উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন

আনোয়ার সিকদার, কক্সবাজার;

বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত উখিয়া  উপজেলা শাখার আওতাধীন জালিয়া পালং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোঃ ইউছুপ নুরকে আহ্বায়ক ও আবুল হাসেমকে সদস্যসচিব করে উখিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন শর্মা রনির  স্বাক্ষরিত ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সম্মেলন প্রস্তুত করার লক্ষ্যে আগামী তিন মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

কমিটি নিন্মরূপ__

আহ্বায়ক- মােঃ ইউছুপ নূর

যুগ্ন আহ্বায়ক যথাক্রমে

গফুর আলম, আবুল কাসেম, সােহেল রানা, সাইফুল ইসলাম, সােহেল আরমান জয়, ও  জয়নাল মিয়া ।

সদস্য সচিব- আবুল হাসেম।

সদস্য যথাক্রমেঃ–  মানিক সরওয়ার, ওমর ফারুক,  আবুল কাসেম,  বেলাল উদ্দিন,  আব্দুর রহমান বদি, আলী হোসেন, জহির উল্লাহ, ফকরুদ্দীন,  মাহাবুল আলম,  মােঃ হােসাইন, ছলিম উল্লাহ, মােঃ আলমগীর মােঃ রফিক, মােঃ হােসাইন, ছলিম উল্লাহ, মােঃ আলমগীর, মােঃ রফিক, মােস্তাফা কামাল, নূরুল আবছার, মােস্তাক আহমদ, আরফাত উদ্দিন, ফরিদ আলম, আব্দু শুক্কুর, নূরুল আবছার, মাহাবুল আলম, রহমত উল্লাহ, মােঃ আলম।

শরীয়তপুরে যৌতুকের জন্য” মধ্যযুগীয় কায়দায়”স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন

নিউজ ২৪লাইনঃ
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের উপোসী গ্রামে স্বামী ও শাশুড়ি নির্যাতনের শিকার হয়ে তামান্না আক্তার (২৬) শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। তামান্নার এখন একটাই চাওয়া স্বামী হুমায়ুন কবির সরদার ওরফে জুয়েল (৩২) এবং শাশুড়ি ফরিদা পারভীন(৬৫) এদের অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে সে এখন বাঁচতে চায়। গত ২৭ই আগস্ট ২০২১ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভোজেশ্বর ইউনিয়নের উপসি গ্রামের তামান্নার স্বামীর বাড়িতে স্বামী হুমায়ুন কবির এবং শাশুড়ি ফরিদা পারভীন এরা তামান্না আক্তার কে যৌতুকের জন্য অমানবিক নির্যাতন করে এমন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে তামান্না আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন গত সাত বছর আগে ২০১৪ সালে পারিবারিক ভাবে হুমায়ুন কবির সরদার ওরফে জুয়েল এর সাথে আমার বিবাহ হয়। আমার সংসারের সুখের কথা ভাবিয়া আমার পরিবার বিবাহের সময় স্বর্ণ অলংকার ও ঘর সাজানো আসবাবপত্র আমাকে দেয়। বিবাহের কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমার উপরে আসে অমানুষিক নির্যাতন। আমি আমার পরিবারের কথা ভেবে আমার এই নির্যাতনের কথা আমি পরিবারকে বলতে পারিনি। আমার স্বামী হুমায়ুন কবির ঢাকা সিআইডি কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করে। সেই সুবাদে আমি ঢাকায় স্বামীর বাড়িতে থাকি।আমি ঢাকা স্বামী সাথে থাকা অবস্থায় আমি প্রথম বাচ্চা কনসিভ করি। কিন্তু তার ২লক্ষ টাকার যৌতুকের দাবিতে আমাকে মারপিট ও অমানবিক নির্যাতনের কারণে আমার প্রথম বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে ঢাকা শান্তিনগর ইসলামিয়া হাসপাতাল এ দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমার সাত বছর সংসার জীবনে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে অমানবিক নির্যাতন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। আমার পরিবারের কথা ভেবে নিরবে সহ্য করে আসছি। আমি আর পারছিনা। ২০১৫ সালে আমার একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাহার বর্তমান বয়স ৫ বছর নাম আয়েশা সিদ্দিকা। আমার কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে আমার উপর আরো বেশি নির্যাতন চালায়। আমার স্বামী কন্যা সন্তানকে আজ মেনে নিতে পারেনি। তার একটাই কথা আমি কেন ছেলে সন্তান জন্ম দিলাম না। আমি দীর্ঘদিন ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাচক গ্রামের বাবার বাড়িতে থাকি। আমার স্বামী দেশের বাড়িতে আসলে আমাকে খবর দিলে আমি স্বামীর বাড়িতে চলে আসি। কিছুদিন যাওয়ার পর আমার স্বামী জমি ক্রয়ের কথা বলে দুই লাখ টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনতে বলে।আমি টাকা আনতে অস্বীকার করিলে আমার শাশুড়ির কুপরামর্শে আমার স্বামী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে। আমি ওই মুহূর্তে বাঁচার জন্য চিৎকার করিলে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। আমার স্বামী হুমায়ূন কবির এবং শাশুড়ি ফরিদা পারভীন এদের বিচারের দাবীতে এদের বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় আমি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করি।

নড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ অবনী শংকর কর এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।

করোনার জাল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে সৌদিতে নারীসহ ৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

নিউজ ২৪লাইন:
আন্তর্জাতিক ডেক্সঃ
সৌদিআরবের রাজধানী রিয়াদে করোনাভাইরাসের জন্য পিসিআর সার্টিফিকেট জাল করে বিক্রির অভিযোগে এক নারীসহ চার বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনের বরাত রিয়াদ পুলিশের মুখপাত্র মেজর খালেদ আল-ক্রাইদিস জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে, তখন তারা রিয়াদ পাড়ার একটি আবাসিক ইউনিটে অবৈধ বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল।

বিক্রির জন্য প্রস্তুত জাল পিসিআর সার্টিফিকেট এবং জালিয়াতি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলি তাদের দখল থেকে জব্দ করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাদেরকে পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃত ওই চার বাংলাদেশি নাগরিকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

হাজী তনাই মোল্লা কে দেকতে গ্র্যীনলাইফ মেডিকেলে ছুটে যান রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল

নিউজ ২৪লাইনঃ
শরীয়তপুর জেলার
জাজিরা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী তনাই মোল্লার, অসুস্থতা খবর শুনে তাকে দেখতে ও তার শারীরক খোজঁখবর নিতে গ্র্যীনলাইফ মেডিকেলে
ছুটে যান, সাবেক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী বিএনপি-জামাত সরকারের বারবার নির্যাতিত নেতা শরীয়তপুর পৌরসভা সাবেক সফল চেয়ারম্যান ও জাজিরা পালং এর গণমানুষের নেত, রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল।

পালং জাজিরায় যখনই কারো অসুস্থতার খবর শুনেন সেখানে ছুটে যান রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল,
তার শারীরিক-মানসিক সমস্ত খোঁজখবর নেন।
প্রমুখ

একইদিনে দুই পুত্রবধু পরকীয়া প্রেমিক দের সাথে ‘উধাও

নিউজ ২৪লাইনঃ
কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়ার সাহারবিলে একই পরিবারের দুই গৃহবধু নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোন সন্ধান মিলেনি। একজনের কোলে এক বছরের একটি শিশুও রয়েছে।

একইদিনে দুই পুত্রবধু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় শশুর নিখোঁজ পুত্রবধুদ্বয়ের শ্বশুর জাকের আহমদ বাদী হয়ে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী জমা দেন। এটি শনিবার (২৮ আগস্ট) থানায় সাধারণ ডায়েরী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। যার নং- ১২০৩ (২৮/০৮/২১ইং)।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড রামপুর কাজলিবাপেরচর গ্রামের বাসিন্দা জাকের আহমদের তৃতীয় ছেলে ওসমান গণির সাথে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বানিয়াছড়া এলাকার মৃত আবছার আহমদের মেয়ে সার্জিনা আক্তার (২২) এর কাবিননামামূলে বিবাহ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তাদের তিন বছরের সংসারে রয়েছে জাওয়াত আফরান ওবাইদুল্লা নামের এক বছরের (১৫ মাস) শিশু সন্তান। ছেলে ওসমান গণি চাকুরির সুবাধে চট্টগ্রামেই থাকেন।

জাকের আহমদ জানান, চলতি বছরের গত ৫ জুন কনিষ্ট ছেলে মো. ইউনুছ (২৭) সাহারবিলের ২নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকার মৃত মাওলানা আবু শোয়াইবের মেয়ে জন্নাতুল বকেয়া তায়িন (১৮) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

তিনি বলেন, ওসমান গণির স্ত্রী পুত্রবধু সার্জিনা আক্তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে সার্জিনা আক্তার এক বছরের শিশু সন্তান জাওয়াত আফরান ওবাইদুল্লাকে টিকা দিতে যাওয়ার কথা বলে আরেক পুত্রবধু ইউনুছের স্ত্রী জন্নাতুল বকেয়া তায়িনকেও সাথে নিয়ে যায়।

পুত্রবধু সার্জিনা আক্তারের হাতে (০১৮৮০………) নাম্বারের একটি মোবাইল রয়েছে। এতে যোগাযোগ করা হলে রিং পড়লে রিসিভ হয়না। রিসিভ করলে ওই প্রান্ত থেকে কথা শোনা যায়না এমনটি উল্লেখ করা হয় সাধারণ ডায়েরীতে।

জিডির বাদী জাকের আহমদ ধারণা করছেন, দুই পুত্রবধু কোন দুষ্ট চক্রের পাল্লায় পড়েছেন। ওই চক্রের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে নতুন পুত্রবধু জন্নাতুল বকেয়া তায়িনকেও ফুসলিয়ে নিয়ে যায় পুত্রবধু সার্জিনা আক্তার। তাই তিনি তাদের কোন অ ঘটন ঘটতে পারে এমন আশংকা থেকে নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি থানায় জমা দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

কবি তৌহিদা আজিমের প্রথম প্রসব ‘ চাঁদ ডুবেছে করতলে’ কাব্যের দশমাস দশদিন

নাসের ভুট্টো;
No description available.
তৌহিদা আজিম এ সময়ের একজন নিবিষ্ট ও নির্জন কবি। কবিতা নয়, যেন হৃদয়ক্ষরণের বিষাদ বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছেন অপূর্ব শিল্পমুগ্ধতায়। প্রাত্যহিক পরিচর্যায় এঁকে যাচ্ছেন জীবনের মর্মলিপি। জীবন ও সৌন্দর্যের মনোদৈহিক বাসনাচিত্র আঁকতে আঁকতে কবিতা হয়ে উঠেছে তৌহিদা আজিমের নিবিড়তর নীড়। যে নীড়ে আজ অনায়াসে ঢুকে পড়ে অবাক করা চাঁদ, তাও ডুবে করতলে। আর চাঁদ ডুবে জোছনা ছড়ায় কবিতার অদৃশ্য শরীর। তাই পাঠক সমাজে সৃষ্টিশীলতার উৎসগুলো সময়ের অলিন্দে সমাদৃত হয়েছে বারবার। জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও তিঁনি প্রয়োজনে ভেঙ্গেছে বৈষম্য। প্রতিদিন বর্ণচাষ করেন মননের ভাঁজে, বাস্তবতার ঘোর ঠেলে খোঁজে ফেরেন বৃক্ষের নিবিড় পাঠ, দিগন্তের আভা আর নির্ভার পংক্তিমালা। কবি তৌহিদা আজিমের প্রথম প্রসব ‘চাঁদ ডুবেছে করতলে’ কাব্যটির দশমাস দশদিনের চৈতন্যের শিকড়ে প্রোথিত বীজের এক বিস্ময়কর বিস্ময়, যা শতবর্ষে ফুটে উঠে। তিঁনি মনোযোগ্য কবি। প্রকাশভঙ্গির অনাবিলতাই তাঁকে আলাদা করেছে, করেছে ছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা। তবে গভীরে প্রোথিত স্মৃতিজাগানিয়া তরঙ্গের স্পর্শে স্পর্শে যে জীবনের কল্লোল প্রবাহিত এতকাল, সহসা হাজারো স্মৃতিকে নাগরিক প্রবণতায় যথোপযুক্ত দান করেছেন আর এগিয়ে নিয়েছেন বোধের সীমানাকে। প্রখরভাবে নাগরিক বৈশিষ্ট্য তার মৌলুউপজীব্য কিন্তু সেটা কায়েম করতে গিয়ে ফিরিয়ে নিয়েছেন পাঠককে চিরন্তন ও চিরায়ত মুগ্ধতার অসংখ্য স্মৃতিতে যার ফলে এতে চিত্ররূপে বর্ণিল, অঙ্কনে আবীরময়, বহুবর্ণাভায় প্রতীকায়িত, সমৃদ্ধময়। উপযুক্ত মানস- বিষয়ীতে, আধার ও আধেয়র আবর্তে। দীর্ঘদিন পরিচর্যায় তিনি প্রাণ দিয়েছেন ও সৃষ্টি করেছেন ধ্রূপদী কাব্যগ্রন্হ ‘চাঁদ ডুবেছে করতলে’। পৌছেছেন মুকুলিত মুকুরে। সেই মুকুরে কোন উচ্চস্বর নেই, নেই কোন দুর্বোধ্য আগল। বরং লেখিকার অন্তর্লোক থেকে উৎসারিত বোধের সরল নির্মাণ প্রতিটি কবিতা বুনন যা- অনাবিল সরসতায় স্নিগ্ধ ও মধুরিমায় আপ্লুত। নিরাভরণ অথচ ব্যঞ্জনাময় শব্দসৌরভের সুর যে কোন পাঠককে নিয়ে যায় অনুভবের ভিন্ন- আঙিনায়। সেই ফেলে আসা জীবন বৃক্ষের বোধাতীত বিস্ময় ও স্মৃতির ভান্ড়ার আজকের নান্দনিক সৃষ্টি যার প্রতিটি কবিতার শিরোনামই জানিয়ে দেয় জীবনের রক্তমাংস ও নিঃশ্বাসের সঙ্গে কবির নিবিড়তর সম্পর্ক ও আবেগের আন্তরিক প্রকাশ যা সহজেই মেলেনা চারপাশে। কবি তৌহিদা আজিমের ‘চাঁদ ডুবেছে করতলে’ কাব্যটি পড়ার পর মনে হলো, কবি হৃদয় খুঁড়ে জাগানো বেদনার গল্প বলতে ভালোবাসেন। জীবন থেকে আলাদা কোনো কিছু নয়। আমাদের প্রতিদিনকার যাপিত জীবনেরই নান্দনিক উপস্হাপনা। এখানে মানবিক ছন্দ আছে, বিরহ আছে,আছে প্রকৃতিও। চারপাশের পরিচিত মুখগুলোকে নতুন করে চেনান তিনি, ভাবানও। কবিতার প্রতিটি শিরোনামই জানিয়ে দেয় জীবনের সঙ্গে সমুদ্র কন্যার বোধ ও চৈতন্যের অভিপ্রায়টি। প্রতিটি কবিতাচয়নে স্বতন্ত্র ভাবনার- কবিতা সূচিবদ্ধ হলেও কবিতাগুলোর অন্তস্রোতে একটি ঐক্যসূত্র রয়েছে। সেটি হচ্ছে প্রেম। মানুষের জীবনে খন্ড় খন্ড় অভিজ্ঞতার সমাবেশ। সেই সমাবেশে নানা রঙ – আনন্দ, বেদনা, সুখ ও দুঃখের অনির্বচনীয় এক অনুরণন। সময়ের ক্যানভাসে এইসব অনুরণন নানা বর্ণবিভায় উদ্ভাসিত হয়। তেমনি ‘চাঁদ ডুবেছে করতলে’র কাব্যগ্রন্হের ‘যুবকের ঘ্রাণ’ শিরোনামের কবিতার প্রথম স্তবকটি গভীর আবেগে একবার পড়তে চাই- ‘ কতোদিন তোমার কাছে যাই নি কতোদিন স্বপ্নের হাত ছুঁয়ে দেখি নি ‘। কবি তৌহিদা আজিমের প্রেম ও বিদ্রোহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, বরং তা একই উৎসের দুই পরিপূরক প্রতিভাস। যে আন্তর – প্রেরণায় তিনি অধরা পুরুষ’কে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, ব্যর্থতায় হয়ে পড়েন বিষন্ন, সেই একই প্রেরণায় সত্য-সুন্দর-মঙ্গল প্রতিষ্টায়, স্বাধিকারের বাসনায় তিনি উচ্ছারণ করেন প্রেমের অমুল্য বাণী। এই সৌন্দর্যের অনুভুতিই নানাভাবে নানা ছন্দে রূপ নিয়েছে এবং এই অনুভুতির পথ ধরে চলতে চলতেই চিনতে পেরেছিলেন যা কবির স্মৃতি ও শ্রুতিতে চির- ভাস্বর। এতকাল এই ব্যর্থতার জন্য তাঁর তীব্র হাহাকারবোধ নেই বরং অভিঞ্জতালব্দ- দর্শনাশ্রিত হয়ে আবিস্কার করেছে প্রেমের শ্বাশত-সত্য। তাঁর কবিতায় সময়ের ছায়া আছে, আছে স্মৃতিতাড়ানিয়া সুখ কিংবা গভীর গভীরতর নষ্টালজিয়া। কবির অন্তর্লোক থেকে উৎসারিত বোধের সরল নির্মাণ প্রতিটি পংক্তি- যা অনাবিল সরসতায় স্নিগ্ধ ও মধুরিমায় আপ্লুত। নিরাভরণ অথচ ব্যঞ্জনাময় শব্দসৌরভের সুর আমাদেরকে নিয়ে যায় অনুভবের ভিন্ন আঙ্গিনায়। তাই তো কবি অকপটে বলেন- ‘হিংসায় ফুল ফোটে না, বরং ধ্বংস হয়ে যায় টুইনটাওয়ার’। ( চাঁদ ডুবেছে করতলে) ‘খেলাঘর’ শিরোনামের শেষ দুটি লাইন। পাঠক এই দুই লাইনে খু্ঁজে পাবে গভীর এক বিচিত্র অনুভব। যা মৃদু স্পন্দনময় ও গভীর অতলের এক সমুদ্র নাবিক কী যেনো খুঁজছে অনায়াসে। দৃশ্যমান নয়, অথচ অনুভবের এক শিহরণ ঢেউ খেলে যায় সমস্ত ইন্দ্রিয়ে। পাঠকের আনুগত্য ও আকর্ষণ কেবল একজন কবির সৃষ্টিকর্মের মান ও উৎকর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তাঁর জীবনাচার ও বিচিত্র বহুমুখী কর্মকান্ড় ও পালন করতে পারে একটা বড় ভুমিকা। কারণ, লেখকসত্বা কেবল লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, সেটি লেখকের জীবন ও সৃষ্টির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ভাষিক অনুভূতির নিগূঢ় ব্যঞ্জনের নাম কবিতা। কবিতা যে- কোনো সাধারন ভাষা মাত্র নয়, তারই প্রগাঢ় অনুরণন দেখতে পাই। বিষয়, আঙ্গিক ও চিন্তার গভীরতায় তিনি বৈশ্বিক। আবহমান ভাবের বিস্তৃতিতে তিনি স্বদেশিক। একটি শব্দের অপর একটি শব্দের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তিঁনি শব্দানুষঙ্গ সৃষ্টি করেন গভীর প্রত্যয়ে। তাই কবি চান ফুল ফুটুক ও বিচ্ছুরিত হউক বিবিধ ভাবে, উদ্ভাসিত হউক- পৃথিবীর মানচিত্র। প্রকৃতির কবিকে প্রতীক রূপে ব্যবহার না করে চিত্তলোকে ঠাই দেওয়া একজন কবির আজন্ম স্বভাব। কবি তৌহিদা আজিমের ‘ চাঁদ ডুবেছে করতলে’ কাব্যের ‘পাথর সময়’ শিরোনামের কবিতায় মহাকাল যাপণের নষ্টালজিয়ায় সিক্ত হয়েছেন। তাই তিঁনি উচ্ছারণে বৈষম্য করেন নি বরং নির্দ্বিধায় বলেছেন- ‘অবসরে আমার দু’মিনিট সময় যেন আর কাঁটে না অথচ কতো মহাকাল আমি একা আছি’। কবি তৌহিদা আজিমের কবিতা অনেকাংশে সরল, আধুনিক জটিলতা যা এসেছে তা সরলতাকে অবগাহন করতে যেয়ে। আসলে মানুষ মাত্রই একা, শেষপর্যন্ত একা। তারপরও কবি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চান সমগ্র ধরায়, কারনঃ তিঁনি ভালোবাসার কাঙ্গাল। ভালোবাসা দিতে গিয়ে বারবার প্রতারিত হয়েছেন মানুষের কাছে। যখন ব্যর্থতা স্পর্শ করেছেন তখন তিনি বেদনাহত হৃদয়ে উচ্ছারণ করেছেন । ‘ বিষাদের জ্বর’ কবিতায় শাশ্বতিক বিরহকে তিনি আবিস্কার করতে পেরেছেন বলেই উপলব্দি করেছেন ‘দীর্ঘশ্বাস’ কবিতাটি। তাই কবি তৌহিদা আজিম বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রেমের জগত প্রাপ্তি নয়, বরং অপ্রাপ্তি- মিলন নয় বরং বিরহই চিরায়ত সত্য,শাশ্বত প্রাপ্তি। প্রত্যেক মহৎ কবি তাঁর নিজস্ব সমুদ্রের সঙ্গে গভীর বিজড়িত থাকেন এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকর্মেই তাঁর নিজস্ব ঢেউয়ের একটা বিশেষ রূপ ধরা পড়ে – যা স্বতন্ত্র্য প্রাতিস্কিতায় অতুলনীয়। প্রত্যেক কবিতারই থাকে একটা নিজস্ব চরিত্র, স্বতন্ত্র্য, জলবায়ু, আলাদা বৈশিষ্ট, চাল-চলন,যানবাহন,খাবার-দাবার, স্বতন্ত্র্য ভুগোলের অবকাঠামোর কবিতার চালচিত্র তাঁর আত্মার এ স্বরূপ আমরা চিত্রিত দেখি- তার প্রকাশিত কাব্য ‘চাঁদ ডুবেছে করতলে’। কবির চুড়ান্ত শব্দ- ভালোবাসা। ভালোবাসার আলো-আঁধারী পথে চলতে গিয়ে কবি তৌহিদা আজিম নিরন্তর নিজেকে ভাঙ্গেন আর গড়েন। সেই ভাঙ্গাগড়ার মাঝে তিঁনি প্রসব করেন নান্দনিক ও সময়োপযোগী কবিতা। কবি’র অপূর্ব সৃষ্টি অনুরাগ মাখা স্বপ্নময় কবিতাচরণে আমরা দেখি- অতৃপ্ত আবেগে রক্তে রাঙা রূপসী বাংলার চিত্র, ড়াংগুলি খেলার জম্পেস বাহাস, মগপাড়ার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, আচারগুলির বন্ধুকের টুস টুস শব্দের ঝংকার,মগপাড়া খালের রহস্যময় শিহরণ, দুইদ্যা নামক খেলা, চিকুত কুত খেলা, পট ভাইজ্যানি ও দলবেঁধে ভুতের কিচ্ছা- কাহিনী শ্রবণ, যা সাধারন পর্যায় থেকে তুলে এনে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন অন্যদিকে আছে ব্যাক্তির জীবন, রাষ্ট্র,রাষ্ট্রের মানুষ ও সমাজ বাস্তবতার টুকরো উপলব্দি। জীবনের প্রয়োজনে আমরা এগিয়ে যাই সামনে কিন্তু হারানো অতীত স্মৃতিগুলো মনের কোণে ফিরে আসে বারবার, সেই অদম্য স্মৃতিরা এক সময় মিছিল করতে করতে পত্রপল্লবে বিস্তৃতি হয়ে জন্ম নেয় একেকটি কবিতা যার প্রতিফলন কবি তৌহিদা আজিমের অন্তর্লোক থেকে উৎসারিত ‘ চাঁদ ডুবেছে করতলে’। তাছাড়াও গ্রন্হের গোপনে যতনে আছে- চারপাশের বাস্তবতার এই প্রতিরূপায়নের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনের চেনা দৃশ্যকে চোখের সামনে তুলে ধরে কবি আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীলতার মুখোশের অন্তরালে যে সমাজতান্ত্রিক ব্যাক্তিমানুষের বসবাস তাকে চপেটাঘাত করেছেন। প্রতিটি কবিতায় দেখতে পাই স্বচ্ছতা, স্পস্টতা রূপায়নের ফলেই আমরা পেয়ে যাই কবি তৌহিদা আজিমের ধ্যানের সমস্ত আয়োজন। যা পাঠকদের মুগ্ধচৈতন্যে গুঞ্জন তুলবে অহর্নিশ। কবি কবিতা রচনা করেন, কবির অনুভবে ঘন হয়ে ওঠে নিজস্ব বোধ- চেতনা, পরিপার্শ্ব। কবির চেতনার রঙের রংধনু হয় কবিতা- প্রতীক ,উপমা, উৎপ্রেক্ষা। কোন লেখক কত স্মৃতির দুয়ার খুলবেন, তা এক চির- অমিমাংসিত সত্য। এই অমিমাংসাই শিল্পের সম্ভাবনা। অতৃপ্তির বন্দরে তার তাবৎ নোঙর। একজন কবির বড় সম্বল তাঁরই স্মৃতি। সবার মধ্যে থেকেও নিজের পথ নিজেকেই রচনা করতে হয়। আবেগকে পরাতে হয় প্রঞ্জার লাগাম তাই বিন্দু বিন্দু স্মৃতির তরঙ্গে কবি তৌহিদা আজিম এক নিরন্তর ডুবুরি। আমাদের কবি তৌহিদা আজিম সমস্ত বিষয় পরিবেশনে কৌশল ও দক্ষতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোনো কবিতাতে তীব্র একটা উল্টো বাঁকের সাথে দারুন সখ্যতা, বৃক্ষের তরুন শাখার বসন্তের পাতার মতো প্রিয় মানুষের জন্য নিবেদিত কবিতা, কোনো স্মৃতিতে যেন ছাইচাপা আগুন, ধিকি ধিকি জ্বলছে… দারুন। অপ্রাপ্তির যন্ত্রনার জন্য এখন আর হাহাকার নেই, আছে অন্তর্গত ব্যাকুলতা। এই ব্যাকুলতা নিজস্ব, একজন গর্ভধারিনীর আজন্ম আর্তনাদ। যা পাঠককে নিয়ে যাবে আবেগের মহা-তরঙ্গে। এভাবে প্রতিটি ধাপে ধাপে উঠে এসেছে স্মৃতির কোঁচড়। তাছাড়া কাব্যগ্রন্হটির নিপূণ বিন্যাস, ভাষার স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীল গতি এবং মানুষের মনোবিশ্লষণী অন্তর্দৃষ্টির দিকটি নিশ্চয় মুগ্ধতা ছড়াবে যে কোন পাঠককে। বিষয়ানুগ ভাষা-ব্যবহার, উপমা- রূপক- উৎপ্রেক্ষা ও সমাসোক্তি অলন্কারের শিল্পিত সৃজন এবং ভাবের অন্তরাশ্রয়ী গীতোময় গতিবেগে ‘ চাঁদ ডুবেছে করতলে’ কাব্য তৌহিদা আজিমের- কাব্যধারার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নির্মাণ।
No description available.
লেখক – নাসের ভুট্টো
কবি ও প্রাবন্ধিক, ককসবাজার।