মানবতার পুলিশ এস আই মোঃ নাজমুল ইসলাম

আমান আহম্মেদ সজীব //
সাব ইন্সপেক্টর মোঃ নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পর প্রথম কর্মস্থল হিসেবে (২৭ মার্চ ২০২০)শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানায় যোগদান দান করেন। সখিপুর থানায় যোগদান করলে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তবে মানুষের জন্যে কিছু করতে পারলে কি যে আনন্দ অনুভূত হয় সেটা পুলিশের চাকরিতে না আসলে বুঝতে পারতাম না। এমন অনুভূতি প্রকাশ করেন এস আই নাজমুল ইসলাম।

এস আই নাজমুল ইসলাম, পিতা: হাফেজ মোঃ শামসুল আলম , গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার, তেলিহাটি ইউনিয়নের উওর পেলাইদ গ্রাম এর বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছে। সংসারে দুই ভাই এক বোন। বোন বড় , বিবাহিত। ছোট ভাই এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। আর বিবাহিত স্ত্রী উওরা মাইলস্টোন কলেজে এবার এইস এসসি পরিক্ষা দিবে। বাবা মসজিদের ইমাম। মা গৃহিণী।

একটি অভিযোগের তদন্তে গিয়েছিলো সখিপুর থানাধীন দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের প্রধানিয়া কান্দি , ৯ নং ওয়ার্ড । বাদী জনৈক কালা মিয়া দেওয়ানের বাড়িতে। ৬৮ বছর বয়সী কালা মিয়া দেওয়ান তার স্ত্রী,সহ ছেলে , মেয়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সখিপুর থানায় । সমাজের মুরুব্বী সহ আশেপাশের লোকজনদের ডাকলে। প্রায় ৩ ঘন্টা বসে কথা শুনেন এস আই নাজমুল ইসলাম । প্রায় আড়াই থেকে তিন বছর যাবত নিজে রান্না করে খেতে হয়। কালা মিয়া দেওয়ানকে। গ্রামে গ্রামে হেঁটে নারিকেল কিনে বাজারে বিক্রি করে কালা মিয়া দেওয়ান। স্ত্রী ও পরিবার পরিজন ছাড়া বুকে কষ্ট জমিয়ে এভাবেই কালা মিয়ার বৃদ্ধ বয়স কেটে যাচ্ছে। জানাযায় কালা মিয়া দেওয়ানের তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে তার । শত পরিশ্রমের ফলে এবং বাড়িতে পালা গরু বিক্রি করে প্রবাসে পাঠিয়েছে ছেলেকে । কিন্তু প্রবাসে যাওয়ার পর সে বৃদ্ধ বাবার খোঁজ খবর রাখেনি। আরেক ছেলে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসারে দিন কাটাচ্ছে ঢাকা সহড়ে। সে ও বাবার খোঁজ খবর রাখে না। স্ত্রীর সাথে মনমালিন্য হওয়ার পর থেকে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে পাশে আলাদা বাড়ি করে থাকে স্ত্রী ও মেয়ে। কালা মিয়ার বড় ছেলে কৃষি কাজ করে । তাকে ডাকা হলে , কাঁচি হাতে করে ক্ষেত থেকে আসে। এস আই নাজমুল ইসলাম জিজ্ঞেস করলো আপনারা থাকতে আপনার বাবা রান্না করে খেতে হয় কেন ? বড় ছেলে বললো স্যার আমি আমার বাবাকে খাওয়াইলে আমার মা,ও বোন আমাকে মারধর করতে আসে। আমার সাথে ঝগড়া করে। এই জন্য আমি তাদের ভয়ে আমার বাবাকে খাওয়াইতে পারি না।
বৃদ্ধ বাবা নিজ বাড়ির আম গাছের আম পারতে গেলেও মার খেতে হয় স্ত্রী ও মেয়ের হাতে।
বাবার বয়সী কালা মিয়ার পড়নের লুঙ্গিটি ছেঁড়া, গায়ে থাকা পাঞ্জাবি ও গেঞ্জিটি ও ছেড়া, মনে হচ্ছে কয়েক বসর যাবত গায়ে থাকা গামছাটি । গামে বেজা গামছাটিও অনেক পোড়ানো বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র। এমন একটি ঘটনা দেখে মানবতার পুলিশ এস আই নাজমুল ইসলাম
তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না।

সারাদেশের মতো শরীয়তপুরে ও লকডাউন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।পাশে থাকা বাজারের সলক দোকান পাঠ বন্ধ। তখন এস আই নাজমুল ইসলাম সখিপুর উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান বাজারের এক কাপর ব্যবসায়ী মেম্বার হালিম মোল্লাকে ফোন দেন। বল্লো ভাই আমার কিছু জরুরী জামা কাপড় লাগবে। হালিম ভাই তার ছেলেকে দোকানে পাঠাল । বাবার বয়সী কালা মিয়াকে নিয়ে গেলো দোকানে। ২টা লুঙ্গি , ২ টা পাঞ্জাবি, ১ টা গেঞ্জি, গামছা ও ১ জোড়া জুতা কিনে দিলো এস আই নাজমুল ইসলাম। প্রথমে নিতে চায় নাই। খালি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো বৃদ্ধ বাবার বয়সী কালা মিয়া দেওয়ান। তখন এস আই নাজমুল ইসলাম নিজে বাবার বয়সী কালা মিয়া দেওয়ান কে নতুন লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি পরিয়ে দেয়। তখন বৃদ্ধ কালা মিয়া দেওয়ান । এই মানবতার পুলিশ এস আই নাজমুল ইসলাম এর দিকে তাকিয়ে দু চোখের অশ্রু ছেড়ে দিলো কালা মিয়া দেওয়ান । তার সাথে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি আরো অনেকেই।

পুলিশের চাকরি করেও মানবতায় মানুষের পাশে।
এমন কথা বলে আল্লাহর দরবারে দু হাত তুলে দোয়া করলেন বৃদ্ধ বাবার বয়সী কালা মিয়া দেওয়ান।

এস আই নাজমু ইসলাম বলেন প্রথমে আমি স্যালুট
করি পুলিশি চাকুরি কে এই পুলিশের চাকরিতে না আসলে বুঝতাম না মানুষের জন্য কিছু করতে পাটারা কত যে আনন্দ অনুভূত হয় সেটা পুলিশের চাকরিতে না আসলে বুঝতে পারতাম না। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা যেন সর্বদা সুস্থ রাখেন। এবং মানুষের কল্যাণের জন্য যেন কাজ করতেপারি। আমিন।

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন