২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকবে না

২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড। শনিবার সকালে ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আঙ্কাটাডের একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয়, নির্বাহী পরিচলক মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকে।

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুবিধা পেতো তার সব সুবিধাই পাবে।’

এত ‘বাধা’ তবু বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ

যুদ্ধের ময়দানে পাকিস্তান আর কূটনীতির যুদ্ধে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, তখন কেউ কি ভেবেছিল দেশটি ২০১৬ সালে এসে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যের (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) মানদণ্ডে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির অধিকারী হবে?

chittagong-port-abnews24

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী , ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির হারের বিচারে বাংলাদেশ চলতি বছরের দ্রুততম প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর তালিকায় ইরাক আছে সবার উপরে।

যে দেশগুলোর জিডিপির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার (৭.৮ লাখ কোটি টাকা), শুধুমাত্র সেগুলোকেই এ তালিকায় স্থান দিয়ে থাকে আইএমএফ।

maxresdefault

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭.১ শতাংশ। আইএমএফ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে যা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার রাষ্ট্রীয় কর্মতৎপরতার সাথে সংগতিপূর্ণ।

জন্মলগ্ন থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক-বেসামরিক নানা অস্থিতিশীল সময় পার করলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এসে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষকদের বিবেচনায়  বাংলাদেশ ‘পরবর্তী ১১ উদীয়মান অর্থনীতি’র অন্যতম গন্তব্য বলে পরিগণিত হচ্ছে।

sylhet_150mw_26-08-12

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান সাক্স একবিংশ শতাব্দীতে ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ, প্রযুক্তি, টেক্সটাইল, গার্মেন্টস,  চামড়া এবং রিয়েল  এস্টেট শিল্পে  বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে  সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে ১১টি দেশের মধ্যে রেখেছে।

২০১৩ সালে প্রকাশিত তাদের এক রিপোর্টে গোল্ডম্যান সাক্স বাংলাদেশ ছাড়াও মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম’কে এ তালিকাভুক্ত করে।

1369349668367

অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে বিনিয়োগ ব্যাংকটি তাদের প্রতিবেদনে বলে যে, বাংলাদেশ এবং অন্য ১০টি দেশে তুলনামূলক বড় ভোক্তা বাজার রয়েছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত “সিঙ্গেল-ডিজিট” মুদ্রাস্ফীতিও দেশগুলোকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান ভলিউম ১৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  চাল উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ।

গত আগস্ট ৫ তারিখে প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বাংলাদেশের চাল উৎপাদন হবে ৩৪.৫১ মিলিয়ন টন। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মৎস্য সম্পদসহ জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬.৩৩ শতাংশ।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে এখন চাল রপ্তানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বিপর্যস্ত নানা দেশে বাংলাদেশ এখন চালসহ নানা খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে মানবিক দেশ হিসেবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাম্প্রতিককালে প্রতিবেশি নেপালে ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ।

দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রথাগত চাকরির বাইরে স্বউদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দ্রতগতিতে। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গ্রামবাংলায় নিজের উদ্যোগ ও উদ্যমে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীর সংখ্যা ১৮ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে দেশের গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত ৪ মিলিয়ন কর্মীর সিংহভাগই নারী।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূলভিত্তি গার্মেন্টস শিল্প। দেশের জিডিপি’তে এই গার্মেন্টস শিল্পের অবদান এখন ১৩ শতাংশ।  ১৯৮০’র দশকে দেশে গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা ছিল মোটে ৫০ টি, যেখানে কাজ করত মাত্র কয়েক হাজার কর্মী। সর্বশেষ তথ্যমতে, এ খাতে কারখানার সংখ্যা এখন সাড়ে চার হাজারের মত।  শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এখন পর্যন্ত বাস্তবতার নিরিখে  যৌক্তিক না হলেও এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। উৎপাদন এবং রপ্তানি বাড়ছে। শুধু বিদেশ নয়, দেশেই গার্মেন্টস খাতের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শাখার তথ্য অনুযায়ী, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। এক নম্বরে আছে অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। যদিও বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, গার্মেন্টস খাতে ৫০৩ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজারের মাত্র ৫.১ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে আছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরেই আছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এছাড়াও কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য ক্রয় করে থাকে।

রানা প্লাজাসহ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানায় দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বড় বড় ক্রেতা কোম্পানিগুলো বাগড়া দিতে চাইলেও বাংলাদেশের সরকার, গার্মেন্টস শ্রমিক আর মালিকদের সম্মিলিত প্রয়াসে গার্মেন্টস শিল্প এগিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের ক্রমশ শক্তিশালী হওয়া অর্থনীতির অন্যতম নির্দেশক ক্রমবর্ধমান ব্যাংক রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৬ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি যা দক্ষিণ এশিয়াতে প্রতিবেশী ভারতের পরেই।  গত ১৬ বছরে ব্যাংক রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ গুণ বেড়েছে।

বিশাল আকারের এই ব্যাংক রিজার্ভ সৃষ্টিতে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং কাছের দেশ মালয়েশিয়াতে কাজ করা লাখ লাখ বাংলাদেশীর প্রেরিত মুদ্রার পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মানব উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অর্জন দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত এবং শ্রীলংকা থেকেও ভালো।

1425474122_1

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যে শক্তিশালী হয়েছে তার বড় উদাহরণ হতে পারে ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে আইনি লড়াই করে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালিয়ে সারা বিশ্বে সমালোচিত হওয়া বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সাথে আইনি লড়াইয়ে বঙ্গোপসাগরে বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের মালিকানা প্রাপ্ত হয়। এছাড়াও প্রতিবেশী ভারতের সাথেও একইভাবে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো স্বদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের শীর্ষ পর্যায়ের  ভূমিকা রাখছে। সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনীতে নিয়মিতভাবে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সর্বশেষ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন।

7b4debd3eeddeffca0e5e16bf9d82587-5-1201061g60410

স্বাধীনতা অর্জনের পরে দেশের প্রথম বাজেট ছিল মাত্র ৫,০০০ কোটি টাকার। আর দেশের সর্বশেষ বাজেট দেয়া হয়েছে  ৩.৪১ ট্রিলিয়ন টাকার ! এত টাকার বাজেট, এত উন্নয়ন সাফল্য! এরপরেও দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশের জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনা কেন? মানুষ এখনো কেন ফুটপাতে ঘুমায়? ঢাকায় কেন হতদরিদ্র রিকশাওয়ালার সংখ্যা কমেনা?

বাজেটের অর্থের কি যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে? নাকি দুর্নীতিবাজরা আমাদের লাভের গুঁড় খেয়ে ফেলছে? অশিক্ষা না দুর্নীতি, কোনটা বড় সমস্যা বাংলাদেশের জন্য? দুর্নীতি করে কারা? দেশের কৃষক-শ্রমিক কোন দুর্নীতি করে বলে জানা নেই! তাহলে দুর্নীতি কারা করে? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরে দেয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, “খালি দেখবেন যত গোলমাল করে এই সাদা কাপড়ওয়ালা ভদ্রলোকেরা। এরাই পয়সা খায়। এরাই লুটতরাজ করে। এরাই বড় বড় কথা বলে। এরা ছাড়া আমার দেশের গরীব দুঃখী বড় ভালো”।

জাতির জনক দেশের দুর্নীতিবাজদেরকে চিহ্নিত করে গেছেন। তিনি যা বলে গিয়েছিলেন তা কি এখনো প্রাসঙ্গিক নয়? দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের এত উন্নয়ন হয়, তাহলে দুর্নীতি না থাকলে দেশ কোথায় চলে যাবে! সবাই একটু ভাবুন।

লেখকঃ  সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

পদ্মা সেতুর মূল কাজের এক বছরের অগ্রগতি না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না

পদ্মা সেতু : পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের গত এক বছর সোমবার। বিগত বছরের (১২ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে আলোচিত এই প্রকল্পের মূল সেতুর কাজ ও নদী শাসনের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপরই পাল্টে যেতে থাকে প্রকল্প এলাকার চিত্র।

15555136_1909418919294214_1902352963_o

এইদিন প্রথম পাইল স্থাপন শুরু করে জার্মানী হ্যামার। এখন সেই পদ্মায় ৩৭টি পাইল বসেছে। আর সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট) পাইল বসেছে ২৯টি। ইতোমধ্যেই সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের চারটি স্প্যান চীন থেকে দেশে পৌঁছেছে। একটি স্প্যান ফিটিংয়ের পর এখন চলছে লোড টেস্টের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই বিশাল স্প্যান স্থাপনের এসেছে ৩ হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভ্রাম্যমাণ ক্রেন।৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ৬টি করেই পাইল বসেছে। এখন পিলার দু’টি পরিপূর্ণ করার কাজ চলছে।

তাই ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরের এই এক বছরের কাজের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট। তিনি জানান, পদ্মা নদী বৈচিত্রপূর্ণ, নানা রকম চ্যালেঞ্জ ছিল। সব কিছু মোকাবেলা করেই আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্পে নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকবে আর তা সমাধান করেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ সম্ভব করা হবে।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। বাঙালির বড় চ্যালেঞ্জ স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে- এটি আমাদের অহংকার। এখন যে অগ্রগতি হচ্ছে এটি ধারাবাহিক কাজের অংশ। তবে প্রথম কাজটিই করেছে জেলা প্রশাসন। জমি অধিগ্রহণ করে সেতু বাস্তবায়নের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। এখনও ট্রেন লাইনের জমি অধিগ্রহণসহ পদ্মা সেতুর কাজগুলো আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজও একই দিন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই কাজেও বেশ অগ্রগতি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ড্রেজিং, বস্তা ফেলা, ব্লক তৈরি সবই চলছে। প্রতিরক্ষামূলক কাজ ছাড়াও নদী শাসনসহ অন্যান্য কাজের অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭ লাখ টন পাথর ক্রয় করা হয়েছে। প্রায় ৩৩ লাখ ব্লক তৈরি হয়েছে। এখন নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ২৭ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ ছড়িয়ে গেছে।

পদ্মা সেতুর ট্রানজিশন পিলারের কাজও চলছে পুরোদমে। মূল সেতুর শেষ প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারে চলছে পাইল স্থাপনের কাজ। জাজিরা প্রান্তের পদ্মা তীরের এই পাইলটিই মূল সেতু এবং সংযোগ সেতুর বন্ধন তৈরি করবে। এদিকে সেতুর সুপার স্ট্রাকচারেরও অগ্রগতি রয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কসপে ফিটিং হওয়া প্রথম স্প্যানটির (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) লোড টেস্ট চলছে। ছয় ধাপের লোড টেস্টের এখন চার ধাপ চলছে। এই লোড টেস্ট পরিদর্শন করে গেছেন সেতুটির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বাংলাদেশী পাঁচ বিশেষজ্ঞ।

সাধারণত এই ব্রিজে মালামাল ও যানবাহনসহ ধারণ ক্ষমতা ৮শ’ ৯৬ টন। এই পরিমাণ ওজনের কোন কিছু সেতুর উপর দিয়ে গেলেও ব্রিজের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেব অনুযায়ী এর দেড়গুণ অর্থাৎ ১ হাজার ৩শ’ ৪৪ টন লোড দিয়ে এর পরীক্ষা করা হবে। ছয় ধাপের এই লোড পরীক্ষায় আস্তে আস্তে লোড বাড়ানো হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তে লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে ব্রিজের বিশেষ প্লাটফর্ম, করা হয়েছে পাইল ক্যাপ। এর উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে সুপার স্ট্রাকচারের স্প্যানটি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বাঙালির বীরত্বের আরেক ইতিহাস রচনা করছে পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতুর কাজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক বছরের অগ্রগতি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না- এই অঞ্চলের আর্থ-সমাজিক সবক্ষেত্রে কি যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে।

                                                                                             জেলা প্রতিনিধি এস এম সোহেল হাওলাদার

বাংলাদেশের গ্যাস খাতের উন্নয়নে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার দিবে এডিবি

বাংলাদেশের গ্যাস খাতের উন্নয়নে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এছাড়া এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক-এআইআইবি ৬ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে।

এডিবি এবং এআইআইবির যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় প্রকল্প।

sf1

বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে এবং দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে সোমবার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির সদর দপ্তরে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ সহায়তার অনুমোদন দেয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এআইআইবির ৬ কোটি ডলারও শিগগিরই অনুমোদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।

এই অর্থে প্রধানত বাংলাদেশের বৃহত্তর গ্যাসক্ষেত্র তিতাস গ্যাস ফিল্ডে গ্যাসের চাপ বাড়াতে সাতটি বিশেষ কম্প্রেসার বসানো হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে বাখরাবাদ পর্যন্ত নতুন ১৮১ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হবে।

তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে এই প্রকল্পে মোট ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয়ের বাকিটা সরকারের কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে।

1 3 4 5