মুন্সীগঞ্জে অটো ও মিশুক ছিনতাইয়ে হাতিমারা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার-২

সুজন বেপারী :
স্টাফ রিপোর্টার – মুন্সীগঞ্জে অটো ও মিশুক ছিনতাই দিনে দিনে বেড়েই চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সাড়ে তিনটায় একটি অটো ভাড়া করে। অটোটির ড্রাইভার আল আমিন (২২) ছিনতাইকারীদের উপর্যপূরি ছুরির আঘাতে নিহত হয়।

পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রেফিংয়ের মাধ্যমে জানা যায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লার ছনগাও গ্রামের মতিউরের ছেলে মো: নাইম উদ্দিন ও রংপুরের মোংলাকুটির রাজা মিয়ার ছেলে মো: হানিফ মিয়া অটো ছিনতাই করে। যার অটো ছিনতাই করে তার নাম আল আমিন (২২) পিতা: আবু তালেব, মাদারীপুরের লক্ষীপুরে বাড়ি।

১৫ মার্চ যাত্রীবেশে বিকাল আনুমানিক ১৫:৩০ ঘটিকায় মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে মুক্তারপুর ব্রিজ হয়ে টংগিবাড়ী থানাধীন আপনি বাজার দিয়ে দিঘীর পাড় বাজারে যায়। সন্ধ্যার পর দিঘীরপাড় বাজার হতে আলদির উদ্দেশ্যে রওনা করে বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের আজমপুর প্রাপ্তাহ উপরে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে অভিযুক্ত নাঈম ও হানিফ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার কথা বলে অটোরিক্সাটি থামায়। এ সময় অটোচালক (ডিসিষ্ট) আল-আমিনও তাদের অটোরিক্সা থেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার উদ্দ্যশ্যে নামে। ডিসিস্ট আল-আমিন অটোরিক্সা থেকে নামার পরক্ষণেই অভিযুক্ত হানিফ সুইচ গিয়ার (চাকু) গলায় ধরে অটোরিক্সাটি নিতে চাইলে ডিসিস্ট আল-আমিন বাধা প্রদান এবং চিৎকার করে। এসময় হানিফ তাকে চাকু দিয়ে আঘাত করলে সে নিচে পড়ে যায়। পরবর্তীতে নাঈম তাকে খুন করার কথা বলে জাপটিয়ে ধরলে হানিফ এলোপাতাড়ি আঘাত করে এবং আল-আমিন পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে আশাপাশ থেকে মানুষ এগিয়ে আসতে থাকলে অভিযুক্তরা অটো নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ডিএমসিতে পাঠায়। ডিএমসিতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল আমিনের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর পরই হাতিমারা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত শুরু করে। ঘটনা সংক্রান্ত আলামত জব্দের পাশাপাশি ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের নিমিত্ত ঘটনাস্থলের আশপাশ এবং সম্ভাব্য সকল রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে। ঘটনাস্থল থেকে অটোরিক্সা এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডিসিস্টের মোবাইল উদ্ধার করা হয়। হাতিমারা তদন্ত কেন্দ্রে আইসি ইন্সপেক্টর অমর চন্দ্র দাস এবং এসআই (নিরস্ত্র) কাজি এনামুল হক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করত। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরক্ষণেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের উদ্দ্যশ্যে অভিযান পরিচালনা করে এবং হত্যাকান্ড সংঘটনের ০৭ ঘন্টার মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন দেওভোগ নামক স্থান হতে ঘটনায় জড়িত নাঈম ও হানিফকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং দেখানোমতে ঘটনাস্থল হতে হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করে হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্তরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় সরাসরি যুক্ত থাকার স্বীকার করে। গ্রেফাতারকৃত অভিযুক্ত হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে ০১ টি মামলা রয়েছে।

বর্ণিত ব্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে মুন্সীগঞ্জ থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে যার নং- ৪০, তারিখ ১৬/০৩/২৩ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি। ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটন সহ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্তকরত পরবর্তীতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।

শরীয়তপুরে মেধার যোগ্যতায় মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশের চাকরি পেল ৪৪ জন চাকরিপ্রার্থী

নিউজ২৪লাইন:

নিজস্ব প্রতিবেদক: শরীয়তপুরে মেধার যোগ্যতায় মাত্র ১২০ টাকায় বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন জেলার ৪৪ জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। কোনো ধরনের দালালি বা সুপারিশ ছাড়া নির্বাচিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রার্থীরা। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪৪ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬ জন, পোষ্য কোটায় ৩ জন, আনসার কোটায় ৩ জন, মহিলা কোটায় ৫ জন এবং সাধারণ কোটায় ২৭ জন। নির্বাচিত হয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান অনেকেই।

চাকরি পাওয়া এক কৃষকের ছেলে বলেন, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ১২০ টাকার বিনিময়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদের এ চাকরি পাব। গত বছরও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমি উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কিন্তু আশা ছাড়িনি। যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন কৃষক। আমি টাকা দেব কীভাবে। কিন্তু মনের জোরে এবং শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মো: সাইফুল হক স্যারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকায় আমি নির্বাচিত হয়েছি। এজন্য আমি পুলিশ সুপার স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

চাকরি প্রাপ্ত মেয়ে প্রার্থী বলেন, আমি পুলিশে দাড়ানোর পূর্বে অনেকেই বলেছিল, পুলিশে চাকরি নিতে ১০’লক্ষ টাকা লাগে। কিন্তু আমি মেধার যোগ্যতায় মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পেয়েছি। যোগ্যতা ও মেধা যাচাই করে চাকরি দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারসহ নিয়োগবোর্ডে থাকা পুলিশের সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

জিপিএ-৫ পাওয়া এক প্রার্থী বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এক সন্তান। আমার বাবা মারা গেছেন। আমি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি এবং কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন করি। মনের জোর ও পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছি এবং পরীক্ষায় ১ম হয়েছি। চাকরি করে দেশের সেবা করবো। সুযোগ পেলে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাব।

শরীয়তপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল হক বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ০২ মার্চ পর্যন্ত মোট ৭টি ইভেন্টে ১ম পর্বে ৩১৮ জনকে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৯৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরে ১৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৪৪ জন। তিনি জানান, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। এদের মধ্যে অনেকে কৃষক, ভ্যানচালক, অটোচালক, এতিম এবং কেউ দিনমজুরের ছেলে রয়েছেন। মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে তাঁদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, কোনো ধরনের তদবির তোয়াক্কা না করে যে সব প্রার্থী শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, যাঁরা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধু তাঁদেরকেই নির্বাচিত করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম।

নিয়োগবোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর হায়দার শাওনসহ প্রমূখ কর্মকর্তাগণ।