শরীয়তপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি ২০২৩ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি

নিউজ২৪লাইনঃ
নুরুজ্জামান শেখ শরীয়তপুর থেকে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শরীয়তপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ২০২৩ পালিত। শুক্রবার ১০ মার্চ ২০২৩ সকাল দশটা পনেরো মিনিটের সময় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে “স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয়, দুর্যোগ প্রস্তুতি সবসময়” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়। জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে র‍্যালিটি কোর্ট চত্বর প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন রিয়াজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব( সার্বিক) শরীয়তপুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেটগণ এবং জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোঃ সেলিম মিয়া, জেলা স্কাউটের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জানে আলম মুন্সি সহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন, জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ -পরিচালক সেলিম মিয়া, জেলা স্কাউটের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জানে আলম রহমান সহ আরো অনেকেই। জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার সভাপতি জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও সচেতনামূলক সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভার সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

শরীয়তপুরে নবনির্মিত তিন থানার শুভ উদ্বোধনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

নিউজ২৪লাইন:

নুরুজ্জামান শেখ শরীয়তপুর থেকে।

শরীয়তপুর জেলার তিন থানার নবনির্মিত ভবন শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট থানার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জন্য যেভাবে কাজ করে চলেছেন তাতে শান্তির জন্য তাকে নোবেল দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কেন তাকে দেওয়া হয়নি তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তার বাস্তবায়ন করে চলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি গুলিস্তানের সিদ্দিক মার্কেটের আগুন লাগার বিষয়টি আমাদের গোয়েন্দা বিভাগসহ বিভিন্ন তদন্ত কার্য চলমান। তদন্তের পরে আমরা জানাতে পারবো এক্সক্লুসিভ (বিশেষ) কোনো কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটলো না গ্যাস অথবা শর্টসার্কিটের থেকে হয়েছে।’

খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী দয়া করেছেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে বাড়িতে থেকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বজনরা আবারও চিকিৎসার মেয়াদ উত্তীর্ণ করার জন্য আবেদন দিয়েছেন। সেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। তারপরে বলা যাবে নতুন করে আবেদন গৃহীত হবে কি না।’

আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, সামনের জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-৩ আসনের এমপি নাহিম রাজ্জাক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল হক। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জেলা ও উপজেলার প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’ ইতিহাসের কালচেতনায় অভিযাত্রা


সুলতানা দিল আফরোজ পূরাণ- আশ্রিত ও ইতিহাস- ঐতিহ্যমগ্ন ভ্রমণপিপাসুদের একজন। আত্মার বিকাশ ঘটাতে বেশ পটু। স্মৃতিপটে এতকাল জমে থাকা গভীর রেখাপাতের রেশগুলো বহুকাল পর ইতিহাসের কালচেতনার মধ্যে সুলতানার অভিযাত্রা। মৃত্তিকা
সংলগ্ন বাস্তবতার বিচরণে প্রয়াসী। সেই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাঁর তৃতীয় গ্রন্হ ‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’। লেখকের সাবলীল লেখনীতে উঠে এসেছে সিলেট জনপদের ইতিহাস,ঐতিহ্য আর দর্শনীয় স্থানের প্রাঞ্জল বর্ণনা। পাঠক এই ভ্রমণের বর্ণনায় একাত্ম হয়ে তাঁর মানসপটে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন সেই সময়ের সিলেটকে। অনুভব করতে পারবেন প্রকৃতির রূপবৈভব নিঙড়ে নিঙড়ে আস্বাদন ও সৌন্দর্যবন্দনা।
এই সময়ের কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজের আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্হ প্রাণে- ঘ্রাণে, বিষয়- আশয়ে বাংলা সাহিত্য এক অভুতপূর্ব ভ্রমণকর্ম এবং আন্দোলিত জীবনের দীঘল ছায়ানামা প্রশান্ত সরোবর। স্মৃতিগুলো উপমায় উৎপ্রেক্ষায়, অনুপম চিত্রকল্পে- বিচুর্ণ রূপকল্পে- অনাস্বাদিত শব্দবন্ধে- অতুল বুননে- প্রেমার্ত চয়নে বিস্ময়করভাবে মনোমুগ্ধকর, চিত্তাকর্ষক, হৃদয়গ্রাহী ও অপূর্ব সৃজন মমতায় সিক্ত- যা এক কথায় অসাধারণ মানদন্ডের প্রতিটা ক্ষেত্রে সমৃদ্ধতায় অনন্য, চেতনার বহুমুখী সড়কে ফুটিয়ে তুলেছেন অতীতের দিনগুলোর জ্বলজ্বল করা স্মৃতির অম্লান রাজত্ব। ঐতিহ্যস্নাত জনপদের সাতকরা ও প্রাণের সিলেট এর নাড়ীর বাঁধন ফুটে ওঠেছে তাঁর দীর্ঘ বুননে কুশলী অন্তর্বয়নে। যার অভিজ্ঞতার আপাতবাস্তব সত্যের সমীকরণে তৈরী করেছেন সহজাত সন্মোহন- যা স্মৃতির পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ধ্বনিময় ব্যঞ্জনার প্রাচুর্যকে প্রাণবন্ত করে তুলে পাঠকের শ্রুতিসত্তায়। যেখানে শব্দপ্রবাহ সুরমা নদীর মতো মুখর ও বহুমাত্রিক ভাবে- চিত্রে পরিপূর্ণ, যেন উপচে পড়া ও চমকপ্রদ সুরমা নদীর তীর, যার পাশে শাহজালালের পবিত্র মাজার।
ইত্যাকার নানান অনুভব ও অভিজ্ঞতার বহুবর্ণিল আলোছায়ায় বেড়ে ওঠে কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজের ‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’ গ্রন্হে। তিনি সিলেটের প্রাচীন শেকড় সন্ধান করেছেন অহর্নিশ আর সিলেট জনপদের ধামাইল গানগুলোও কেবলই শেকড়ের দিকে অভিযাত্রা, কখনো সখনো শোভাযাত্রা সঙ্গীত প্রেমীদের প্রতি। লেখিকা প্রকৃতির মোহময় রূপ সার্থকভাবে তাঁর গ্রন্হে ছাড়িয়ে দিয়েছেন দেশ কালের চৌকাঠে। অতিক্রম করেছেন সীমাকে। দেখেছেন নিসর্গ কিভাবে মুদ্রিত হয় হৃদয়ের অদৃশ্য ভ্রূণে।
কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজ শব্দচয়ন ও ঐতিহ্যের দিকে যথেষ্ট সচেতন। বুননের মাধ্যমে তুলে এনেছেন সিলেট অঞ্চলের আদিবাসীদের কঠিন জীবন-যাপন, সাংস্কৃতিক জীবনধারা পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিলেট ভ্রমণের বিষয়ও বাদ দেন নি। বাঙালির রসনা বিলাস বিশ্ব পরিচিত তাই মাছ এবং মাংস রান্নায় সাতকরা ব্যবহার ও বিবিধ ঐতিহ্যবাহী খাবারের বিভিন্ন স্বাদও পাঠে অনুভব করা যায়। ইতিহাস- ঐতিহ্য,ধর্মীয় বৈচিত্র্য আর পর্যটনে অনন্য সিলেট অঞ্চল কে লেখিকা তাঁর সমস্ত লেখকসত্বা দিয়ে এমন ভাবে ফুটে তুলেছেন যে কোন পাঠক হারিয়ে যাবে সিলেটের পাহাড়, টিলা ও সমভূমিতে। যেখানে এক সময় হারিয়ে গিয়েছিলেন রবার্ট লিন্ডস।
এইখানে লেখক দৃষ্টিপাত জীবনমূখী দর্শনের আশ্রয়ে নিবিষ্ট হয়েছে। জীবন মৃত্যুর চরম সত্যকে সামনে রেখে সৃষ্টির সৌন্দর্যকে দেখালেন। মাইলের পর মাইল সবুজ চা বাগান, হাওরবাসীর জীবনে অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও নিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজ।
সুলতানা দিল আফরোজ শব্দচয়নের দিকে যথেষ্ট সচেতন। ভ্রমণকে লাবণ্যময় করে তুলতে তিনি শব্দ, উপমা, রূপের ব্যবহারে সার্থক এবং সফল এ ক্ষেত্রে। মানবিক পরিত্রানের পথ অনুসন্ধানে তিনি হয়েছেন ত্রিশঙ্কু। সিলেটের অতীত যেমন ইতিহাস বিজড়িত! তেমনি সিলেটের নামকরণেও আছে ধর্মীয় ইতিহাস সমৃদ্ধ। সিলেট ভ্রমণে গিয়ে লেখক উপলদ্ধি করেছেন, সমুদ্রের জোয়ারভাটা আর নোনা জলের উপর বেঁচে আছে অজস্র প্রাণ । তাই ‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’ চিত্রকল্প যেমন ভিন্ন মাত্রায় এসে হাজির হয় তেমনি স্মৃতির শব্দ ও পদের ব্যবহারও ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। তিঁনি বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ও অব্যয় পদকে নতুন নতুন রূপ দিয়েছেন যা ফুটে ওঠে শতবর্ষে। ফলে তাঁর গ্রন্হখানি পলকেই হয়ে ওঠে স্হানিক থেকে বৈশ্বিক।
সমকাল নয়, মহাকালই তার চৌম্বক নিশানা। এমনিতেই গ্রন্হের ভাবনাগুচ্ছের বহুরৈখিক ওমে ডানা মেললো এই লেখকের সফল ভ্রমণচাষ ‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’। ধ্রুপদী এই গ্রন্হের প্রতিটি স্মৃতির গতিমান পদক্ষেপ অপূর্ব ঘ্রাণ হয়ে প্রত্যাশিত পথের চিহৃ রেখে যাবেন নিশ্চয় বাংলার সাহিত্যে। লেখকের প্রজ্ঞা আর জীবনবোধ এই বইটিকে করে তুলেছে অনন্য। আশা করছি বইটি পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।

লেখক


কবি ও প্রাবন্ধিক নাসের ভুট্টো