কাউন্সিলর ফরিদ জামিনে নিরাপত্তাহীনতায় মামলার বাদী ফের থানায় সাধারণ ডায়েরী

নিউজ২৪লাইন:

মঞ্জুরুল ইসলাম রনি, শরীয়তপুর:
শরীয়তপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ শেখের নামে মামলা দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দিনমজুর শাহাবুদ্দিনের পরিবার।

থানায় মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকির মুখে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী দিনমজুর শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফরিদ শেখ জামিনে এসে সন্ত্রাসী কায়দায় তার বিরুদ্ধ মামলা তুলে না নিলে শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার পরিবারের সদস্যদের আগুনে পুড়িয়ে জীবন নাশের হুমকিসহ এলাকা ছাড়ার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবার। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ফের থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন অসহায় শাহাবুদ্দিন।

তবে এ ব্যাপারে কাউন্সিলর ফরিদ শেখ বলেন, এসব কিছুই তিনি জানেন না। তিনি আরো জানান, হুমকি-ধামকি দিলে আইন আছে প্রশাসন আছে তারা এটা দেখবে সমস্যা নাই। আপনাদের কাজ আপনারা করেন প্রশাসনের কাজ প্রশাসন করবে।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে থেকে জানা যায়, শরীয়তপুরে সদর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ শেখ ও তার লোকজন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত (১৮ আগষ্ট) স্বর্ণঘোষ গ্রামের প্রতিবেশী দিনমজুর শাহাবুদ্দিন শেখের পরিবারের উপর নিঃসংশ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে প্রতিবন্ধী নারী তাহমিনা আক্তারসহ পরিবারের ৫ জনকে নিঃসংশভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ হামলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রতিবন্ধী তাহমিনার মাথায় কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করলে তাহমিনার মাথার হাড় পর্যন্ত কেটে যায়। এতে তাহমিনার মাথায় ৩২টি সিলি দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত তাহমিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অন্যরা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় (২০ আগষ্ট) শাহাবুদ্দিন শেখ বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় কাউন্সিলর ফরিদ শেখকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।এরপর ক্ষমতাশালী কাউন্সিলার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তাদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী পরিবার। ক্ষমতা আর টাকার জোরে গ্রেপ্তার না হয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে কাউন্সিলার ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ফের বিভিন্ন সময়ে ওই পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে জানান শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবার। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ফের থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শাহাবুদ্দিন শেখ।

শাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে উৎখাত করে সম্পত্তি দখলের জন্য ইয়াবা কারবারি কাউন্সিলর ফরিদ শেখ আমাদের উপর একাধিকবার হামলা করেছে। সর্বশেষ তারা হামলা করে আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে সহ পাঁচ জনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। তাহমিনা মাথায় ৩২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। ওর জীবন এখন বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে তাহমিনা আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি এ ঘটনায় মামলা করলেও পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে আসামীরা জামিন নিয়ে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তারা আমাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে এবং আমাদের এলাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমার ছেলেমেয়েরা বাড়ি ঘরে যেতে পারছেনা। ওরা আমাদের হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। এতে আমি ও আমার পরিবার চরম আতংকের মধ্যে রয়েছি। তাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আমি আবারও থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড স্বর্ণঘোষ গ্রামের বিল্লাল হোসেন শিকদার, দুলাল কোতোয়াল, ইয়ামিনসহ আরও অনেকেই বলেন, কাউন্সিলর ফরিদ বর্তমান অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়ে গিয়েছেন, কালো টাকার দাপটে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলে। অসহায় দিনমজুর শাহাবুদ্দিন শেখ এর পরিবারের উপর একবার না বহুবার হামলা চালিয়েছে এ ফরিদ ওর ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার আমরা এ দাবী জানাই।

তারা আরও বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি কি করে পারলো প্রতিবন্দি নারীর গায়ে হাত উঠাতে। বর্তমান সরকারের তো অনেক গোয়েন্দা সংস্থা আছে তারা তদন্ত করে দেখুক ফরিদ ও তার পরিবারের পিছনের ইতিহাস প্রশাসন আরও তদন্ত করে দেখুক সেইদিনের ফরিদ কি করে এতো তারাতারি কোটিপতি হয়ে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে এই সন্ত্রাসী ফরিদ কে আমরা আর কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চাইনা।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, বুধবার শাহাবুদ্দিন শেখ থানায় হুমকি সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

পাঠক আপনার মতামত দিন