বঙ্গবন্ধুর নাম আর মুছে ফেলা যাবে না :মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউজ২৪লাইন:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তাকে ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলার যে চেষ্টা হয়েছিল, এখন আর সেই চেষ্টা করে কেউ সফল হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের দ্য ক্লারিজ হোটেলে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং `মুজিব ও পরিচিতি’ বই দুটির ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এইটুকু বলতে চাই, এই ডকুমেন্টটা.. এটা হচ্ছে একটা পালিকেশন, যেটা কখনো কেউ করে নাই। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা অনুমতি দিয়েছি এবং উদ্যোগ নিয়েছি এই ডমুমেন্টগুলো প্রকাশ করার। আমি মনে করি এটা অনন্য।”

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সঙ্কলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। এ গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ ছেপেছে ব্রিটিশ প্রকাশনা সংস্থা টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে এর সাত খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

বইটি প্রকাশের জন্য দীর্ঘ ২০ বছর কাজ করতে হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করি এবং ২০০৯ সালে আমরা এটা প্রকাশ করার উদ্যোগ নিই…। ২০১৭ সালে আমরা এটা প্রকাশ করা শুরু করি।

“আমার মনে হয় পৃথিবীর কোনো দেশে পাবেন না যে একজন নেতার বিরুদ্ধে তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কী রিপোর্ট দিয়েছে সেটা কোনোদিন কেউ প্রকাশ করবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে। এটা কোথাও হয় না।”

অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশপাশি কেন বইটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারও ব্যাখ্যা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“আমার বাবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ ব্যান্ড, তার ফটো ব্যান্ড, উনার বক্তৃতা ব্যান্ড। এমনকি যে স্লোগান দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা, সেটাও ব্যান্ড বাংলাদেশে। ৭৫ এর পর এটাই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। তারা সবকিছু ব্যান্ড করেছিল।

“যখন এই বইটা বের হল, এরপর থেকে কিন্তু লোক অনেক কিছু জানতে পারল। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা অন্তত বলতে পারি, এটা বের হওয়ার পর থেকে আর কেউ ইতিহাস বিকৃত করতে পারেনি, করতে পারবে না।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এখন ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারের অংশ। এটা পৃথিবীর ‘অন্যতম অনুপ্রেরণাদানকারী ভাষণ’ হিসেবে বিবেচিত। অথচ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এই ভাষণ শোনা ‘নিষিদ্ধ’ ছিল।

বইটি প্রকাশের জন্য টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাকে বলেছেন এটার ভেতরে এমন কিছু তারা পেয়েছেন যেটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, সারা বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষ বইটি পড়বে, এটি নিয়ে গবেষণা করবে এবং অনেক কিছু শিখবে। তথ্য সংগ্রহ করবে। তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। শুধু বাঙালি জাতি নয়, সারা বিশ্বের মানুষ। এটা সত্যিই অসাধারণ।”

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশপাশি শেখ হাসিনা তার মা ফজিলাতুননেছা মুজিবের কথাও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন।

“উনার (বঙ্গবন্ধুর) জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে। আমরা সন্তান হিসেবে সব সময় বঞ্চিত। আমরা কতটুকু আর বাবার স্নেহ পেয়েছি। কারণ উনি যখন বাইরে, তখন মানুষের জন্য কাজ করছেন, আর তারপরে জেলখানায়। আমাদের সঙ্গে মাসের ১৫ দিনে একদিনই দেখা হতে। এই ছিল আমাদের জীবন।

“কিন্তু আমার মাও কিন্তু… যখন আব্বা জেলে থাকতেন, আমার মা কাজ করতেন। তবে আমার মায়ের ব্যাপারে বলব, উনি সত্যিকারের গেরিলা ছিলেন। উনার কোনো কর্মকাণ্ড কোনোদিন গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি।”

লন্ডন সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেন’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনীও উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ছোট বোন ও মেয়েকে নিয়ে পুরো প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হালেন মাদ্রাসার ছাত্র জাকারিয়া

নিউজ২৪লাইন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া। তিনি রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ঢাবিতে প্রথম হওয়ার সব কৃতিত্ব জাকারিয়া তার মাকে দিয়েছেন।

জাকারিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য যদি আমি কারও অবদান মনে করি সেটা হলো আমার মা। এর পেছনে তার অবদান শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ। তারপর রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। আমার পরীক্ষার আগে এলাকাবাসী আমার জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেছিল। তাদের এ ঋণ শোধ করার মতন নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে প্রথম হওয়া মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, রাজনীতি আর পড়াশোনা এক সাথে কোনোদিন সম্ভব না। যে কারণে আমি ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাই। তারপর নিজে স্বয়ং সম্পন্ন হবো। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। যেটা আমার মা বাবারও ইচ্ছা। আমি চাই তাদের ইচ্ছাকে পূরণ করতে।

ছেলের এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য আনন্দে আত্মহারা মা কাজী তাহেরা পারভিন জাকিয়া। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে শোনান ছেলে জাকারিয়ার এই গৌরব অর্জনের কথা।

পারভিন জাকিয়া জানান, জাকারিয়ার জন্ম ২০০১ সালের ২ জুন। দুই ভাইয়ের মধ্যে জাকারিয়া বড়। ১৪ বছরের ছোট ভাই মো. জারিফ বর্তমানে জাকারিয়ার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেমরা এলাকার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বাবা মো. শহিদুল ইসলাম সেলিম মোল্লা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর এলাকায় উইলস মার্কেটিং কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার হিসাবে ১৯৯৮ সাল থেকে কর্মরত আছেন। মা কাজী তাহেরা পারভিন জাকিয়া বরিশালের বাকেগঞ্জের দুধলমৌ ফয়েজ হোসাইন ফাজিল মাদরাসায় ২০০৪ সাল থেকে সহকারী মৌলভী হিসাবে কর্মরত আছেন।

২০০২ সালে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার পরিবারের সবাই শিক্ষিত হওয়ায় ছেলেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাড়ির পাশে দক্ষিণ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ওই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম হয় জাকারিয়া এবং ২০১১ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

জাকারিয়ার মা আরও বলেন, বাড়ি সংলগ্ন পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদরাসায় ২০১২ সালে জাকারিয়াকে ভর্তি করানো হয়। পরের বছর তার বাবার কর্মস্থল গাজীপুরের মাওনা শ্রীপুর এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া কওমি মাদরাসায় কোরানে হাফেজ করানোর জন্য হেফজখানায় ভর্তি করান। সেখান থেকে ২০১৫ সালে জাকারিয়া কোরানে হাফেজ উত্তীর্ণ হয়। এই ফাঁকে ৭ম শ্রেণির লেখাপড়া প্রাইভেট পড়ে সম্পন্ন করে। পরে তাকে আবার পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে জাকারিয়া ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। যেটি ছিল দুমকী উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয়। সেখান থেকে ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া এলাকার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ওই ভর্তি পরীক্ষায়ও এক হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে জাকারিয়া তখন প্রথম হয়েছিল।

২০১৮ সালে দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকা বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন জাকারিয়া। ২০২০ সালে আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকা বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি।

গত ২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন মোহাম্মদ জাকারিয়া। জাকিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সর্বদা নজরদারির মধ্যে রাখতে পেরেছি বলেই মহান রাব্বুল আলামিন আজ আমার মনের আশা পূর্ণ করেছেন।

জাকারিয়ার মা জানান, ছেলে হিসাবে কখনও আমার কাছে অতিরিক্ত কোনো আবদার করেনি। যখন যেভাবে পেরেছি ওর মন জয় করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিল সেকারণে স্থানীয়রাও ওকে দারুণ পছন্দ করতো। আমি