নিউজ২৪লাইন:
শরীয়তপুর থেকে
মিরাজ পালোয়ান:
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালে এই কবিতা লিখে গেলেও নারীকে পিছিয়ে থাকতে হয়েছে সব সময়। একুশ শতকে পুরুষের পাশাপাশি বেড়েছে নারীর ক্ষমতা। নারী এখন পুরুষের পাশাপাশি সকল কাজে অংশগ্রহণ করে। শহরের চিত্র বহু আগে পাল্টে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের নারীরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের নারীরাও এখন এগিয়ে চলছে সমান তালে। তারই একজন নারী নাছরিন আক্তার। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি বাজারে সে বাবার সাথে সেলাইয়ের কাজ করে উপার্জন করছে টাকা। নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি সংসারকেও অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা নাছরিন আক্তারের গল্পটা একটু ভিন্ন।
বুধবার (৮ নভেম্বর) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের লাউখোলা বাজারে নাছরিন আক্তারকে কাপড় কেটে সেলাই করে জামা তৈরী করতে দেখা গেছে।
নাছরিন আক্তার (২৩) জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের জয়সাগর গ্রামের বাবা আবুল কাশেম ফকির ও রেনু বেগম দম্পত্তির ছোট মেয়ে। সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
লাউখোলা বাজারের দোকানদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাছরিন আক্তারের বাবা কাশেম ফকির দীর্ঘদিন ধরে লাউখোলা বাজারে জামা তৈরীর কাজ করেন। চার মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে সংসারে তার অনেক খরচ। একদিকে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, অন্যদিকে সাংসারিক খরচ। সবকিছু মিলিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার মেয়ে নাছরিন আক্তার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখন বাবার সেলাই কাজে সহযোগিতা করে উপার্জন করে। মেয়েও বাবার সাথে সমান তালে কাজ করেন বলে এখন উপার্জন বেশি হয়। তারা বেশ ভালোই আছেন।
ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ নামে একজন বলেন, নাছরিন আক্তার খুব পরিশ্রমি মেয়ে। কাশেম ফকির বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তেমন কাজ করতে পারেন না। তার দোকানের জামা তৈরীর অর্ডারগুলো এখন নাছরিন আক্তারই করে রাখে। নাছরিনের মত মেয়ে পাওয়া যে কোনো বাবার জন্য সৌভাগ্যের। মেয়েটা একই সাথে পড়াশোনাও করে। তার এমন পরিশ্রমে গ্রামের অন্য মেয়েরাও উৎসাহি হচ্ছে।
নাছরিন আক্তারের বাবা আবুল কাশেম ফকির বলেন, নাছরিন আক্তার ছোটবেলা থেকেই অন্যরকম মেয়ে। দোকানে আমার কাজ করতে কষ্ট হয় বলে সে আনসার বাহিনী থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখন আমার দোকানের অর্ডারকৃত জামাগুলো তৈরী করে দেয়। এতে আয় বেশি হয়। মেয়েটা আমার সাথে কাজ করার কারণে এখন আর সংসার খরচ করতে তেমন কষ্ট হয় না। নাছরিনকে নিয়ে আমি গর্বিত।
নাছরিন আক্তার বলেন, পরিবারে আমরা ভাইবোন সংখ্যা বেশি বলে ছোটবেলা থেকেই বাবার কষ্ট দেখতাম। ছোট্ট দোকানের উপার্জন দিয়ে বাবা আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন বড় হয়েছি, বাবাকে তার কাছে সাহায্য করছি। হঠাৎ একদিন খবর পেলাম বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী মেয়েদেরকে সাবলম্বী করার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ দিবে। পরে আমি ওই ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে মেয়েদের সব রকম কাপড় সেলাইসহ নকশি কাঁথা তৈরী করতে শিখেছি। সেই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এখন আমি বাবাকে সাহায্য করতে পারি। বাবার বেশি টাকা নেই বলে আমরা বড় দোকান দিতে পারছি না। কাজ করে উপার্জন করে ভবিষ্যতে বড় দোকান দেব। সবার কাছে দোয়া চাই আমি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মইনুল ইসলাম বলেন, আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক একেএম আমিনুল হকের নির্দেশনায় নারীদেরকে সাবলম্বী করার লক্ষ্যে নারীদেরকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে আনসার বাহিনী। নাছরিন আক্তার সেই নারীদের মধ্যে একজন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সেলাই কাজে সে সহযোগিতা করে। এসব নারীকে আমরা মোটিভেশন দিয়ে সমাজের সব প্রতিকূলতাকে জয় করে সামলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাই। নাছরিন আক্তাররা এগিয়ে যাবে, এই লক্ষ্যেই কাজ করে আনসার বাহিনী।