ধামাচাপা দিয়ে সময়ের আগেই ‘ শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় অতিদরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) বাস্তবায়নের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে ‘কোনরকম’ শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০ দিনের এ কর্মসূচিতে মোট ৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্পে মোট ২ হাজার ৪৪৫ জন সুবিধাভোগী ব্যক্তির কাজ করার কথা। যাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক

১০ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত এ কাজ চলার কথা ছিল। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন কাজ বন্ধ থাকার নিয়ম। প্রত্যেক শ্রমিকের প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পাওয়ার কথা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

গত রোববার (২৩ মে), সোমবার (২৪ মে), মঙ্গলবার (২৫ মে) ও সোমবার (৩১ মে) ৫৮টি প্রকল্পের মধ্যে ২০টি এলাকা ঘুরে প্রকল্পের বিবরণী সংবলিত সাইনবোর্ড তেমন চোখে পড়েনি। তবে ইদিলপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তরগোয়ালকুয়া এলাকায় একটির সাইনবোর্ড পেলেও লেখা ছিল কাজ আরম্ভের তারিখ (২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শেষ ৪ অক্টোবর)।

বেশির ভাগ প্রকল্পেই কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অল্প কিছুসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। নারী শ্রমিকতো ছিলই না।

ইদিলপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তরগোয়ালকুয়া কার্পেটিং রাস্তা হতে তরগোয়ালকুয়া নদীরপড়া ও চরসাতমাটিয়া কার্পেটিং রাস্তা থেকে মোতালেব হাওলাদারেরর বাড়ি পর্যন্ত মাটি ফেলে রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু ২৪ মে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি।

একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরজুশিরগাঁও এলাকায় খোরশেদ মাঝির বাড়ি থেকে মান্নান সরদারের বাড়ি পর্যন্ত মাটি ফেলে রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার (৩১ মে) কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি।

তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে ইদিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন শিকারী বলেন, ‘সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কাজ করার কথা না। তবুও আমরা কাজ করছি। আমি ২৪ মে সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্যাগ অফিসার নিয়ে পরিদর্শনে ছিলাম। যেই যেই জায়গায় কাজ করার কথা, কাজতো করছে। কাজ না করলে কাজ এমনেই হয়ে গেছে।’

সামান্তসার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম ব্যাপারী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের বলেছে মাটির জন্য যেন কাজ বন্ধ না থাকে। দুদিন পর বলবেন পানির জন্য মাটি পাই না, এটা যেন না হয়। তাই নিয়ম মেনে আগেই কাজ শেষ হয়ে গেছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী। তিনি ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে গোসাইরহাট উপজেলা পিআইও হিসেবে কর্মরত আছেন। গোসাইরহাট ছাড়াও তিনি ডামুড্যা উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কাজের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তাহমিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘বোরো ধান কাটার জন্যইতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। আমাদের প্রকল্পের কাজ তখনই শুরু হয়, তাই শ্রমিক পাওয়া কঠিন। তবুও চেয়ারম্যান মেম্বরদের বলেছি, সামনে যেহেতু বর্ষাকাল তাই যতদ্রুত সম্ভব শ্রমিক দিয়ে সঠিকভাবে কাজগুলো করে শেষ করতে হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, ‘কাজের ব্যাপারে আমি তথ্য নেব। প্রকল্প কাজে যদি শ্রমিক কম থাকে, শ্রমিক মোটেই না থাকে তাহলে এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে শ্রমিক যেদিন উপস্থিত না থাকবে, সেদিন তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে বিল কেটে রাখা হবে। আমাদের ট্যাগ অফিসাররা নিয়মিত কাজ তদারকি করে থাকেন। তদারকিতে যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে বিষয়টি দেখা হবে। কাজ যেন ভালোভাবে সম্পূর্ণ হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন