেন্টস এর ভিত্তিতে টাকা লেনদেন হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের ব্যাপারে আয়েশা আক্তার বলেন, কয়েকজন স্বাক্ষী ছিলো। টাকা নিয়ে ব্লাঙ্ক একটি চেক তাকে দেয়া হয়েছে।

কখন বা কবে লেনদেন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আয়েশা বলেন, গত ২বছর আগে টাকা দেন তিনি। পরিস্কার সময় তার মনে নেই। তার কাছে থাকা চেকে সব উল্লেখ রয়েছে।

এব্যাপারে কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি’র পরিচালক বিলকিস আক্তার লাভলী বলেন, আয়েশার সাথে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। টেলিভিশনে তথ্য প্রমান নিয়ে রিপোর্ট করায় ওই রিপোর্টটি আয়েশার বিরুদ্ধে যায়। ফলে, একই এলাকায় বসবাস করায়, কৌশলে অফিসে এসে আমার একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক চুরি করে নিয়ে যায়। যা এই বছরের গত জানুয়ারী মাসের কথা উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করে। যদি এর সত্যতাই থাকবে তাহলে ত্রিশ লক্ষ টাকা লেনদেনে অবশ্যই ডিট ডকুমেন্টসহ একটি পরিস্কার বিষয় পরিলক্ষিত থাকবে।

কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি’র চেয়ারম্যান তাওহীদ হোসেন মিঠু বলেন, মামলা অনুযায়ী আয়েশা আক্তারের সাথে তার স্ত্রীর যখন লেনদেন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন, তার বহু আগেই কুমিল্লা টুয়েন্টিফোর টিভি তথ্য প্রমাণসহ আয়েশার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। নিশ্চয় এই প্রতিবেদন প্রচারের পরে আয়েশা এত টাকা ডকুমেন্টস ছাড়া লেনদেন করবেন না। রাজীব আত্মহত্যার ব্যাপরটিও ঘটেছে ২০২০ সালে। তার পরথেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে আয়েশার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রচার হয়ে আসছে। এর মধ্যে তার সাথে লেনদেন এর কোনো প্রশ্নই উঠেনা। তাছাড়া সচেতন নাগরিক হিসেবে যত টাকাই লেনদেন হবে পরিস্কার ভাবেই হবে। নিশ্চয় ব্লাঙ্ক চেকে কোনো প্রকার ডকুমেন্টস ছাড়া এত টাকার লেনদেন কেউই করবেনা। যা প্রচলিত আইন অনুযায়ী লেনদেন করার কোনো প্রকার সুযোগ নেই।

রাজীব আত্মহত্যার ঘটনায় কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৭/২৫, তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২০ইং। এই মামলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সুরতহাল প্রতিবেদন এবং ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন ওই থানার এসআই তানজির হোসেন। তিনি সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করার সময় যে সব তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনসহ লাশ মর্গে পাঠান ঠিক তার উল্টো প্রতিবেদন দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল কনে।

এ ব্যপারে এসআই তানজির হোসেনের সাথে মোঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ডাক্তারের মতামতের ভিত্তিতেই ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। তবে ডাক্তারের রিপোর্টে মাদকের কারনে রাজীব মারা গেছে এমন কোনো তথ্যও ডাক্তার উল্লেখ করেননি এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কথা বলতে হবে বলে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আনোয়ারুল হক বলেন, কোনো রিপোর্ট ভুল হলে পুনরায় তদন্ত আসতে পারে। তাছাড়া মামলার ডকেট না দেখে কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

রাজীব আত্মহত্যার বিষয়টি আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অফ ইভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ পরিদর্শক মো: মোবারক হোসেন খান তদন্ত করেন। তিনি বলেন, বাদি তার অভিযোগে যেসব বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, তদন্তে সেসব বিষয়গুলোর তথ্য প্রমান তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কারো প্ররোচনায় রাজীব আত্মহত্যা করেছে এমন কোনো স্বাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এই তদন্তে বাদি সন্তুষ্ট না হলে অবশ্যই আদালতের কাছে অন্য কোনো সংস্থা দ্ধারা তদন্তের দাবি জানাতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আয়েশা আক্তার এবং রাজীবের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমার নির্বাচন। এই মুহুর্তে নীরব থাকাই ভালো মনে করছি। তবে আয়েশার ব্যাপারে পারস্পরিক অনেক কথাই শুনেছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, আয়েশা আক্তার গত ২০০৬ সালের ২৯ জুন শাহআলম নামের এক ব্যাক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যেখানে তিনি নিজেকে কুমারী বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও আয়েশা আক্তার ২০০৯ সালের ২ জানুয়ারী রাশেদ নামের আরেক ব্যাক্তিকে বিয়ে করেন। যেখানে তিনি নিজেকে কুমারী বলেই উল্লেখ করেছেন। এই দুইটি বিয়েই কাজী মাওলানা বেলাল হোছাইন রেজিষ্ট্রেশন করেছেন।

এব্যাপারে কাজী বেলাল হোছাইন বলেন, আয়েশা আক্তার দ্বিতীয় বিয়ে করার সময়ে তার প্রথম বিয়ের ব্যপারটি এড়িয়ে গেছেন। কাজী হিসেবে এত্ত বিয়ে পড়ানো হয় যে, তার আগের বিয়ের ব্যাপারটি মনে রাখা সম্ভব হয়নি। আয়েশা নিজেই তথ্য গোপন করে কুমারী বলে বিয়ে করেছেন।

আয়েশার প্রথম স্বামী শাহ আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মান-সম্মান হানীর ভয়ে আয়েশাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা।

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন