ফরিদপুরে কবরস্থান ও ঈদগাহের বরাদ্দকৃত পুকুরের মাছ ধরতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদর উপজেলার ১০ নং কৈজুরী ইউনিয়নের পুর্ব পাড়া তুলা গ্রামে একটি সরকারী পুকুরের মাছ চাষের আয় থেকে কবরস্থান ও ঈদগাহ নামক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমুলক কাজের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে বরাদ্দ করা হলেও ঐ পুকুরের মাছ ধরতে গিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠান কমিটির সদস্য বৃন্দ স্থানীয় একটি মহলের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে জেলেদের জাল আটক করেও রেখেছে তারা। এ নিয়ে কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির সদস্যবৃন্দ কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, কবরস্থান ও ঈদগাহের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের পর গত বছরের কোরবানী ঈদের পুর্ব থেকে মাছ চাষ করে তা বিক্রির পর আরো ২ মন ছোট পোনা পুকুরে চাষ করে তা গতকাল বুধবার ভোড় ৫ টায় ঐ মাছ ধরতে গেলে এলাকার কয়েক জন পরিচালোনা কমিটির সদস্যদের বাধা দিয়ে জাল দড়ি ও অন্যান্য মালামাল আটক করে রাখে। এ বিষয়ে কবরস্থান ও ঈদগাহ পরিচালোনা কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করে জানান অত্র প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন একটি সরকারি পুকুরের আয় দিয়ে এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করে আসছিলো তারা। এর আগে এই দুই প্রতিষ্ঠান পরিচালোনা কমিটির সভাপতি ও পাশ্ববর্তি কুরবানিয়া চিশতিয়া জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুরবান এর নিয়ন্ত্রনে থাকা ২ টি সরকারি পুকুর থেকে আয়ের সম্পুর্ন অংশই শুধু মাত্র তার মসজিদ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করার চেষ্টা করতেন। এদিকে এই কবরস্থান ও ঈদগাহের মাঠটি অনুন্নত থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কবরস্থান ও ঈদগাহের ৩১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি তৈরি করে কুরবান শেখকে ঐ পুকুরটি কবরস্থান ও ঈদগাহের অনুকুলে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অবগত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ বছর ধরে কবরস্থান ও ঈদগাহ পরিচালোনা কমিটি পুকুরে মাছ চাষ করে ১ম বছর ৫৬ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করে কবরস্থান ও ঈদগাহের উন্নয়ন মুলক কাজে ব্যয়সহ আয়ের কিছু অংশ দিয়ে পুনরায় ঐ পুকুরে মাছ চাষ করে। এ বছরে অর্থ্যাৎ ২২ শে মার্চ বুধবার ভোড় রাতের ঐ মাছ ধরতে গেলে আকস্মিত ভাবে কুরবান এর কয়েকজন লোক বাঁধা প্রয়োগ করে জাল দড়ি আটক করে রাখে বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা অভিযোগে আরো জানান, এই ৩ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ২ টি সরকারি পুকুরের ১ টি কুরবানিয়া চিশতিয়া জামে মসজিদের এবং অপরটি কবর স্থান ও ঈদগাহের জন্য বরাদ্দ করে ঈমান শেখকে সভাপতি ও শহিদ শেখকে সাধারন সম্পাদক করে মোট ৩১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করে দেন ইউপি চেয়ারম্যান। তারা বলেন যদিও আমরা ইনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যানের অনুুমতি সাপেক্ষে গত ২ বছর ধরে পুকুরের লভ্যাংশের পুরোটাই কবরস্থান ও ঈদগাহের উন্নয়নমুলক কাজে ব্যবহার করে আসছি। বর্তমানে কুরবান একতরফা সভাপতি দাবি করে এই পুকুরের সম্পুর্ন লভ্যাংশই তার নামকৃত মসজিদে ব্যয় করার পায়তারা করছে। এমনকি কুরবানকে ইউপি চেয়ারম্যান নতুন কমিটির বিষয়টি অবগত করা সত্তে¡ তার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পুকুরটি নিজ দখলে রাখার চেষ্টা করেছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এ নিয়ে একাধীক সুত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জি: খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর সৌজন্যে ফরিদপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে তুলাগ্রামের এ কবর স্থানটির উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। ঐ সময় কুরবান কে সভাপতি, ঈমান শেখ কে সাধারন সম্পাদক করে কবরস্থান ও ঈদগাহ পরিচালোনা কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে কুরবান এর অনুকুলে সরকারি দুটো পুকুরের আয় ব্যায়ের হিসাব নিকাশ নিয়ে এলাকা বাসীর মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হলে বিতর্কে পরে কুরবান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুরবান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে গত ৪/৫ বছর আগে থেকে এই পুকুরের সম্পুর্ন দেখভাল করে আসছি। তবে গত ২ বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান একটি বিষয় নিয়ে ফোন করলে কবর স্থান সংলগ্ন পুকুরটি আমাকে মৌখিক ভাবে ছেড়ে দিতে বলে। এর পর থেকে আমি আর ঐ পুকুরের কোন মাছ বিক্রি বা কোন কিছুই করিনি। তবে গত বুধবার ভোড়রাতের দিকে একদল মাছ ধরতে আসলে এলাকাবাসী তাদের আটক করে আমাকে খবর দেয় এবং তাদের সাথে থাকা জাল দরি আটক করে রাখে। এ সময় তিনি দাবি করে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিক ভাবে পুকুরটি একজন মেম্বারের জামিনে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তিনি কোন লিখিত দেননি আমাকে। এমনকি ঐ মেম্বারও আমার নিকট কখনো আসেনি। এ সময় নতুন কমিটি কর্তৃক গত বছরের মাছ ধরার বিষয়টি জানা সত্তে¡ বাধা না দেওয়ার কারন জানতে চাইলে, কুরবান এর কোন সদুত্তর না দিয়ে প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ইকু মিয়া এর মুঠোফোনে ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী পুকুরটি সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে উভয় পক্ষের মতামত ভিত্তিতে তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।