সেই পিটিয়ে মারা রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব এসআই আকবরের!

নিউজ২৪লাইন: ডেস্ক- সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বহিষ্কৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া। একই সঙ্গে মামলায় আপসের শর্তে রায়হানের মা ও সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ারও প্রস্তাব দেন তিনি।

রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক আওলাদ হোসেনের দেওয়া অভিযোগপত্রেও আকবরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আর সিলেট মহানগর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা মেলায় বহিষ্কার করা হয় তাকে। এই মামলায় কারাগারে আছেন আকবর। জেল থেকেই তিনি এমন প্রস্তাব দেন।

রায়হানের মৃত্যুর পরই পালিয়ে যান এসআই আকবর। গত বছরের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে আকবরসহ অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান পলাতক। জেল থেকে তিনি এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে এমন প্রস্তাব দেন।

রায়হানের মা সালমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন আগে পুলিশের এক সদস্য আমাদের বাসায় আসেন। তিনি আরেকটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। সেখানে আকবরের সঙ্গে তার দেখা হয় জানিয়ে ওই পুলিশ সদস্য জানান আকবর রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে চান এবং আমার ও আমার নাতনির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে চান জানিয়ে তিনি আমাদের সম্মতি জানতে চান। তবে আমি আমাদের আপত্তির কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। ছেলের খুনি ছেলের বউকে বিয়ে করবে এটা কোনোভাবেই মানতে পারবো না।

সালমা বলেন, এই প্রস্তাব পাঠানোর কিছুদিন পর আকবরের সঙ্গে কারাফটকে তাদের দেখা হয়। সেদিন আকবর আমাদের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দিতে গত মাসে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী ও সৎবাবা হাবিবুল্লাহকে পুলিশ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আকবরসহ অন্য আসামিদেরও তাদের সামনে হাজির করা হয়। তখন আকবর তাদের কাছে ক্ষমা চান।

সালমা বেগম বলেন, ওইদিন আকবর আমার ও আমার স্বামীর পা ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেন। তিনি ক্ষমা চেয়ে আমাদেরকে তার প্রাণভিক্ষা দেওয়ার জন্য বলেন। আমাদের যাবতীয় দায়িত্ব নেবেন বলেও জানান আকবর।

রায়হানের মা বলেন, সেদিন আকবর আমাকে বলেছিল, আমরা ভুল তথ্য পেয়ে রায়হানের মতো ভালো একটি ছেলেকে নির্যাতন করেছি। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দিন।

আকবরকে কখনও ক্ষমা করবেন না জানিয়ে সালমা বেগম বলেন, তিনি আমার নিরপরাধ ছেলেকে খুন করেছেন। তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না। আমাদের ভরণ-পোষণের চিন্তা করতে হবে না। পারলে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।

রায়হান যখন মারা যান তখন তার মেয়ে আলফার বয়স ছিল দুই মাস। সেই মেয়ে এখন ১৪ মাস বয়স। হাঁটা শিখছে। ধীরে ধীরে কথাও ফুটছে তার মুখে।

সালমা বেগম বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার কাজে আদালতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি নাতনিটা কেবল বাবা বাবা করছে। সব সময়ই সে বাবাকে খোঁজে। কিন্তু পায় না। তার জন্য বুক ফেটে যায়। এই শিশুকে যে এতিম করেছে তাকে কী করে ক্ষমা করব?

তিনি বলেন, তাদের এই ক্ষমা প্রার্থনা আর বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবই প্রমাণ করে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমেদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে ভোরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে নেয়া হয় এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে। সেখানে সকালে মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। পরে অভিযুক্ত এসআই আকবর ভারতে পালাতে গিয়ে সীমান্তে উপজাতিদের হাতে আটক হন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

উধাও হওয়া সেই ৩ বান্ধবী উদ্ধার

নিউজ২৪লাইন: ঢাকা- রাজধানীর পল্লবী থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও সনদ নিয়ে নিখোঁজ সেই তিন কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তারা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে র‌্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক মেজর রবি খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলাম। তাদের অবস্থান শনাক্তের পর আমাদের একটি টিম কক্সবাজারে যায়। সেখানে আমাদের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন। গতকাল তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। আমাদের সদস্যরাও তাদের অনুসরণ করে ঢাকায় আসেন। মিরপুরে প্রবেশের সময় তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও বলেন, শিগগির তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারা তিনজনই সুস্থ আছেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে পল্লবী থেকে কলেজছাত্রী তিন কিশোরী ‘নিখোঁজ’ হয়। তারা বাসা ছেড়ে বের হওয়ার সময় টাকা, অলংকার ও নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে যায়।

দীর্ঘ সময় ছাত্রীরা বাসায় না ফেরায় পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে এ বিষয়ে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। তিন কলেজছাত্রীর সন্ধান না পেয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা হয়।

এজাহারে দাবি করা হয়, কলেজছাত্রীদের পরিবার লোক মারফত জানতে পেরেছে অপহরণের ঘটনা। পল্লবী ১০ নম্বর সেকশনের প্যারিস রোডের কাইল্লার মোড়ের উত্তর পাশের পাকা রাস্তা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তাদের উঠিয়ে নেয়া হয়।

এ মামলায় এজাহারভুক্ত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগেই আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।