নিউজ২৪লাইন:
ইয়ামিন কাদের নিলয়
বিশেষ প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের আলোচিত ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী কাউন্সিলর ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বর্বরোচিত নৃশংস হামলার বিচার ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী শাহাবুদ্দিন শেখের পরিবার। বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে শরীয়তপুর জেলা শহরে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী কাউন্সিলর ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বর্বরোচিত নৃশংস হামলার লোমহর্ষক বর্ণণা দেন ভুক্তভোগী শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগমক।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে উৎখাতের জন্য ইয়াবা কারবারি ফরিদ শেখ ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তারা আমাদের ছেলে-মেয়ে সহ সবাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করেছে। ফরিদ শেখ আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে তাহমিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। হাতে পায়ে ধরেও আমরা সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা থেকে বাঁচতে পারিনি।
তারা আরও বলেন, ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বসতবাড়ি থেকে উৎখাতের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ নিয়ে তারা একাধিক বার আমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসী ফরিদ শেখের ভয়ে আমরা এখন এলাকা ছাড়া। আমাদের ছেলে-মেয়েরা আতংকের মধ্যে রয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা বাড়িতে যেতে ভয় পাচ্ছে। আমরা ইয়াবা কারবারি ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে চাই। আমরা ফরিদ শেখের বিচার চাই। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহায়তা চাই। আমরা জাতির বিবেক সংবাদিক ভাইদের সাহায্য চাই।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড স্বর্ণঘোষ গ্রামের আবুল হাসেম শেখের ছেলে ফরিদ শেখ ইয়াবা ব্যবসা করে এখন কোটি টাকার মালিক। ইয়াবা ব্যবসা করে তিনি শরীয়তপুর শহরের কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তুলেন আলিশান বহুতল ভবন। আলোচিত এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সহ একাধিক মামলা। একাধিক বার ইয়াবা সহ ধরা পড়ে জেলও খেটেছেন তিনি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে লেবাস পাল্টাতে শুরু করেন বহুরূপী ফরিদ। লম্বা দাড়ি রেখে, লম্বা পাঞ্জাবী আর টুপি পড়ে রীতিমতো বনে যান এক বিরাট পরহেজগার। তার নামের সাথে হাজী শব্দটিও দেখা যায় ইদানিং। গত পৌরসভা নির্বাচনে ৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে ক্ষমতা আর টাকার জোরে জিতে যান আলোচিত ইয়াবা কারবারি ফরিদ শেখ।
ফরিদ শেখ লেবাস পাল্টিয়ে কাউন্সিলর হলেও পাল্টায়নি তার পুরনো চরিত্র। দীর্ঘদিন যাবত তার এক দরিদ্র প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার পরিবারকে উচ্ছেদ করে জায়গা সম্পত্তি ভোগ দখলের পায়তারা করে আসছে ফরিদ। ইতিপূর্বে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুরুতর আহত করেছে সে। ওই ঘটনার সুবিচার চেয়ে ফরিদ শেখের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন শাহাবুদ্দিন। মামলা করার কারনে শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবারের উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইয়াবা কারবারি ফরিদ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১৮ আগষ্ট) বেলা ১১টার দিকে আবারও শাহাবুদ্দিন শেখ ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায় ইয়াবা কারবারি ফরিদ শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসীরা শাহাবুদ্দিন শেখ, শাহাবুদ্দিন শেখের প্রতিবন্ধী মেয়ে তাহমিনা আক্তার, লিমা আক্তার, ছেলে তালহা শেখ ও স্ত্রী হাজেরা বেগমকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। সন্ত্রাসী ফরিদ শেখ তাহমিনা আক্তারের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরি কোপালে তাহমিনা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাহমিনার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সন্ত্রাসী ফরিদ শেখ ও তার বাহিনী চলে যায়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে অসহায় পরিবারটির সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। তাহমিনার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। অসহায় পরিবারটির কোন নিকটাত্মীয় না থাকায় ছোট মেয়ে লিমা আক্তার ও ছেলে তালহাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে বাবা শাহাবুদ্দিন শেখ ও মা হাজেরা বেগমকেই আহত অবস্থায় বড় মেয়ে তাহমিনাকে নিয়ে ঢাকা যেতে হয়। এ ঘটনার দুইদিন পর (গত ২০ আগষ্ট) শাহাবুদ্দিন শেখ বাদী হয়ে সন্ত্রাসী ফরিদ শেখকে প্রধান আসামি সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামী করে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলর অন্য আসামীরা হলেন, আবুল হাসেম শেখ, আবুল হাসেম শেখের ছেলে খবির শেখ, জাকির শেখ, রবিন শেখ ও খালেক শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার।
এ বিষয়ে জানার জন্য ফরিদ শেখের মোবাইলে কল করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ‘আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো.সাইফুল হক বলেন, মাদক ও সন্ত্রাসের সাথে যারাই জড়িত থাকবে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে। যত ক্ষমতাধরই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।