মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উপমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তর তারাবুনিয়ায় ৩৫০ শীতবস্ত্র বিতরণ

নিউজ২৪লাইনঃ

আমান আহমেদ সজিব ঃ
ভেদরগঞ্জ শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানাদীন উত্তর তারাবুনিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি’র নির্দেশে ৩৫০ জন অসহা,শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে সখিপুর থানা আওয়ামীলীগ এর ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইউনুস আলী মোল্লার সভাপতিত্বে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

এসময় উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইউনুস আলী মোল্লা মহান বিজয় দিবসে সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামান করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করে প্রতিবছরের মত এবছরও শীতবস্ত্র (কম্বল) পাঠিয়েছেন। আজ মহান বিজয় দিবস সেই উপলক্ষে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি মহোদয়ের নির্দেশনায় উত্তর তারাবুনিয়ায় ৩৫০
অসহা,শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশায় একমাত্র ভরসা শেষ হাসিনা। তিনিই এগিয়ে এসেছেন ও আসবেন জনগণের জন্য।

এসময় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাঝী, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (সচিব) মেহেদী হাসান সিপন বেপারী, পরিষদের সদস্য বৃন্দ ও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ সভাপতি স্বপন আসামী ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম প্রধানীয়াসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

সখিপুরে রাতের আধারে বেকুমেশিন দিয়ে কাটানো হচ্ছে মাছের খামার, দিশেহারা কৃষকরা

নিউজ২৪লাইনঃ

আমান আহমেদ সজিব
শরীয়তপুর থেকেঃ
শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিগত বছরের ন্যায় আবারো শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুরখনন। তবে পুকুরখনন সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবেই ম্যানেজের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে এই খননযজ্ঞ।

বৃহস্পতিবার(১৫ ডিসেম্বর) বিকালে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় তিন ফসলি জমিতে শুরু হয়েছে মাটি বিক্রির জন্য পুকুরখনন। চোর-পুলিশ খেলায় বিভিন্ন কারণে হেরে যাচ্ছে পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসন। এতে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে আবেদন দিয়েও ফলাফল শূণ্যই থেকে যাচ্ছে। প্রেক্ষিতে একদিকে আবেদনকারিরা পড়ছে বিপাকে, অন্যদিকে খননকারিরা হচ্ছে উৎসাহিত। এতে জেলায় কমেছে খাদ্য উৎপাদন, হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিক মাছের খামার বেড়েছে বহুগুণ। কমেছে চারণভূমি, সংকট বেড়েছে পশু খাদ্যের। মাছের খামার করার কারণে গত দুই বছরে ধানের জমি কমেছে সাড়ে তিন হাজার একরের বেশি। ধানের উৎপাদনও কমেছে।

মূলত ধানের দাম পড়ে যাওয়া এবং উপযুক্ত দাম না পাওয়ার কারণে কৃষকেরা নিজেরা মাছের খামারের দিকে যাচ্ছেন কিংবা খামারের জন্য ভাড়া দিচ্ছেন। জমির উপযুক্ত ভাড়া না পাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রথমে কিছু জমিতে খামার করে পরে পাশের জমিও খামারের জন্য ভাড়া দিতে কৃষকদের বাধ্য করছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩২০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে ৩ হাজার ৮৪০ একরে নেমে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরও ক​মে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৮০ একর। উৎপাদন কমেছে ৪ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন ধান।

কৃষকেরা জানান, ধানের দাম কম থাকায় অনেক জমির মালিক এক ফসলি জমি মৎস্য খামারিদের কাছে ভাড়া দেন। মৎস্য খামারিরা একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ একর জমি নিয়ে একেকটি মৎস্য খামার তৈরি করেন। সেখানে অনেক ক্ষুদ্র কৃষকের জমিও থাকে। ওই কৃষকদের তখন বাধ্য হয়ে খামারিদের কাছে ধান উৎপাদনের জমি ছেড়ে দিতে হয়। কৃষকেরা প্রতি শতাংশ জমি বছরে ভাড়া পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তালিকা কান্দি মৌজার সাড়ে ৪ একর জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ওই এলাকার কিছু ব্যক্তি তাঁদের ওই জমি মাছের খামার করার জন্য আবুল কালাম হাওলাদারের কাছে ভাড়া দেন। এলাকার ৪৪ জন কৃষক তাঁদের ৮০ একর জমি মৎস্য খামার করার জন্য ভাড়া দেননি। আবুল কালাম হাওলাদার ওই জমির পাশের ভাড়া না দেওয়া জমিতেও গত ৫ ডিসেম্বর থেকে পুকুর কাটার কাজ শুরু করেছেন।

তালিকা কান্দি গ্রামের বকুল বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ওই জমিটুকুই আমার পরিবারের শেষ সম্বল। আবুল কালাম দখল করে মাছের খামার বানাচ্ছেন। কে আমার জমিটি উদ্ধার করে দেবে? এ জমিটি হাতছাড়া হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হবে। জমিতে ধান উৎপাদন না করতে পারলে মাছ দিয়ে কী করব? ভাত ছাড়া শুধু মাছ খেয়ে তো বাঁচতে পারব না। মন্ত্রী এনানুল হক শামীমের কাছে
ও এর বিচার চাই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আবুল কালাম হাওলাদারের কাছে জানতে গেলে তার পক্ষে ভেকু মেশিনের মালিক রাশেদ মিয়াকে একাদিক বার কল করলে, কলটি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেলে কলটি কেটে দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই আইনে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাগুলোকে অনাবাদি কিংবা এক ফসলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, গত কয়েক বছরে শরীয়তপুরে প্রায় দ্বিগুণ মাছ উৎপাদন বেড়েছে। গত ১০ বছরের মধ্যে পুকুরও বেড়েছে কয়েক গুণ। মাছ চাষ করে অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ চাষের জন্য চাষিদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে জেলায় মাছ এখন উদ্বৃত্ত থাকছে। যা দেশের বিভিন্ন জেলা এবং দেশের বাইরে রফতানি করে বিপুল অর্থ আয় হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপসহকারি মামুন হোসেন বলেন, সহজ-সরল কৃষকেরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে মৎস্য খামারিদের কাছে জমি ভাড়া দিচ্ছেন। কৃষক যদি নিজে মাছের খামার করতেন, তাহলে সমস্যা হতো না। বরং লাভবানই বেশি হতেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি জমি ভাড়া নিয়ে মাছের খামার করছেন। ফলে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। বিনিময়ে জমির যে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে তাও সামান্য।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমামুল হাফিজ নাদিম বলেন,জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার এখতিয়ার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নেই। এখানে কৃষি জমি খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আইনভঙ্গ করা হচ্ছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।