ফরিদপুরে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস -২০২৩ উদযাপন  উপলক্ষে র‍্যালি

টিটুল মোল্লা, ফরিদপুর।। 

ফরিদপুরে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে,”সেবা উন্নতির দক্ষ রুপকার,উন্নয়নে – উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার” শীর্ষক” ব্যানারে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩ইং উদযাপন উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য রেলি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ইয়াছিন কবিরের সভাপতিত্বে এই স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩ইং উদযাপনে বর্ণাঢ্য রেলি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,ফরিদপুর জেলা প্রশাসক “কামরুল আহসান তালুকদার” বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,জেলা পরিষদের প্রধান প্রশাসক রওশন ইসলাম,জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন কালাম,ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ,পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, এলডিইডি’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান খান,জেলা জনস্বাস্থ্য ও নির্বাহী প্রকৌশলী শুভম রায়, ফরিদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা,ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব,আধা সরকারি ও এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা’সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংযমের শিক্ষা রোজা’য় “ইফতারি প্রথা” অমানবিক

রমজান রহমতের এবং  বরকতময় মাসের নাম। ত্যাগ ও সংযম এর  মহান বার্তা নিয়ে হাজির হয় পবিত্র  রমজান মাস।এই মাসে সেহেরি এবং ইফতারের মাধ্যমে একটি আলাদা স্বাদ উপভোগ করে রোজাদার মুসলমানগণ।রাসুল (সাঃ) এর ঘোষণা মতে  “এই মাসেই  হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুলকদর”।বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমজান উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে রেখে সরবরাহ বৃদ্ধি করে,কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি আর ভেজাল খাদ্যের দাপটে রোজাদাররা ক্রয়ক্ষমতা হারায়। আবার  সামাজিকতার নামে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর কুপ্রথায় হাঁপিয়ে উঠে মেয়ের বাবা। ফলে রোজার ফজিলতের  সংযম,  ত্যাগের মহিমা এবং ভাবগাম্ভীর্যতা নষ্ট হয়ে পড়ে।

সংগৃহীত একটি গল্পের আদলে পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য  তুলে ধরার চেষ্টা করছি,”জাপানিজদের কাছে রোজা একটি বিস্ময়ের নাম। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু কেন”? এই না খাওয়া নিয়ে তাদের আরো মজার মজার প্রশ্নও আছে। তারা যেসব প্রশ্নগুলো করে, পানিও খাওয়া যাবে না?সিগারেটও না?লুকিয়ে যদি খাও?যদি শাওয়ারে ঢুকে পানি খাও?রোজাদার বাঙালী অনেক হেসে বলে,  লুকিয়ে কেন খাবো?আমিতো ইচ্ছে করলে বিরিয়ানী রেঁধে ঘরে বসেই খেতে পারি। কিন্তু ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত  আমরা কিছুই খাইনা।এটা মহান আল্লাহতালার নির্দেশ। এতে আমরা অভ্যস্ত।তখন শুরু হয় বিস্ময়ের আরেক ধাপ।আবারও একগাদা প্রশ্ন করে জাপানিজ  :”কেন খাও না?অদৃশ্য খোদা বলেছেন বলে?তিনি দেখতে পাবেন বলে?তোমাদের এত সংযম!এতটাই আত্মনিয়ন্ত্রণ!!!এরপর জাপানিজ  যে দুটো প্রশ্ন করে তাতে বাক্যহারা হয়ে পড়েন রোজাদার বাঙালী।জাপানিজের প্রশ্ন ছিল, “তবে তো তোমাদের দেশে কেউ মিথ্যা কথা বলে না,ঘুষ খায়না,কেউ পাপ করে না,পুলিশ ও লাগে না”।তখন রোজাদার বাঙালীর মুখ থেকে কোন কথা বের হয় না কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। কারণ আমরা জানি ৯০% মুসলমানের দেশ আমাদের।মুষ্টিমেয় হয়তো কিছু মানুষ ছাড়া সবাই রোজা রাখে।কিন্তু আমরা কি বলতে পারবো,রমজানের মধ্যেও মিথ্যা কথা বলা বন্ধ হয়েছে? প্রতারণা, জোচ্চুরি,মোনাফেকি বন্ধ? রমজানে যে খাদ্য দিয়ে ইফতার  হয়,সেহেরি খাওয়া হয় তার মধ্যে ভেজাল মিশানো হচ্ছে কিনা,পণ্য গুদামজাত করে বেশি টাকা মুনাফা করা বন্ধ  হচ্ছে কিনা, মানুষের হক মেরে খাওয়া বন্ধ হচ্ছে কিনা।অফিস পাড়ায় ঘুষ লেনাদেনা বন্ধ হয়েছে কিনা।ত্যাগ ও সংযমের শিক্ষা নিয়ে রমজান আমাদের দীক্ষিত করতে আসে প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে। এই বছর রমজানের সময়টাতে তাপমাত্রা ৪১ডিগ্রী সেলসিয়াসের ঘরে। সারাবিশ্বের মানুষ হেরে যাচ্ছে তাপমাত্রার কাছে।গরমে পিপাসায় কাতর রোজাদার তবুও রোজা রেখে   তাপমাত্রাকে হারিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন রোজা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবির নামাজও আদায় করা হয়।কিন্ত এই কঠিন সাধনার ফলপ্রসূ উপলব্ধি আমাদের কতটা তাড়িত করছে। শিরক, কুফরি, সুদ, ঘুষ, মিথ্যাচার, লোভ, হিংসা অহংকার থেকে কতটা মুক্ত হতে পেরেছে    মানুষ।প্রশ্ন থেকে যায় অনেক,অনেক প্রশ্ন।

পবিত্র রোজার  মাসে আমাদের সমাজে  কিছু কুপ্রথা রমজানের মাহাত্ম্যকে নিন্দিত করতে দেখা যায়। তারমধ্যে একটি হলো মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার প্রথা।দরিদ্র পরিবারের জন্য এই প্রথাটি একপ্রকার অমানবিক এবং জঘন্যতম আর ধনীদের জন্য বিলাসিতা ।এই প্রথার প্রচলন মহামারী আকারে ছড়িয়ে শিকড় গেঁড়ে বসে আছে দেশের সকল জায়গায়। সাধারণত: বাঙালী সমাজে মেয়েদের তার পরিবার সব সময় দেখভাল করে। সুখী দেখতে চায়।তাই বিভিন্ন সময়ে বিশেষ কিছু দিনে মেয়ের জন্য হাদিয়া হিসেবে কিছু খাদ্য কিংবা জিনিস পাঠানো হয়।বাঙালী মুসলমানদের প্রাচীন একটি রীতি হচ্ছে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠানো ।সামাজিক বন্ধনের  এটি ছিল একসময় আনন্দের।বাবার  সাধ্যমতে দেওয়া হতো কোন বাধ্যগত ছিল না। এবিষয়ে নবী করিম (সাঃ)বলেছেন, “তোমরা একে ওপরকে হাদিয়া দাও,যেন তোমাদের মাঝে ঋদ্ধতা বৃদ্ধি পায়”।
কিন্তু মেয়ের শশুরবাড়ির লোকজন যখন বাধ্যগত ভাবে তাদের চাহিদা মতো দাবি করে  এবং কনের উপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে,মানষিক নিপীড়ন চালান,  তখন  ইফতারি আর  সামাজিক বন্ধনের পর্যায়ে  থাকে না,হয়ে যায় সামাজিকতার নামে মেয়ের বাবার উপর  অবিচার।যা অহরহ হচ্ছে। কখনো দেখা যায় সন্তোষজনক ইফতার না পাঠানো হলে মেয়ের উপর ঘটে মানষিক ও অমানবিক নির্যাতন।কটুকথা অশ্রাব্য গালাগাল। এমনকি শারীরিক ভাবে ও নির্যাতন করা হয়।আদরের মেয়ের সুখের আশায় অনেক বাবা ঋণ করে,গরু বিক্রি করে মেয়ের শশুর বাড়ির চাহিদা মেটায়, আর রাতে ঋণে জর্জরিত বাবা একেলা বালিশে মাথা রেখে কাঁদে।নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “কেউ যদি কাউকে একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করায় তাহলে সে রোজাদারের সওয়াব পাবে”। আর বর্তমান সময়ে   জোর করে কনের বাপের বাড়ি থেকে ইফতার আদায় করায়  সওয়াব তো হবেই না বরং গোনাহের কাজ হবে। পবিত্র কোরানের সুরা বাকারা  (১৮৩) আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, “হে ঈমানদারগণ ফরজ করা হয়েছে তোমাদের উপর রোজা যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যাতে তোমরা সংযমী হতে পারো।মোত্তাকী ও পরহেজগার হতে পারো”।
সর্বোপরি  মানুষের অন্তরে তাক্বওয়া’র গুণ সৃষ্টির লক্ষ্যে রোজাকে অবশ্যই পালনীয় ফরজ করা হয়েছে। তাক্বওয়া অর্থ হলো আল্লাহতালার প্রতি ভালবাসা ও ভয়ের অনুভূতি।এই “ত্বাকওয়া” ই হচ্ছে রোজার আসল কথা।ইসলামীক বিশারদদের মতে, “পৃথিবীতে পাপ-পঙ্কিলতার কাঁটা ছড়ানো রয়েছে, তা থেকে সতর্কভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার নাম হলো তাক্বওয়া”।আর এর অভাবের কারণেই  রমজান মাসে  ইফতারি নিয়ে মেয়ের শশুর বাড়ির অযাচিত চাহিদা, ব্যবসায়ীদের খাদ্যে ভেজাল মিশানো, ঘুষ দূর্নীতি চলছে, যা কাম্য নয়।

যৌতুক প্রথা সমাজের  একটি অভিশাপের নাম। মুখে যতই যৌতুক বিরোধী কথা বলা হয় না কেন   , মেয়ের শশুর বাড়ির সন্তুষ্টি এবং মেয়ের  সুখের জন্য প্রায় বাবা মেয়ের বিয়েতে বিভিন্ন আইটেমের জিনিস দিয়ে থাকে সাধ্যমতে।আজকাল বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের  অনেক মেয়ে বিয়ে হচ্ছে না যৌতুকের  টাকার জন্য। রাস্তা-ঘাটে খেয়াল করলে দেখা যায়  যে, অনেক গরীব মা-বাবা মেয়ের বিয়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে  হাত পাতে,ভিক্ষা করে।যৌতুক প্রথার কারণে  বিবাহ উপযুক্ত বহু  মেয়ে পরিবারের বুঝা হয়ে আছে অনেকের । কিন্তু ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইসলামই নারীদের সর্বোচ্চ সন্মান দিয়েছে। নিরাপত্তা  দিয়ে হেফাজত করেছে। কিন্তু আজকাল সমাজে চলমান কিছু  বিষয়  ইসলামের মুল রীতিনীতির বিপরীত। সভ্যতার নামে অসভ্যতা।বিভিন্ন আইটেমের ইফতার সহ ঈদে মেয়ের  শশুর বাড়িতে সবাইকে কাপড়,কোরবানের গরু কিংবা ছাগল সহ বিভিন্ন সময়ে পাঠানো জিনিস যৌতুকেরই শামিল। খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় যৌতুক দিতে  অপারগতায় শশুর বাড়ির নির্যাতনে   অনেক মেয়ের  মৃত্যু এবং বিবাহ ভেঙ্গে  যায়। এই কুসংস্কার কত যে ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগী পরিবারই জানতে পারে। তাই এসব কুপ্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো কত মেয়ে তার শশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইফতার সুন্নত। কাউকে ইফতার করানো নিঃসন্দেহে  সওয়াবের কাজ। কিন্তু ইফতারি  কুপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন সমাজ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ মহল।আলেম সমাজ বিষয়টি নিয়ে  মাহফিলে বয়ান করতে থাকলে,  সাধারণ মানুষ বেশী করে মেনে চলবে, আশাবাদী সাধারণ মানুষের।

রোজার দিনে এক মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে রিক্সায় বাড়ি ফিরছিলেন। প্রতিজন মা’রই তার সন্তানের প্রতি গভীর ভালবাসা থাকে। সন্তানের চেহারা দেখে বলতে পারে সুখ, দুঃখ,  ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং সুশিক্ষা নিশ্চিত করার দিকেও তার গভীর মনোযোগ থাকে। চলার পথে ছোট  সন্তানটি যখন মার কাছে জানতে চায়, “আচ্ছা মা না খেয়ে থাকলেই কি রোজা হয়?”মা তখন যথার্থ বলেছেন, “না বাবা রোজার সময় সংযম করতে হয়।অন্যের কষ্ট বুঝতে হয় আর মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হয়”। কিন্তু শেষ কথাটি তিনি মনে রাখতে পারে না।তাই একটু পরেই প্রবীণ রিক্সাচালককে বেশ কর্কশ কন্ঠে তিনি বলে উঠেন,”আরে এত আস্তে রিক্সা চালালে তো ইফতার রাস্তায় করতে হবে। জোরে চালান”।রিক্সা চালক তখন অসহায় ভাবে জানান,”সারাদিন রোজা রেখে  আর জোরে রিক্সা চালানোর মত শক্তি নেই তার।কথা শুনে থ’হয়ে যান ঐ মা।রিক্সাওয়ালার প্রতি সন্তানের সামনে  তার খারাপ ব্যবহার এবং তার প্রভাব তার সন্তানের উপর পড়বে বুঝতে পারে মা।তখনই প্রবীণ রিক্সচালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি পরিবারের জন্য আনা সমস্ত ইফতারের খাবার মুরুব্বি রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে দেন।রোজার মাসের সংযমের শিক্ষা সবার মাঝে ঋদ্ধতা নিয়ে আসুক।মাহাত্ম্য এখানেই।

সবধরনের খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে, শুদ্ধ হওয়ার পথে অগ্রসর হওয়াই রমজানের শিক্ষা ।ব্যবসার নামে যদি অনৈতিকতা এবং কুপ্রথায় অমানবিকতা প্রদর্শন করা হয় তাহলে,যে রমজান  উচ্চ নৈতিক চরিত্র, উন্নত মানবতাবোধ,ত্যাগ,শিক্ষা দেয়,এই পবিত্র মাসের আমল-ইবাদতের সঙ্গে চরম অবমাননাই করা হয়।
————–


লেখক-বদরুল ইসলাম বাদল
সদস্য, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি.

Read more

প্রতিভাধর সৃজনশীল মানুষের সান্নিধ্যে আসুক শিক্ষার্থীরা

করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে নতুন প্রাণের স্পন্দন।কবির ভাষায়,” জাগিল কি ছন্দ, আজি এ বসন্ত আকাশে।” নিথর পৃথিবী কোমা থেকে জেগে ফিরে আসছে নতুন ছন্দ, তাল,তান, গান, সুর নিয়ে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাঙালী সংস্কৃতির চর্চা নিয়ে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন শেষ হল ।মহামারীতে টানা দুই তিন বছর এই আয়োজন বন্ধ ছিল।সাধারণত জানুয়ারী ফেব্রুয়ারিতে এসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চায় গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “শারীরিক -মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার বিকল্প নেই”।বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থ বলেছিলেন,” আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়।যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না। ”

শিক্ষাবিদের মতে”শিক্ষা একটি জাতির অবয়ব নির্মাণ করে, সাহিত্যে সে অবয়বের প্রতিফলন ঘটে। আর সংস্কৃতি তাকে পূর্ণতা দান করে। এভাবেই একটি জাতির পরিচয় বিধৃত হয় তার শিক্ষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে”।অন্য ভাবে ,”একটি দেশ এবং জাতির অগ্রগতির মুল চালিকা শক্তি হল শিক্ষা”।আবার তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামোতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরকার যুগোপযোগী শিক্ষা।তাই পড়ুয়াদের জাগরিত করতে হবে সৃজনশীল প্রতিভার। প্রাথমিক স্তরে এই কাজটির হাতেখড়ি হয় বিদ্যালয়ে।এটাই পড়ুয়াদের অবচেতন মনন বিকাশের আতুরঘর।যার ধারাবাহিক সৃজনশীল জ্ঞানের প্রবাহ নিজের এবং জাতির অগ্রগতি অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন প্রতিক্ষেত্রে বিকশিত মেধা চর্চার পরিবেশ তৈরীর ভূমিকা বিদ্যালয়কেই দেখতে হয়।বলা হয়ে থাকে যে “বিদ্যালয় সমাজ,রাষ্ট্র এবং জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য শুধু লালনই করে না, সংরক্ষণ ও পরিচর্যায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে”।প্রমাণিত সত্য যে,প্রতিটি জাতির উন্নতির ভিত্তি নির্ভর করে সে জাতির শিক্ষার উপর”। বহুল প্রচলিত প্রবাদ “যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত”। তবে কথাটি সুপ্রচলিত সত্যি হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে “সুশিক্ষা” র উপরই শিক্ষাবিদগন জোর অভিমত ব্যক্ত করছেন। সার্টিফিকেট কিংবা জিপিএ মেধা নির্ধারণের মাপকাঠি নয়।এখন সর্ব ক্ষেত্রে ভাল রেজাল্ট নিয়ে হইচই। আর ভাল রেজাল্ট মানে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোচিং সেন্টারের নোট মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় হুবহু লিখে নাম্বার নিয়ে পাশ করাকেই মনে করে অতিউৎসাহী অভিভাবকমহল। বিশ্লেষকগণ এই রকম ভাল রেজাল্টকে কোচিং সেন্টারেরই পাশ মনে করেন।কারণ নোট তৈরির কাজটি করে থাকে কোচিং সেন্টার । শিক্ষাথীরা মুখস্ত করে উত্তর পত্রে হুবহু লিখে আসে ।এই পর্যায়ে নব্বই দশকের আমার একজন সন্মানিত শিক্ষকের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।তিনি এডভোকেট শাহআলম।চকরিয়া উপজেলা আদালতের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি আইনজীবি পেশায় আসার আগে চকরিয়া উপজেলাধীন ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি নবম দশম শ্রেণির বাংলা ক্লাস নিতেন। নোট তৈরী নিয়ে তিনি বলতেন যে,” আমি নোট তৈরীতে বিশ্বাসী নই।প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের নিজের মত করে নোট তৈরীর পারদর্শী করে গড়ে তুলতে চাই।আমি চাই আমার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নোট তৈরী করার জন্য নিজেদের মধ্যে সক্ষমতা আসুক”। তিনি আরও বলতেন, “নোট লিখে পরীক্ষা দেয়া হলে স্কুলের প্রতিটি ছাত্রের উত্তরপত্র একই রকম হবে।তখন পাবলিক পরীক্ষার পরীক্ষকগণ খাতা মুল্যায়ন করার সময় বিষয়টি অনায়াসে বুঝতে পারবে”।তাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এডভোকেট শাহআলম নোটথেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন। জানি না আজকাল পরীক্ষকদের খাতা মুল্যায়নের মাপকাঠি। কারণ দেখা যায়, সারা বছর কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভীড়। ভাল রেজাল্টও করছে অহরহ।জিপিএ ফাইভের ছড়াছড়ি।আবার জিপিএ ফাইভ না পেলে অভিভাবকগণ মনে করে যে তাদের সন্তান প্রতিভাবান নয়।সন্তানদের শুনতে হয় বকাঝকা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে তা আধো টিক নয়।দেশে কিংবা বিদেশে অনেক ছাত্র ফাস্ট /সেকেন্ড না হয়েও অনেক সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বলা হয়ে থাকে যে,”মেধা একজন মানুষের বিশেষ কিছু গুণ ও দক্ষতা, অপর দিকে প্রতিভা হল একজন মানুষের সৃষ্টিশীল মানষিকতাএবং অনেক দুরূহ কাজে হাত দেওয়া এবং আবিষ্কার করা”। তাই মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে শিক্ষকদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,” সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যাবে”।এক অনুষ্ঠানে তিনি খাদ্যে স্বনির্ভরতার জন্য কৃষিক্ষেত্রের গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার উন্নতি না হওয়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।শিক্ষাকে বাস্তব জীবনমুখী ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। মুখস্ত বিদ্যায় অর্জিত সার্টিফিকেট নিয়ে দেশের কোন কাজে আসবে না। উল্লেখ্য যে,ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেধাবী শিক্ষকমণ্ডলী দিয়ে পাঠদান করে আসছে।এই স্কুলের সুনামের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক,কৃতজ্ঞতার সহিত কামনা করি ।

বর্তমানে যেকোনো জায়গায় দিন দিন আনুষ্ঠানিকতা বাড়ছে।লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে চেতনা।জাতীয় দিবস কিংবা যে কোন সভায় তথ্যনির্ভর আলোচনা হয় না। দায়সারা ভাবে মাইকের সামনে দাঁড়াতে পারলেই হল, সফল অনুষ্ঠান। বক্তার সংখ্যা এত বেশি হয় যে, সল্প সময়ে কোন আলোচকই মর্মার্থ বিশ্লেষণের সময় পায় না।বক্তাকে শুরুতেই কথা সংক্ষিপ্ত করার পরামর্শের ফলে,বক্তব্যে মুল বিষয় তুলে ধরার আগেই সময় শেষ হয়ে যায় ।বক্তার সংখ্যাধিক্যের কারণে প্রধান অতিথি বা আলোচক বক্তব্য রাখার সময় পায় কম। এই নিয়ে অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের মিটিংএ প্রধান অতিথি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায়। সমালোচকমহল ইদানীং এই বিষয়টিকে ফটোসেশান বক্তৃতার সভা বলা শুরু করেছে।শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় অতিথিদের ভারে মঞ্চ ভেঙে পড়ার উদাহরণও অনেক।তাই সচেতন মহলের অভিমত,এসবের গুনগত পরিবর্তন না আসলে প্রজন্মের কাছে ইতিহাস চর্চা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।স্কুল কলেজে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন হয়। এসব অনুষ্ঠানে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।কারণ, বিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের আলোকিত জীবন গড়ার বাতিঘর।শিশুদের মধ্যে সততা নৈতিকতাসহ ইত্যাদির বিকাশ নিয়ে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে বিদ্যালয়। কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন,” বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কিংবা প্রধান আলোচক হিসেবে একজন আলোকিত শিক্ষাবিদ কিংবা সৃষ্টিশীল কাজে সফল ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ করা দরকার।যিনি নিজের সফলতার গল্প শুনাবে, শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করবে”। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্টদের মতে দেশবরেণ্য আলোকিত ব্যক্তিত্বদের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ শিক্ষার্থীর জন্য একটা অনুপ্রাণিত স্মরণীয় স্মৃতি আজীবন।উচ্চতর শিক্ষাঙ্গন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় যে, সমাবর্তন অনুষ্ঠান বা যেকোনো অনুষ্ঠানে সবসময় একজন বিশ্বজোড়া খ্যাতিমান ব্যক্তি আমন্ত্রিত হয়ে আসেন।তিনি দেশের কিংবা বাইরের ও হতে পারেন ।যার মোটিভেশনাল বক্তৃতা উজ্জীবিত করবে শিক্ষার্থীদের মনন জগৎ।তাই একজন জ্ঞানতাপস প্রধান অতিথি বা আলোচক হিসেবে আমন্ত্রিত করা হলে অনুষ্ঠান আরও অর্থবহ হবে মনে করে শিক্ষার সাথে যুক্তমহল। .

অভিনন্দন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের নব নির্বাচিত সচিব,অধ্যাপক রেজাউল করিম। চট্টগ্রাম বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি এবং চকরিয়ারই কৃতি সন্তান। চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ অধ্যাপক রেজাউল করিমের সন্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন ।একজন প্রতিভাবান মানুষকে কাছে পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা আনন্দে মেতে উঠে। স্কুলের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীদের অভিমত,কক্সবাজারের অনেক প্রতিভাবান মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দক্ষতার সাথে নিজেদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে যাচ্ছেন।তাদের পরিচয় তুলে ধরা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলে
আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের সান্নিধ্যে উত্সাহিত হবে, অনুপ্রাণিত হবে।

 

  • বদরুল ইসলাম বাদল
    সমাজকর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতা।

কবি জহির ইসলামের “জোছনা রাতে ফুলের সাথে” কাব্যের জোছনাফুলের পাপড়ি – নাসের ভুট্টো

কবি জহির ইসলাম দরিয়া পাড়ের শব্দসাম্রাজ্যের ডুবে থাকা এক নিভৃতচারী কবি। তিনি একজন স্পন্দিত ছড়াকার, গীতিকার ও কবি। শব্দের আভরণে- অলংকারে নিজের মতো করে নির্মাণ করে চলেছেন কবিতার উর্বশী শরীর। প্রতিক্ষণে কাব্যঘোরে আচ্ছন্ন এ- কবি সৃষ্টির শৈল্পিক অঙ্গীকারে আবদ্ধ থেকে দর্শন এবং সৌন্দর্যের নান্দনিক সংমিশ্রণে চিন্তার নব নির্মাণে প্রাগ্রসর। তিনি প্রয়োজনে কবিতাকে ভেঙ্গেছেন, গড়েছেন। ভাঙ্গা-গড়ার এই নিরন্তর খেলায় ফুটে উঠেছে অনিন্দ্য সুন্দর। সেই সুন্দর আর সুন্দরের বন্দরে কবি সর্বদাই প্রেমের সওদাগর। ঘাটে ঘাটে তিনি ফেরি করেন প্রেম। নারীপ্রেমে মত্ত কবির চুড়ান্ত শব্দ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসায় তিনি কবিতা সৃষ্টি করেন, জীবন বিকাশের মতো ধীরে ধীরে। তার ভাষা ভিন্ন, গভীর অনুভুতির ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত ও পংঙিতে পংঙিতে আলোড়িত। সদ্য প্রকাশিত কাব্য গ্রন্হ ” জোছনা রাতে ফুলের সাথে” কবির অপূর্ব সৃষ্টির এক জোছনা উৎসব। ছন্দে- গন্ধে অতুলনীয়। মৃত্তিকা সংলগ্ন বাস্তবতার বিচরণে প্রয়াসী এই কবি। সেই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার কাব্য গ্রন্হ ” জোছনা রাতে ফুলের সাথে”। এই সময়ের কবি জহির ইসলাম তাই অকপটে ব্যক্ত করেন “ভালোবসি ভালো আছি” কবিতায় হৃদয়ের অপ্রকাশিত পংক্তি-
দখিনের জানালায় এখনো দাঁড়াও,
রাতজাগা পাখি আজ ডেকেছে আবার,
অসময়ে পেঁচা ডাকে দুহাত বাড়াও,
ভালোবাসায় মজেছে, সেও কী তোমার?”
জহির ইসলামের কবিতা একরৈখিক নয়, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, প্রতীক, সমাসোক্তি প্রভৃতি অলঙ্কার নির্মাণে তিনি সবিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রেমের নানা অনুসঙ্গ, প্রসঙ্গ ও বিস্তার, সংগ্রাম ও ক্লান্তি তার কবিতাকে গভীর প্রেমবোধে আলোড়িত করে। উপলব্ধি ও পর্যবেক্ষণও তিনি বহুমাত্রিক। আবার কখনো সখনো জহিরের কবিতায় খন্ড়িত নিসর্গ নয়, এসেছে পরিপূর্ণ নিসর্গ। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের মতোই বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো এসেছে নিসর্গ। তার কবিতা মধুর এক নৈ:সঙ্গের যন্ত্রনার সীমা- পরিসীমায় পাঠককুলকে পৌছে দেয়। প্রকৃতি তার কবিতায় স্বয়ম্ভু অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে মনোজৈবিক সম্পর্কের সূত্র নির্ণীত হয় তার কবিতায়:
“খোদার আরশ কাঁপে পাপের কারণ
জগতে দাপটে চলে শুনে না বারণ
প্রভুর রহম ছাড়া বাঁচে না মানুষ
গজবে আজাব আনে, বিনাশ ফানুস”
কবির বোধির মধ্যে চমৎকার নাজিল। তেলওয়াতে ঝংকার আছে। গভীরে আরো গভীর। কবি জহির ইসলামের কবিতায় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে আত্যন্তিক সচেতনতা প্রকাশিত হয়েছে। আজকের এই বিকাশমান সমাজে প্রতিষ্টার দৌড়ে মানুষ ভুলেছে আবেগ- সংযম ও পরিমিতবোধ। যার ফলে মানুষ ভুলেছে নৈতিকতা। বেড়েছে বিভিন্ন পাপের দাপট। কবিতার শব্দপ্রয়োগ ও প্রকরণগত দিক দিয়ে জহির ইসলাম গোড়া থেকেই স্বাতন্ত্র্যভিলাষী। যদিও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ তার ছন্দবিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রাধান্য নির্দেশক, তবু মাত্রাবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত ছন্দের প্রয়োগে তিনি অসফল নন। বিষয়ের তাৎপর্য ও ব্যঞ্জনাকে নবতর আঙ্গিকে উপস্থাপন করার জন্য, অক্ষরবৃত্ত ছন্দকেও তিনি নিরীক্ষার বিষয় করেছেন বহু কবিতায়- যেমন ” জোছনা রাতে ফুলের সাথে” বা আমার গাঁ। হৃদয়াবেগ অপেক্ষা মনননির্ভরতা তার কবিতার বিশেষত্ব- নির্দেশক প্রান্ত হবার ফলে জীবনের গদ্যময় ভঙ্গুর ও গতিচঞ্চল স্বরূপই তার অন্বিষ্ট। ভাবাবেগ সেখানে পুরোপুরি অন্তর্হিত না হলেও তার কবিতা পাঠকের বুদ্ধিবৃত্তিতে সজাগ। ছন্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অক্ষরবৃত্ত যদিও কবির প্রধান অবলম্বন, তবু অন্যান্য ছন্দের ব্যবহারে অমনোযোগী নন তিনি। “স্বাধীনতার খাম” কবিতাটির প্রথম স্তবক একবার পড়তে চাই-
“সেদিন দেখি বোনের হাতে
রক্তমাখা খাম
সেটাই বুঝি স্বাধীনতা
বাংলাদেশের নাম”
কবি জহির ইসলাম প্রকৃতপক্ষে উপরের কবিতাটি দিয়েই তার কবিচৈতন্যের নবযাত্রা শুরু হলো। যেখানে স্বাধীনতার আদি উৎস থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার মানসলোক জীবনাবেগ। স্বাধীনতার অন্তর্গত অবক্ষয় ও আর্তিকে কখনো গভীরতম ব্যঞ্জনায় তরঙ্গিত করে তুলেছেন কবি, কখনো বা বর্তমানের ঐকান্তিক অনুভবে জীবনজটিলতার গ্রণ্হিসমূহ, আবার কখনো সখনো প্রগতির বিপুলা স্রোতস্বিনীতে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তি সন্ধানের ঐকান্তিক প্রয়াস। “কবিতাবাসর” কবিতায় তার ঐতিহ্যসন্ধান পরিণামে আত্মানুসন্ধানে পরিণত হয়েছে:
” হাঙ্গরের নাচ দেখো,জোয়ার ভাটায়
নদীতীরে ভেসে উঠে সোনালী শামুক
রূপের নাচনে মন, থাকে না ডাঙায়
তোমার দুচোখ আঁকে পোয়াতি ঝিনুক”
এই ঐতিহ্যসন্ধান গভীরতা এবং ব্যাপ্তি পেয়েছে কবির কবিতায়। ঐতিহ্য, নৃতত্ব এবং জীবনপ্রবাহ পরম্পরায় বিপুল উৎসের অঙ্গীকারে মানবীয় অন্বেষার সমগ্র প্রান্তকে স্পর্শ করে গেছেন কবি। মূলত: তার কবিতা শিল্পের চিরাচরিত খোলস ভাঙ্গার অদম্য স্পৃহা তাকে দান করেছে স্বকীয়তা, এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। তাই তিনি দেশ, দেশের মানুষ ও মাটির গান গেয়েছেন প্রার্থনার ভাষার মতো নীরবে নি:শব্দে। কবি জহির ইসলাম যে মনমাতা শব্দবন্ধে – চৌকশ কাব্যবিভায় আঁকলেন তা এক কথায় অপূর্ব। যেমন-
“বৃষ্টির পানিতে গা- টা ভিজে
কালো চুলে গাঁথে ফুল নিজে
মাঝে মাঝে উঁকি দেয় তারে
ভালোবাসা ভালো লাগে যারে”
কবি জহির ইসলামের “ভালোবাসি বর্ষা” শিরোনামের উপরোল্লিখিত কবিতার কয়েকটি চরণ পড়তে বেশ লাগে। এখানে কবির কাব্যিক ভাবনার গভীরতম অন্তকণার গন্ধভার আলোক ফুল তুলে আনলেন বিস্ময়কর অনুপ চিন্তনে। তাই, অকপটে স্বীকার করতে হয় ভালোবাসাতে বিলীন মনের মানসিক প্রশান্তির রূপ ওঠে এসেছে কবি জহির ইসলামের শব্দের মায়াজালে- যেখানে জীবন, যৌবন ও প্রজন্ম নিয়ে বহমান কবি যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি সুরছন্দে- শব্দে, ভিন্নতর আবহে তুলে ধরেছেন যে, কবি জহির যেন ‘হ্যামিলেনের বাঁশিবাদক”! ভাব ও শব্দ তরঙ্গের মায়াজালে তিনি বিস্তার ঘটিয়েছেন ভিন্নতর জীবন বোধের। কারন অজস্র ভীড়ের মাঝে তিনিও বাজাতে জানেন অস্তিত্বের নির্মোহ বাঁশি। সমকাল নয় মহাকালই তার অভিযাত্রিক চৌম্বক নিশানা। “জোছনা রাতে ফুলের সাথে” কাব্যটির রেখে যাবে বাংলা সাহিত্যের পথে প্রার্থীত চিহ্ন রেখে যাবে বাংলার উর্বর জমিনে- এমন কাম্য নিশ্চয়ই অন্যায্য নয়।

নাসের ভূট্টো
কবি ও প্রাবন্ধিক,

অনুসরণীয় চেতনা এবং নির্ভয়ে যাতায়াত প্রসঙ্গে –

লেখকঃ- বদরুল ইসলাম বাদল


(ক) কোন কাজই ছোট নয়,প্রসঙ্গে চকরিয়ার জালাল;
অভিজ্ঞ  মানুষদের অভিমত ,”বহুকিছু করার সংক্ষিপ্ত পথ হচ্ছে,তাত্ক্ষণিক  একটি কাজ শুরু করে দেওয়া”।সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় যে, কেউ হঠাৎ করে বড় হয় নাই।পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।কাজই মানুষকে  জীবনের লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত করে। দারিদ্রতার কারণে কাজ করতে হবে কিংবা বাবার অনেক সম্পদ আছে বিধায় কাজ করার প্রয়োজন নাই কিংবা ছোট কাজগুলো আমার জন্য আসে নাই, এমন চিন্তাধারা গুলো অসুস্থ মানষিকতার পরিচায়ক।দেশে বেকারত্বের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত অনেক ছেলেমেয়েরা চাকরির পিছনে ঘুরছে। কিন্তু চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা খুব কম যুবকদের হাতে ধরা দিচ্ছে।সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,যুবকদের চাকরির পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বারবার। তিনি বলেন,” চাকরির পিছনে ছোটার  আমাদের যে মানষিকতা সেটার পরিবর্তন করতে হবে”। তিনি যুব সমাজকে চাকরি করার চেয়ে চাকরি দেওয়ার মনোযোগী হওয়ারও আহবান জানান।যেকেউ  ইচ্ছে থাকলে  কাজ খুঁজে বের করে নিতে পারে।তবে কাজ করার মানষিকতার অভাবের প্রবনতাটাই বেশি তরুণ প্রজন্মের। তাই নানাবিধ অজুহাত তুলে  অভিযোগ করতেই দেখা যায় সচরাচর তাদের ।

বিগত সপ্তাহ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে   জালাল উদ্দীন নামীয় এক ছাত্রের সবজি ব্যবসার কথা ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।তিনি চকরিয়া কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র।চকরিয়া পৌরসভায় বাড়ি । ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত তিনি।  রমজানকে সামনে রেখে তিনি চিরিংগা ষ্টেশনে ফুটপাতে  সবজির  পশরা সাজিয়ে বসে।আর্থিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় অন্তত নিজের লেখাপড়ার খরচের জন্য তিনি  সবজির ব্যবসা শুরু করে ।অনেকের  নানাবিধ তিরস্কার মুলক কথা শুনেও  বেচাবিক্রি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।এমতাবস্থায় একদিন তার সবজির উপর হামলা হয়,সব সবজি রাস্তায় ছুড়ে ফেলে, অমানবিক ভাবে।।তার এফবি  ষ্ট্যাটাসের মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো সমস্যাটি ইতিমধ্যে  সমাধান হয়ে গেছে। ঘটনাটি যারা করেছে তারা তার ব্যক্তিগত শত্রু কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা দূর্বৃত্তরা করেছে তা আজকের আলোচনার বিষয় নয়।যেহেতু মীমাংসা হয়ে গেছে, তাই উভয় পক্ষেরই ধন্যবাদযোগ্য।তবে জালাল উদ্দীন সমাজের কাছে  একটি ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে রইল। তিনি গরীব ঘরের ছেলে বা মধ্যবিত্ত বা উচ্চ ভিত্তের ঘরের ছেলে তা বড় কথা নয়,সব শ্রেণীর মানুষেরই জীবিকার তাগিদে   কাজ করতেই হয়।কাজটি ছোট  কিংবা বড় হোক, কাজ কাজই।আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের একটি উক্তি এখানে  উল্লেখযোগ্য, “কোন কাজ ছোট নয়,ছোট সে, যে, কাজকে ছোট ভেবে বিদ্রুপ করে”।আব্রাহাম লিংকলন প্রথম জীবনে  কখনো নৌকা চালিয়ে, কখনো কাঠ কেটে সংসার চালিয়েছেন।বলা যেতে পারে যে, ব্যবসা ছোট হলেও জালাল উদ্দীন যে মানষিক ভাবে তৈরী হতে পেরেছে  সেটাই শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রানিত উদাহরণ। হয়তো তার দেখাদেখি আরও অনেকে উত্সাহিত হবে।সমাজে অনেক অভাবগ্রস্ত পরিবারের সন্তান আছে কাজ করতে চায় না,কিংবা ভরসা পায় না।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক ছাত্র বড় টাউনে ভাড়ায়চালিত গাড়ি চালায়।বিভিন্ন অফিসে পার্টটাইম কাজ করে  ।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান স্কুল জীবনে দুধ বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ যোগাড় করতেন।জীবনের সাথে লড়াই করে তিনি পরবর্তী সময়ে  স্বনামধন্য একজন অর্থনীতিবিদ।সফল মানুষ।তাই লড়াকু যুবকদের  উদ্যোগকে সহযোগিতা করা সমাজিক দায়িত্বের পর্যায়ে আসে। আমাদের দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিদেশে  গিয়ে পড়াশোনার  অবসরে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে  নিজের খরচের টাকা ইনকাম করার জন্য। হয়তো  সবজি ব্যবসার চেয়েও অনেক নিম্নমানের কাজও করে থাকে তারা ।তাতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই।তবে নিজেদের দেশেও  শিক্ষার্থীরা এভাবে এগিয়ে আসলে অনেক অভিভাবকের কষ্টের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে,আশাবাদ সমাজের সচেতন মহলের।এই মহলের  মতে”রোজগার অল্প হোক কিংবা বেশি, নিজের উপার্জিত টাকার চলার তৃপ্তিটাই আলাদা”।

জালাল উদ্দীন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। বর্তমান সময়ে রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের  ধারণা ইতিবাচক নয়। সরকার সমর্থিত সংগঠনের পদবিধারী হলেই অনেকে মনে করে, টাকা ইনকামের একটি লাইসেন্স পেয়ে গেল।দৃশ্যমান কোন কাজ  না থাকলেও  অনেকে অনেক টাকার মালিক হতে দেখা যাচ্ছে ।অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছেন,”রাজনীতি এখন ব্যবসার সম্প্রসারিত অংশ আর টাকা নির্বাচনে পথ করে দাঁড়িয়েছে।দলগুলোর ভিতরে অর্থ ও পেশীশক্তি প্রবেশ করেছে।ফলে রাজনীতি ধনীদের খেলায় পরিণত হয়েছে”।তাই এই মুহূর্তে রাজনীতির প্রতি  সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাবোধ নাই। ।বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতিবিদদের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত রাজনীতিতে সততা ক্রমে নির্বাসিত হয়ে যাওয়ার ফলে দিনদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যতদিন সত্ দেশপ্রেমিক মানবহিতৈষী নেতৃত্ব সৃষ্টি না হবে, ততদিন রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের অবসান হবে না।সেই দিনের  ঘটনার পর জালাল উদ্দীন চকরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়।কিন্তু তার  সংকটকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের  সহযোগিতা ও সমর্থনের  কথা না ভুলবার পরামর্শ থাকবে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষে । নীতি-আদর্শ লালন করে সুস্থ শুদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান থাকবে। সেই পথ বেয়েই  জীবনের স্থায়ী  সফলতার চুড়ায় পৌঁছানো সক্ষম।এই চেতনায়  তরুণদের যে যেই দলেরই হোক না কেন কর্মমুখী হবে ।আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে কারও লেজুড় রাজনীতি করার প্রয়োজন হয় না।তখন নিজের স্বাধীনতা নিয়ে নীতি নৈতিকতা নিয়ে জনগণের সেবা করার পথ সহজ হবে।।তখনই রাজনীতির হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসার দুয়ার খুলে যাবে।

(খ) সড়কের নিরাপত্তার দাবীতে প্রশাসনের নজরদারি কামনাঃ   চকরিয়া উপজেলাধীন প্রস্তাবিত মাতামুহুরি( সাং) উপজেলার বদরখালী টু চকরিয়া কেবি জালাল উদ্দীন সড়ক নিয়ে  উদ্বীগ্ন  হওয়ার মতো সংবাদ তুলে ধরেন ফেইসবুক বন্ধু সমাজকর্মী আলাউদ্দিন আলো।তিনি  লিখেন,”আতংকের নাম বদরখালী টু চকরিয়া কেবি জালাল উদ্দীন সড়ক। বিকাল হলে সিএনজি গুলো ভাড়া নিয়ে আসতে আগ্রহী হয় না।ড্রাইভাররা বলেন এমন কোন জায়গা নাই ডাকাতি হয় না”।সবচেয়ে যে স্থানে বেশি ডাকাতি হয় তার নাম উল্লেখ করে  তিনি  লিখেন”,বাটাখালী ব্রিজ, রামপুর,কোরালখালী,চৌয়ার ফাঁড়ি ষ্টেশনের দুই পাশে, লাল ব্রীজের পাশের লম্বা রাস্তা, লাল গোলা এবং বদরখালী কলেজের পাশ্ববর্তী এলাকা। তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উক্ত সড়কে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে আবেদন করেন।রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশে  প্রতিবছর ছিনতাই,অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ অন্যান্য অপরাধী গুলোর তত্পরতা বেড়ে যায়। মাতামুহুরি নদীবেষ্টিত সাত ইউনিয়ন নিয়ে  মাতামুহুরি উপজেলা (সাং) চকরিয়া সদর থেকে বেরিয়ে  উপকূলীয় জনপদ।ঈদের সদাইয়ের জন্য সাত ইউনিয়নের বাসিন্দা  এবং মহেশখালী উপজেলার মানুষও  চকরিয়ায় মার্কেটিং করতে আসে। উল্লেখিত সড়ক দিয়েই  যাতায়াত করে।গ্রামীণ জনপদ হওয়ায় সন্ধ্যার পরে সড়ক গুলো নির্জনতা জেঁকে বসে।অনাঙ্ক্ষিত অনেক ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা  হামেশা শুনতে পাওয়া যায় ।আবার টমটম সিএনজির  অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোতে   অনেক দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হয়।এসব অনিয়ম প্রতিরোধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো   আবশ্যক মনে করে এলাকার বাসিন্দারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা রহমানের একটি পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি, ” আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করলেও,ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। সচেতন নাগরিক হিসেবে পুলিশের হেল্প লাইনগুলো সবার জানা দরকার এবং এই নাম্বার গুলো মোবাইলের ডায়ালে রাখা প্রয়োজন”।ফলে নিজে সমস্যার সম্মুখীন হলে কিংবা অন্য কাউকে সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখলে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া যাবে।।

তরুণরাই সমাজ এবং  দেশের ভবিষ্যত। উন্নয়ন অগ্রগতিতে এদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে দেশ এগিয়ে যাবার পথে স্থবিরতা নেমে আসবে।তাই তাঁদের সঠিক পথে পরিচালিত করা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়  দায়িত্ব।নিরাপদ নিরাপত্তার মাধ্যমে রাস্তায়  মানুষের চলাচল আশংকা মুক্ত হউক। প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে।

কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজের লিখা ‘ভ্রমনে ভাবনায় সিলেট’ বইটির পরিচিতি


অমর একুশে বইমেলা_২০২৩ উপলক্ষে ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী সুলতানা দিল আফরোজের তৃতীয় বই ভ্রমণকাহিনী “ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট”। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মিনতি রায়। শুভেচ্ছা মূল্য ৪০০ টাকা। বইমেলার দেশ পাবলিকেশন্স ৪১৭, ৪১৮, ৪১৯ নং স্টল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকায় পাওয়া যাবে। বইটি রকমারি ডটকম থেকেও সংগ্রহ করা যাবে। চট্টগ্রামের বইমেলার দেশ পাবলিকেশন্সের স্টল নং ১২১-এ ও পাওয়া যাবে।
রকমারি ডটকমের লিংকটি হল (https://www.rokomari.com/book/285541/vromone-vabnay-sylhet?fbclid=IwAR0oaA4fZtWXUDmIhwTp1JcvMC9361j5xInPvuzboV_4Jh_eQdq425BU2ZQ।)
ভ্রমণ মানুষের মনের দুয়ার খুলে দিয়ে আত্মার বিকাশ ঘটায়। ভ্রমণ যখন স্মৃতিপটে গভীর রেখাপাত করে তখন তার রেশ থেকে যায় বহুকাল। জীবনের কৈশোর বেলায় সিলেট ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লেখকের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। মনের কন্দরে জমে থাকা স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছেন তিনি এই বইয়ের পাতায় পাতায়। স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলো এক একটি সময়ের আখ্যান হয়ে উঠে। সুলতানা দিল আফরোজের “ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট” তেমনি এক আখ্যান। লেখকের সাবলীল লেখনীতে উঠে এসেছে সিলেট জনপদের ইতিহাস,ঐতিহ্য আর দর্শনীয় স্থানের প্রাঞ্জল বর্ণনা। পাঠক এই ভ্রমণের বর্ণনায় একাত্ম হয়ে তাঁর মানসপটে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন সেই সময়ের সিলেটকে। লেখক এই ভ্রমণকাহিনীর সাথে সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হাওরের সৌন্দর্য আর হাওর বাসীদের যাপিত জীবনের চিত্র নিয়ে একটি লেখা সংযুক্ত করেছেন। লেখকের প্রজ্ঞা আর জীবনবোধ এই বইটিকে করে তুলেছে অনন্য।
মানুষ এই পৃথিবীতে আসে অল্প সময়ের জন্য। কালের যাত্রাপথে এ যেন ক্ষণিকের যাত্রাবিরতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবে নিয়ত আসবে আর যাবে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা আর সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বদলে যাবে জনপদের চিত্র। মানুষের জন্মাবধি পথ চলা সময়কে,হারিয়ে যাওয়া,ধূসর হয়ে যাওয়া সময়কে লেখক এই বইটিতে ধরে রাখতে চেয়েছেন। দু’সন্তানের জননী লেখক সুলতানা দিল আফরোজ কৃষিবিদ পিতার বদলিযোগ্য চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা স্বামীর বদলিযোগ্য চাকরির সুবাদেও তিনি দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিজ দেশ ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে বইপড়ার ভীষণ আগ্রহকে চাঙ্গিয়ে রাখতে তিনি সারাজীবন পাঠক হতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা কালীন সময়ে জীবনের ব্যস্ততা কমে আসার ফাঁকে তিনি লেখালিখিতে ঝুঁকে পড়েন।
পাঠক সমাদৃত দু’টো বই “আমার শৈশব,আমার বাবাবেলা” এবং “স্মৃতির আঙিনায়” প্রকাশের মাধ্যমে তিনি লেখার জগতে পদার্পণ করেছেন।“আমার শৈশব,আমার বাবাবেলা” বইটিতে তিনি তাঁর শৈশবের মিষ্টি মধুর স্মৃতিচারণের পাশাপাশি একজন অসম সাহসী,দায়িত্ববান,মরণপণ লড়াকু,তেজোদীপ্ত ও সর্বোপরি সফল ব্যক্তির চিত্র তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় চরিত্র ব্যক্তির মধ্যে পিতা-মাতার দরদী পুত্র, ভাই বোনের দায়িত্ববান বড়দা, একজন স্ত্রীর নিষ্ঠাবান স্বামী, ছেলে মেয়েদের একান্ত ভরসার স্থল পিতার চমকপ্রদ লেখচিত্র তুলে ধরেছেন। মহান মুক্তি যুদ্ধ এবং সমসাময়িক ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক তথ্যাদির সন্নিবেশ বইটিকে ঋদ্ধ করেছে।“স্মৃতির আঙিনায়” বইটিতে আছে ব্যক্তির জীবন,সমাজের মানুষ ও সামাজিক জীবনের বাস্তবতার টুকরো উপলব্ধি। বইটির গোপনে যতনে আছে চারপাশের বাস্তবতার প্রতিরূপায়নের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনের চেনা দৃশ্যকে তুলে ধরা। প্রতিটি পর্বে স্বচ্ছতা, স্পষ্টতা রূপায়নের ফলেই পাওয়া যায় লেখকের ধ্যানের সমস্ত আয়োজন।“আমার শৈশব,আমার বাবাবেলা” এবং “স্মৃতির আঙিনায়” পাওয়া যাবে পাঠক সমাবেশ,শাহবাগ আউটলেট,ঢাকা এবং বাতিঘর,জামাল খান আউটলেট,চট্টগ্রাম।
ভার্চুয়াল প্লাটফর্মেই তাঁর লেখার সূত্রপাত এবং মাধ্যম। এ পর্যন্ত তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ আছে। আছে কিছু বিষয়ের উপর ধারাবাহিকভাবে লেখা যা পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশের ইচ্ছে। অতি সম্প্রতি তাঁর একটি লেখা ‘আমি নদী বলছি-কর্ণফুলী নদী’ প্রকৃতি ত্রৈমাসিক পত্রিকার কর্ণফুলী প্রথম সংখ্যায় ঠাঁই পেয়েছে। কর্ণফুলী দ্বিতীয় সংখ্যাটিতেও তাঁর লেখা ঠাঁই পাবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কর্ণফুলী সংখ্যাটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হতে চলেছে। সাবলীল লেখনীতে তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় যেমন স্মৃতিচারণ কিংবা ভ্রমণকাহিনী তেমনি দেশপ্রেম, প্রকৃতি, মাটির সোঁদা গন্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মের সাথে শেকড়ের এক মেলবন্ধন গড়ে তুলতে তাঁর এই ঐকান্তিক প্রয়াস। তিনি জানান,তিনি এখনো শিখছেন। পঠন-শিখন আর পারিপার্শ্বিক অনুষঙ্গ তাঁর লেখার মূল বিষয়। প্রতিনিয়ত তিনি তাঁর কাছের মানুষ এবং পাঠকদের ভালোলাগা মন্তব্য থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এ দেশ পাবলিকেশন্স স্টল নং ৪১৭,৪১৮,৪১৯_এ পাওয়া যাচ্ছে সুলতানা দিল আফরোজের তৃতীয় বই ভ্রমণকাহিনী “ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট”। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইল। আশাকরি লেখকের এই বইটিও পাঠক সমাদৃত হবে।

কবি নাসের ভুট্টোর ‘বামপন্থীর নিরীহ প্রস্তুতিপর্ব’ এখন বইমেলায়-

 

নাসের ভূট্টো
প্রথাবিরোধী লেখক, মূলত কবি -প্রাবন্ধিক। জন্মঃ সম্ভ্রান্ত সিকদার পরিবারে। স্বাধীনতা দিবস ১৯৭৬। পত্রিকা সম্পাদনা, মিড়িয়ার তথাকথিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিরোধ, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে দাসশ্রমিক হিসেবে ব্যক্তিকে পূঁজা না করে ফিরে আসা, জোট শাসনামলে রাজনীতির নোংরা ব্যাকরণের শিকারে কারাবরণ এবং সেই সম্পর্কে পোক্ত ধারনাকে পুঁজি করে সাহিত্যের অবারিত ভুবনে অন্বেষণ করেন জীবনের রূপ ও রঙ। এ কাজে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা এবং স্বীকৃতি – আলোকিত রামু পদক-২০১৮, নীলপদ্ম সাহিত্য সম্মাননা-২০১৯, বাংলাদেশ হেরিটেজ সম্মাননা- ২০২০ ।
সাহিত্য-সংস্কৃতি-সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। এখন, সমন্বয়কঃ কবিতা বাংলা, কককসবাজার ও যুগ্ন সম্পাদকঃ লোক বাংলা, কককসবাজার জেলার দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি যুক্ত আছেন খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি নিয়ে কাজ করা ” মানুষ হবে ” সংস্থার সাথে। তাঁর দশম গ্রন্থ বইমেলা ২০২৩ ইংরেজীতে প্রকাশ পেয়েছে। বইটির নামকরন করেছেন- ‘ বামপন্থীর নিরীহ প্রস্তুতিপর্ব। সেই ধ্রূপদীগ্রন্থের বিষয়ে দু,একটা কথা না বললে নই।
বিশ্বায়ণের নামে পুঁজির সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন মানবজীবনে যেমন এনেছে প্রতিযোগিতা, তেমনি এনেছে কপটতা, শঠতা এবং মানবিক-নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। এই অবক্ষয় আমাদের সমাজ ও পরিবারকে প্রকটভাবে গ্রাস করে আছে। এ কারণে বৈষয়িক স্বার্থান্ধ মানুষগুলো আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর ভেঙ্গে পড়ছে প্রাচীন একান্নবতী পরিবারগুলো। নাসের ভূট্টোর এই উপন্যাসটি মফস্বলের একটি একান্নবতী পরিবারের উত্থান-পতনের কাহিনি নিয়ে রচিত। সমাজকে নিবিড়ভাবে অবলোকন করে লেখক তুলে এনেছেন সামাজিক ও রাষ্ট্রীক অপরাধ সমূহ। সমষ্টিক স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন পরিবারে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। এখান থেকে উত্তরণের আর কোনো সুযোগ থাকে না। কেবল বাড়তে থাকে বিভাজনের ক্ষেত্র। লেখক এই দিকটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে চিত্রায়িত করেছেন। উপন্যাসে থাকতে হয় চরিত্রের উত্থান-বিকাশ-পতন। চরিত্রের জড়তা উপন্যাসকে দুর্বল করে। সেক্ষেত্রে খাহোসি, লোহোসি, ওসমান, আবসারী প্রভৃতি চরিত্র প্রাণবন্ত বলে মনে হয়েছে।
কবি ও প্রাবন্ধিক নাসের ভুট্টো’র উপন্যাস ‘বামপন্হীর নিরীহ প্রস্তুতি পর্ব’ গন্হটি পাওয়া যাচ্ছে- ঢাকা বইমেলা স্টল নং- ১৩৪. [লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ] ও চট্টগ্রাম ৩৭-৩৮ নং স্টল। বইটির প্রকাশকঃ তৃতীয় চোখ।
প্রচ্ছদঃ বৈশ্বানর পরাভূৎ (কলকাতা)
উৎসর্গঃ কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজ।
মানবসমাজ ও ব্যক্তি চরিত্রের অন্তর্ভেদী পর্যবেক্ষণিক অভিজ্ঞতার সারৎসারকে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কাহিনি নির্মাণে লেখকের দক্ষতা প্রশংসার দাবি রাখে। বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কবি নাসের ভুট্টো’ র প্রকাশিত বইয়ের তালিকা নিম্নে দেওয়া গেলঃ-
১. অনিবার্য ধূলো রোজই ওড়ে ( কাব্য, ২০১৬)
২. দীঘিভরা প্রাচীন মেঘ ( কাব্য, ২০১৭)
৩. অন্তঃস্হ স্মৃতির কোঁচড় ( কাব্য, ২০১৮)
৪. ঈশ্বর এবং অন্ধকার সমুদ্র ( কাব্য, ২০১৮)
৫. মফস্বলের একজন বামপন্থী ( উপন্যাস, ২০১৯)
৬. বিনয়াবনত ( কাব্য, ২০১৯)
৭. ক্ষুধার্ত মানুষের উপাখ্যান ( প্রবন্ধ, ২০২০)
৮. সুন্দরের অনন্ত বৈভব ( কাব্য, ২০২১)
৯. কবিতা সমগ্র (২০২২)
১০. বামপন্হীর নিরীহ প্রস্তুতিপর্ব (উপন্যাস, ২০২৩) ।
কবি ও প্রাবন্ধিক নাসের ভুট্টো’র বইয়ের প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।

1 2 3 21