বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর ও “কবিতা সংগ্রহ” — নাসের ভূট্টো


নাসের ভুট্টো, কবি ও প্রাবন্ধিক; কবি আসিফ নূরের কাব্যমানসের বৈশিষ্ট্য সমকালিন কাব্যসতীর্থ থেকে পৃথক। আধুনিক কবির রোমান্টিক গীতিধর্মিতার চেয়ে মহা কাব্যিক ক্লাসিক ধৈর্য তাঁর মানস গঠনে বৈশিষ্টতা দিয়েছে। তাই প্রতিটি গ্রন্থের জন্য একটি পৃথক এবং সামগ্রিক চেতনা ধারণে আধুনিক বাংলা কাব্য পরিত্যাগ করেছিলো, আসিফ তা পুর্নবিবেচনা করেছেন। আসিফ নূর কবিতা মৌল প্রবণতা তাঁর ইতিহাস চেতনা মহাকালের ইশারা থেকে উৎসারিত যে সমাজ সময়চেতনা যে সময়ের মধ্যে সংস্থাপিত মানুষের জৈবিক অস্তিত্ব এবং পরিণতি লিপিবদ্ধ করা। আসিফ যে কারণে আলাদা সেটি হল- এ জনপদের আদিম রূপটি কবিতার সাহায্যে তিনিই ফুটিয়ে তুলেছেন। যে জনপদের ভয়াল শ্বাপদ রূপের পাশাপাশি সম্ভাবনাও তিনি আবিষ্কার করেছেন। চিত্রের যে দিকটা আবিষ্কার করেছিলেন এস, এম সুলতান।আসিফ তার কবিতায় সেই কাজটি করেছেন। সুলতানের চিত্রকলায় আমরা পাই, কৃষি নির্ভর সমাজের পেশীকূল মানুষ সেই মানুষের সংগ্রামশীলতা। আসিফের কবিতা পড়ুয়ার পাঠ- অভিজ্ঞতাকে মাঝে মাঝে অতিক্রম করে যেতে চায়। আসিফ বৈচিত্র্যময় তার একটি গ্রন্থ থেকে আরেকটি গ্রন্থ সৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে আলাদা হয়ে যায়। যদিও পরিণামের একই লক্ষ্যে তার অভিজ্ঞতাকে আসিফের কাব্যগ্রন্থের নাম বিবেচনায় সে সত্য ধরা পড়ে। আসিফের কবিতার আদিম বাঙালিয়ানা লক্ষ্য করা গেলেও তাঁর হাহাকার তাঁর কাছে বর্তমানের মূল্য সর্বাধিক কারণ তার মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। আসিফ নুরের কাছে অতীতের যে মূল্য তা ইতিহাসের ধাম্ভিকতার মধ্যে রয়েছে। আসিফ মানুষের ক্রমিক উন্নতির সম্ভাবনায় আস্থাশীল। কবিকে হতে হবে বর্তমানের প্রতি দায়িত্ববান এবং ভবিষ্যতের দ্রষ্টা।
কবি আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। বইটি প্রকাশ করেছেন ‘ভাষাপ্রকাশ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মহান একুশে বইমেলা-২৪। আসিফ নূর বিগত কুড়ি শতকের নব্বই দশকে আবির্ভূত অন্যতম ধীমান কবি। লেখনীর মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন ভিন্নধারা। কবি, রম্যোপন্যাস, অনুবাদক ও সম্পাদক। তাঁর লেখার পরিমাণ বিপুল। মানুষের ভালোবাসা ছাড়াও কবি হিসেবে অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা বইমেলা সম্মাননা ২০২৩, দরিয়ানগর আন্তর্জাতিক কবিতামেলা সম্মাননা ২০২২, ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ সম্মাননা ২০২২, শ্রুতি সম্মাননা ২০১৮, হুদা মেলা সম্মাননা ২০১২ এবং মূল্যায়ন সম্মাননা ২০১১। ভাষা বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য এবং কাব্য দর্শনের নানা পরিবর্তনের কাল পরিসর ধরে ব্যক্তিগত ও একই সঙ্গে কবি কেমন করে শুদ্ধতম হয়ে উঠলে তার ব্যাখ্যা-উদ্ধৃতি সহযোগে না দিলে মুখোশের অন্তরালে আসল রূপটা চেনা বড় দায়। আসিফ নুর তার অনেক কবিতাই জটিল বিষ্ময়কর হলেও পদ্ধতি নির্মাণের কারুকার্য দেখে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। তার কবিতার দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বৈপরীত্য জটিলতা আমাদের আরও উৎসুক ও আগ্রহী করে তুলে তার কবিতায়।আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ কাব্যগ্রন্থের ‘ সমুদ্র দর্শন’ কবিতাটি একবার পড়তে চাই-

‘সমুদ্র আমাকে ডাকে।
দূরতমা কোনো এক সুরের মতোন,
দূরতমা কোনো এক নারীর মতোন,
ঘুমের গভীরে এসে সমুদ্র আমাকে ডাকে: আয় আয় আয়।’
সহজ সরল উক্তি, বোধশক্তি বিশাল। তার সময়ের কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম কবি, যিনি তৈরি করতে পেরেছেন। প্রকৃতি ও জীবনের অসীম সৌন্দর্যের মাঝে মানুষের দুঃখ বেদনাকে মায়া দিয়ে প্রকাশ করেছেন এক নতুন ভঙ্গিতে, ভিন্ন চেতনায়। জীবনের দুঃখ বেদনাকে তুলে ধরেছেন কারুশিল্পীর শিল্পের ছোঁয়ায়। তার বাক্য চেতনা ও ভাবাবেগ রবীন্দ্র উত্তর সাহিত্যাকাশে নব ঘুরে ভেসে আসে আমাদের কাছে। আসিফ নূর সাহিত্যের উত্তরাধিকারের দায়িত্ববোধ থেকেই তৈরি করেছেন তার কবিতার শিল্পভাবনা। তিনি নিবিড় নীরব পথে নির্জনতায় খুঁজেছেন কবিতার পথঘাট। মানুষ ছাড়াও বিশুদ্ধ প্রকৃতি ও সমুদ্র গর্জন, সীমার মাঝে অসিমের বিচরণ ও লালকাঁকড়ার বর্ণনায় নির্মাণ কৌশল সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ করে তুলে ধরেছেন তার কবিতাসমূহ। তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন ‘সাম্পানমাঝির গান’ কবিতায়:
‘ বারে বারে ঘর ভাঙে,
বারে বারে বাঁধি ঘর।’
আসিফ নুরের কবিতায় চিত্র রূপময়তা এতটাই স্পষ্ট যে , শব্দ মাত্রই ভেসে উঠে প্রতিটি দিন রাতের শোকের মাস। কবি ব্যক্তি জীবনে নানাবিধ হতাশা, দুঃখ কষ্ট এবং অমানবিক দুনিয়ার এক প্রতিকূল পরিবেশের শিকার বলেই জীবনের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো অনুভব করেছেন মানুষের মন এবং সময় অনুবাদ করে। বেরিয়ে এসেছেন মানুষের শ্বাশত ছায়া। কবির কবিতায় কিছু প্রস্তাবনা লক্ষ্য করা যায়। প্রেম, বিরহ, নষ্টালজিয়া থাকলেও কবি তাতে কাতর নন, কবি তার অতীতকে ফিরে আসতে আহ্বান জানান তারপর অতীত আর বর্তমানের তফাৎ মহাকাল চেতনার একাকার করে ফেলেন- ‘ক্ষয়’ কবিতায়। প্রথম দুটি লাইন বেশ লাগে।
‘ লোহা আর চুম্বক এখন
বড় বেশি দূরে দূরে থাকে।’
উপরোল্লেখিত কবিতায় কবি’র কাছে গন্ধমের লাবণ্য চুম্বন দিলে আরো আক্রান্ত হয় বৈশাখী ঝড়। অন্ধকার ঝরে… মধ্য দুপুরে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আগন্তুক প্রতিক্ষার পাখি। তিনি অঞ্জলি দেন সর্বদা বাস্তবতার পায়ে। আদি থেকে ভালোবাসে সত্যের দানা। তাই বলে নুরের কবিতায় হতাশা নেই, দুর্দশা নেই তা নয় এক বিন্দু ঐশ্বরিক আলোর জন্য অথবা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নেমে আসা খরস্রোত নদীর কাছে একটু বিরল জলের জন্য চাতক পাখির মতো করে তার পৃথিবী দেখতে গিয়ে বারবার বোধের ধূলোতে আটকে ফেলে জীবনের সব শুদ্ধতা। এভাবে বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে আসিফ নুরের কবিতা। আসিফের কবিতা অনেকাংশ সরল, আধুনিক জটিলতা যা এসেছে তা সরলতাকে অবগাহন করতে যেয়ে। কবি আসিফ নূরের কাব্য সংগ্রহের ‘অবাক মতবিনিময় সভা’ কবিতাটি বারবার আমার বুকের ভিতরে অহর্নিশ ডাক পাড়ে। ‘মতবিনিময় সভাশেষে জমেছে দারুণ মতবিনিময়- বিজ্ঞ বক্তাগণ, যারা এতক্ষণ সেমিনারমঞ্চে পরস্পরে
বিপরীত বক্তব্যের খৈ ফুটিয়েছেন মাইক্রোফোনের ঠোঁটে, এখন সবার ভাব গলায় একই মদের নেশায়
দ্বিমত- ত্রিমত সব মত ভেসে গেছে রঙ্গরসের বন্যায়।’
কবি আসিফ নূর তাঁর নিজস্ব রাজধানীর সঙ্গে গভীর বিজড়িত থাকেন এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকর্মেই তার নিজস্ব নগরের একটা বিশেষ রূপ ধরা পড়ে যা স্বতন্ত্র্য প্রতিস্বিকতায় অতুলনীয়। প্রত্যেক কবিতারই থাকে একটা নিজস্ব চরিত্র, স্বতন্ত্র্য, জলবায়ু, আলাদা বৈশিষ্ট্য, চাল-চলন, যানবাহন, স্বতন্ত্র্য ভূগোলের অবকাঠামোময় কবিতার চালচিত্র তার আত্মার এ স্বরূপ আমরা চিত্রিত দেখি, তার সমকালিন কবিদের কাব্যকথায়, সবুজ সময়ে কবি বাঁচতে চান। তিনি এক মন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, কবি বারেবারে নবপ্রাণের নব নন্দনের সন্ধানী। সন্ধান করেন মানুষের ভেতরের মানুষটিকে। আলাদা করেন মুখ ও মুখোশ। পুরাকাল, সমকাল আর ভাবিকাল- সকল কালের আকাশ মিলেমিশে যে একটা আলাদা ও ইশারামন্ড়িত মায়াডোর নির্মাণ করতে পারে, এ তাঁর কবিতার চলনে- বলনে মূর্ত হতে চায়, চারিত হতে চায় পাঠকের বোধেও। মত থেকে মতামত তারপর সুন্দর একটি পথ, যে পথে সমর্পিত সত্যের নিবিড় ধ্বনি এনে দেবে তাবৎ মানুষের কল্যাণ ও মূল্যায়ন। অথচ মতবিনিময়ে মদ বিনিময় সবার দৃষ্টিতে ধরা না পড়লেও কবির চোখ যেন প্রকৃতির অবারিত উপলব্ধি। তাই কবি বিশ্বমানুষের ভাষা বুঝেন। পৃথিবীর সিলেবাসের দিকে খেয়াল করেই অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। বিচিত্র চেতনার কবি রূপ দেখেছেন নিজের ভেতর, অনুভব করেছেন ভেতরের একজন। যে নতুন যাত্রা আমরা কেবল শুদ্ধতম কবি আসিফ নূরের কাছ থেকে আশা করতে পারি। তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন:’বাউলিয়ানা’ কবিতায়-

‘বাউলের নাম নদী আর
একতারার নাম স্রোত, তার
ফেনিল গানের নাম ঢেউ।’
কবিতার রং রস আর রূপ আর রূপ যেন নিবিড় ভাবে মিশে আছে এই কবি শিল্পীর সত্তায় তার কবিতার সমুদ্রের ঢেউ হয়ে যেন দৌড়ে বেড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে দূরের কোন সাগরে। অন্য জগতে যে জগতে আমরা প্রতিটি মানুষ যাপন করছি।
আমাদের সময়ে বহুমাত্রিক আলোক মানুষ কবি আসিফ নূর। এই কবিতার কাব্য প্রয়াসের কেন্দ্রে রয়েছে ব্যক্তি মানুষ, জাতিমানুষ ও বিশ্ব মানুষের সমীকৃত প্রতীতি। এই বাঙালি কবি সমকালিন বিশ্ব কবিতার এক তাৎপর্যপূর্ণ কারুকৃত।
কবিতার পাঠক এখন কবিরাই। এমন আন্দোলিত, শিহরিত ঘুরের রেশ নান্দনিক বিভায় অমোঘ আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কবিতাকে বিশেষ প্রেমের প্রণোদনায় গ্রহণ পূর্বক পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া একমাত্র কবি আসিফ নূরের সম্ভব। তার কবিতায় প্রেম- অপ্রেমে, আশা-নিরাশা, বিনয় ঔদ্ধত্যÑঘুম জাগরনের নানান অনুষঙ্গে বহুমাত্রিক দ্যোতনা তৈরি করে, সৃষ্টি করে ব্যঞ্জনাময় আলো আঁধারি।
মহৎ কবি তার কবিতার শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা কবিতার এমন বিনোদন তৈরি করেন- বিহ্বলে, আনন্দে আমরা দায়গ্রস্ত হয়ে পড়ি। এই মর্মভেদী ভালোলাগা থেকে ঘরে আসার উপায় থাকে না। আশি দশকের শক্তিমান কবি আসিফ নূর সেই দায় চাপিয়েছেন আমাদের মনের ওপর। তার অবচেতনা, বিপন্নতা, অন্ধকার, নির্জনতা, ইতিহাস চেতনা, জাগতিক বিপরীতে অভিমান সূচক ঘুম দ্বারা আমরা আক্রান্ত, হচ্ছি এখনো। এর মধ্যে নতুন কোনো ঘুমের অনুভূতি আমাদের নিরলসভাবে আবেশ লাগিয়ে দেওয়ার বিশেষভাবে এই মহৎ কবির ঝুড়ি নেই বাংলার সাহিত্য আকাশে।
কবির ‘উপকূলগাথা’ শিরেনামের কবিতার শেষের দুটি লাইন বেশ ভালো লেগেছে-
‘মাঝিবউ অস্হিরমাত-
কখন ফিরবে প্রাণনাথ’
অসাধারণ কাব্য প্রণয়। মহাজাগতিক প্রলোভনের মতো চমক লাগিয়ে দেয়, ইঙ্গিত আছে। পাঠককে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না সচকিত করে জাগিয়ে দেয়। যেন অর্থহীন ফ্যান্টাসির জগতের ঘুমের একটা বহুরূপ ছবি অভিজ্ঞান তৈরি করে পাঠকের।
কবি তৈরি করেছেন এসবারড়িটি এর অভ্যন্তরে সংকল্প নেই আছে স্বপ্ন, অভিনবত্বটুকু কবিতার প্রাণ এই অভিনবত্বের জন্যই একই বিষয়ে বিভিন্ন কবির কবিতা ভিন্ন ভিন্ন প্রক্ষেপন গ্রাহ্য করতে হলে পাঠককে অবশ্যই কবিতাপ্রেমিক হওয়া প্রয়োজন। প্রেম আমাদের সর্বময় অভিযোজনের ক্ষমতা দেয়। ভালোমন্দের প্রভেদ তৈরি করাও প্রত্যেকটি কবিতা থেকে স্বতন্ত্র্য আস্বাদ গ্রহণের জন্য বিশেষ ছাঁচে গঠন করে দেয় আমাদের মনকে। যদিও বিষয় হিসেবে প্রেম এ সময়ের কবিতা থেকে নির্বাসিত প্রায়। কিন্তু আমাদের কবি আসিফ নূর সবার জন্য তুলে ধরেছেন প্রতিভার চিরন্তন মৌলিকতা, অর্ন্তভেদী উৎকর্ষ নিঃসন্দেহে কবিকে অভিভূত ও দ্রুবিভূত করেছিলেন বলেই শিরদাঁড়া সোজা করে মানবীয় ঋতুতার দুর্বিনীতি অহংকারে সচলায়তনের প্রণোদনা যোগায় কবির প্রতিটি উচ্চারণ। জয়তু বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর।

বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর ও “কবিতা সংগ্রহ” — নাসের ভূট্টো

নাসের ভুট্টো, কবি ও প্রাবন্ধিক; কবি আসিফ নূরের কাব্যমানসের বৈশিষ্ট্য সমকালিন কাব্যসতীর্থ থেকে পৃথক। আধুনিক কবির রোমান্টিক গীতিধর্মিতার চেয়ে মহা কাব্যিক ক্লাসিক ধৈর্য তাঁর মানস গঠনে বৈশিষ্টতা দিয়েছে। তাই প্রতিটি গ্রন্থের জন্য একটি পৃথক এবং সামগ্রিক চেতনা ধারণে আধুনিক বাংলা কাব্য পরিত্যাগ করেছিলো, আসিফ তা পুর্নবিবেচনা করেছেন। আসিফ নূর কবিতা মৌল প্রবণতা তাঁর ইতিহাস চেতনা মহাকালের ইশারা থেকে উৎসারিত যে সমাজ সময়চেতনা যে সময়ের মধ্যে সংস্থাপিত মানুষের জৈবিক অস্তিত্ব এবং পরিণতি লিপিবদ্ধ করা। আসিফ যে কারণে আলাদা সেটি হল- এ জনপদের আদিম রূপটি কবিতার সাহায্যে তিনিই ফুটিয়ে তুলেছেন। যে জনপদের ভয়াল শ্বাপদ রূপের পাশাপাশি সম্ভাবনাও তিনি আবিষ্কার করেছেন। চিত্রের যে দিকটা আবিষ্কার করেছিলেন এস, এম সুলতান।আসিফ তার কবিতায় সেই কাজটি করেছেন। সুলতানের চিত্রকলায় আমরা পাই, কৃষি নির্ভর সমাজের পেশীকূল মানুষ সেই মানুষের সংগ্রামশীলতা। আসিফের কবিতা পড়ুয়ার পাঠ- অভিজ্ঞতাকে মাঝে মাঝে অতিক্রম করে যেতে চায়। আসিফ বৈচিত্র্যময় তার একটি গ্রন্থ থেকে আরেকটি গ্রন্থ সৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে আলাদা হয়ে যায়। যদিও পরিণামের একই লক্ষ্যে তার অভিজ্ঞতাকে আসিফের কাব্যগ্রন্থের নাম বিবেচনায় সে সত্য ধরা পড়ে। আসিফের কবিতার আদিম বাঙালিয়ানা লক্ষ্য করা গেলেও তাঁর হাহাকার তাঁর কাছে বর্তমানের মূল্য সর্বাধিক কারণ তার মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। আসিফ নুরের কাছে অতীতের যে মূল্য তা ইতিহাসের ধাম্ভিকতার মধ্যে রয়েছে। আসিফ মানুষের ক্রমিক উন্নতির সম্ভাবনায় আস্থাশীল। কবিকে হতে হবে বর্তমানের প্রতি দায়িত্ববান এবং ভবিষ্যতের দ্রষ্টা।
কবি আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। বইটি প্রকাশ করেছেন ‘ভাষাপ্রকাশ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মহান একুশে বইমেলা-২৪। আসিফ নূর বিগত কুড়ি শতকের নব্বই দশকে আবির্ভূত অন্যতম ধীমান কবি। লেখনীর মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন ভিন্নধারা। কবি, রম্যোপন্যাস, অনুবাদক ও সম্পাদক। তাঁর লেখার পরিমাণ বিপুল। মানুষের ভালোবাসা ছাড়াও কবি হিসেবে অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা বইমেলা সম্মাননা ২০২৩, দরিয়ানগর আন্তর্জাতিক কবিতামেলা সম্মাননা ২০২২, ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ সম্মাননা ২০২২, শ্রুতি সম্মাননা ২০১৮, হুদা মেলা সম্মাননা ২০১২ এবং মূল্যায়ন সম্মাননা ২০১১। ভাষা বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য এবং কাব্য দর্শনের নানা পরিবর্তনের কাল পরিসর ধরে ব্যক্তিগত ও একই সঙ্গে কবি কেমন করে শুদ্ধতম হয়ে উঠলে তার ব্যাখ্যা-উদ্ধৃতি সহযোগে না দিলে মুখোশের অন্তরালে আসল রূপটা চেনা বড় দায়। আসিফ নুর তার অনেক কবিতাই জটিল বিষ্ময়কর হলেও পদ্ধতি নির্মাণের কারুকার্য দেখে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। তার কবিতার দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বৈপরীত্য জটিলতা আমাদের আরও উৎসুক ও আগ্রহী করে তুলে তার কবিতায়।আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ কাব্যগ্রন্থের ‘ সমুদ্র দর্শন’ কবিতাটি একবার পড়তে চাই-

‘সমুদ্র আমাকে ডাকে।
দূরতমা কোনো এক সুরের মতোন,
দূরতমা কোনো এক নারীর মতোন,
ঘুমের গভীরে এসে সমুদ্র আমাকে ডাকে: আয় আয় আয়।’
সহজ সরল উক্তি, বোধশক্তি বিশাল। তার সময়ের কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম কবি, যিনি তৈরি করতে পেরেছেন। প্রকৃতি ও জীবনের অসীম সৌন্দর্যের মাঝে মানুষের দুঃখ বেদনাকে মায়া দিয়ে প্রকাশ করেছেন এক নতুন ভঙ্গিতে, ভিন্ন চেতনায়। জীবনের দুঃখ বেদনাকে তুলে ধরেছেন কারুশিল্পীর শিল্পের ছোঁয়ায়। তার বাক্য চেতনা ও ভাবাবেগ রবীন্দ্র উত্তর সাহিত্যাকাশে নব ঘুরে ভেসে আসে আমাদের কাছে। আসিফ নূর সাহিত্যের উত্তরাধিকারের দায়িত্ববোধ থেকেই তৈরি করেছেন তার কবিতার শিল্পভাবনা। তিনি নিবিড় নীরব পথে নির্জনতায় খুঁজেছেন কবিতার পথঘাট। মানুষ ছাড়াও বিশুদ্ধ প্রকৃতি ও সমুদ্র গর্জন, সীমার মাঝে অসিমের বিচরণ ও লালকাঁকড়ার বর্ণনায় নির্মাণ কৌশল সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ করে তুলে ধরেছেন তার কবিতাসমূহ। তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন ‘সাম্পানমাঝির গান’ কবিতায়:
‘ বারে বারে ঘর ভাঙে,
বারে বারে বাঁধি ঘর।’
আসিফ নুরের কবিতায় চিত্র রূপময়তা এতটাই স্পষ্ট যে , শব্দ মাত্রই ভেসে উঠে প্রতিটি দিন রাতের শোকের মাস। কবি ব্যক্তি জীবনে নানাবিধ হতাশা, দুঃখ কষ্ট এবং অমানবিক দুনিয়ার এক প্রতিকূল পরিবেশের শিকার বলেই জীবনের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো অনুভব করেছেন মানুষের মন এবং সময় অনুবাদ করে। বেরিয়ে এসেছেন মানুষের শ্বাশত ছায়া। কবির কবিতায় কিছু প্রস্তাবনা লক্ষ্য করা যায়। প্রেম, বিরহ, নষ্টালজিয়া থাকলেও কবি তাতে কাতর নন, কবি তার অতীতকে ফিরে আসতে আহ্বান জানান তারপর অতীত আর বর্তমানের তফাৎ মহাকাল চেতনার একাকার করে ফেলেন- ‘ক্ষয়’ কবিতায়। প্রথম দুটি লাইন বেশ লাগে।
‘ লোহা আর চুম্বক এখন
বড় বেশি দূরে দূরে থাকে।’
উপরোল্লেখিত কবিতায় কবি’র কাছে গন্ধমের লাবণ্য চুম্বন দিলে আরো আক্রান্ত হয় বৈশাখী ঝড়। অন্ধকার ঝরে… মধ্য দুপুরে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আগন্তুক প্রতিক্ষার পাখি। তিনি অঞ্জলি দেন সর্বদা বাস্তবতার পায়ে। আদি থেকে ভালোবাসে সত্যের দানা। তাই বলে নুরের কবিতায় হতাশা নেই, দুর্দশা নেই তা নয় এক বিন্দু ঐশ্বরিক আলোর জন্য অথবা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নেমে আসা খরস্রোত নদীর কাছে একটু বিরল জলের জন্য চাতক পাখির মতো করে তার পৃথিবী দেখতে গিয়ে বারবার বোধের ধূলোতে আটকে ফেলে জীবনের সব শুদ্ধতা। এভাবে বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে আসিফ নুরের কবিতা। আসিফের কবিতা অনেকাংশ সরল, আধুনিক জটিলতা যা এসেছে তা সরলতাকে অবগাহন করতে যেয়ে। কবি আসিফ নূরের কাব্য সংগ্রহের ‘অবাক মতবিনিময় সভা’ কবিতাটি বারবার আমার বুকের ভিতরে অহর্নিশ ডাক পাড়ে। ‘মতবিনিময় সভাশেষে জমেছে দারুণ মতবিনিময়- বিজ্ঞ বক্তাগণ, যারা এতক্ষণ সেমিনারমঞ্চে পরস্পরে
বিপরীত বক্তব্যের খৈ ফুটিয়েছেন মাইক্রোফোনের ঠোঁটে, এখন সবার ভাব গলায় একই মদের নেশায়
দ্বিমত- ত্রিমত সব মত ভেসে গেছে রঙ্গরসের বন্যায়।’
কবি আসিফ নূর তাঁর নিজস্ব রাজধানীর সঙ্গে গভীর বিজড়িত থাকেন এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকর্মেই তার নিজস্ব নগরের একটা বিশেষ রূপ ধরা পড়ে যা স্বতন্ত্র্য প্রতিস্বিকতায় অতুলনীয়। প্রত্যেক কবিতারই থাকে একটা নিজস্ব চরিত্র, স্বতন্ত্র্য, জলবায়ু, আলাদা বৈশিষ্ট্য, চাল-চলন, যানবাহন, স্বতন্ত্র্য ভূগোলের অবকাঠামোময় কবিতার চালচিত্র তার আত্মার এ স্বরূপ আমরা চিত্রিত দেখি, তার সমকালিন কবিদের কাব্যকথায়, সবুজ সময়ে কবি বাঁচতে চান। তিনি এক মন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, কবি বারেবারে নবপ্রাণের নব নন্দনের সন্ধানী। সন্ধান করেন মানুষের ভেতরের মানুষটিকে। আলাদা করেন মুখ ও মুখোশ। পুরাকাল, সমকাল আর ভাবিকাল- সকল কালের আকাশ মিলেমিশে যে একটা আলাদা ও ইশারামন্ড়িত মায়াডোর নির্মাণ করতে পারে, এ তাঁর কবিতার চলনে- বলনে মূর্ত হতে চায়, চারিত হতে চায় পাঠকের বোধেও। মত থেকে মতামত তারপর সুন্দর একটি পথ, যে পথে সমর্পিত সত্যের নিবিড় ধ্বনি এনে দেবে তাবৎ মানুষের কল্যাণ ও মূল্যায়ন। অথচ মতবিনিময়ে মদ বিনিময় সবার দৃষ্টিতে ধরা না পড়লেও কবির চোখ যেন প্রকৃতির অবারিত উপলব্ধি। তাই কবি বিশ্বমানুষের ভাষা বুঝেন। পৃথিবীর সিলেবাসের দিকে খেয়াল করেই অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। বিচিত্র চেতনার কবি রূপ দেখেছেন নিজের ভেতর, অনুভব করেছেন ভেতরের একজন। যে নতুন যাত্রা আমরা কেবল শুদ্ধতম কবি আসিফ নূরের কাছ থেকে আশা করতে পারি। তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন:’বাউলিয়ানা’ কবিতায়-

‘বাউলের নাম নদী আর
একতারার নাম স্রোত, তার
ফেনিল গানের নাম ঢেউ।’
কবিতার রং রস আর রূপ আর রূপ যেন নিবিড় ভাবে মিশে আছে এই কবি শিল্পীর সত্তায় তার কবিতার সমুদ্রের ঢেউ হয়ে যেন দৌড়ে বেড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে দূরের কোন সাগরে। অন্য জগতে যে জগতে আমরা প্রতিটি মানুষ যাপন করছি।
আমাদের সময়ে বহুমাত্রিক আলোক মানুষ কবি আসিফ নূর। এই কবিতার কাব্য প্রয়াসের কেন্দ্রে রয়েছে ব্যক্তি মানুষ, জাতিমানুষ ও বিশ্ব মানুষের সমীকৃত প্রতীতি। এই বাঙালি কবি সমকালিন বিশ্ব কবিতার এক তাৎপর্যপূর্ণ কারুকৃত।
কবিতার পাঠক এখন কবিরাই। এমন আন্দোলিত, শিহরিত ঘুরের রেশ নান্দনিক বিভায় অমোঘ আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কবিতাকে বিশেষ প্রেমের প্রণোদনায় গ্রহণ পূর্বক পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া একমাত্র কবি আসিফ নূরের সম্ভব। তার কবিতায় প্রেম- অপ্রেমে, আশা-নিরাশা, বিনয় ঔদ্ধত্যÑঘুম জাগরনের নানান অনুষঙ্গে বহুমাত্রিক দ্যোতনা তৈরি করে, সৃষ্টি করে ব্যঞ্জনাময় আলো আঁধারি।
মহৎ কবি তার কবিতার শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা কবিতার এমন বিনোদন তৈরি করেন- বিহ্বলে, আনন্দে আমরা দায়গ্রস্ত হয়ে পড়ি। এই মর্মভেদী ভালোলাগা থেকে ঘরে আসার উপায় থাকে না। আশি দশকের শক্তিমান কবি আসিফ নূর সেই দায় চাপিয়েছেন আমাদের মনের ওপর। তার অবচেতনা, বিপন্নতা, অন্ধকার, নির্জনতা, ইতিহাস চেতনা, জাগতিক বিপরীতে অভিমান সূচক ঘুম দ্বারা আমরা আক্রান্ত, হচ্ছি এখনো। এর মধ্যে নতুন কোনো ঘুমের অনুভূতি আমাদের নিরলসভাবে আবেশ লাগিয়ে দেওয়ার বিশেষভাবে এই মহৎ কবির ঝুড়ি নেই বাংলার সাহিত্য আকাশে।
কবির ‘উপকূলগাথা’ শিরেনামের কবিতার শেষের দুটি লাইন বেশ ভালো লেগেছে-
‘মাঝিবউ অস্হিরমাত-
কখন ফিরবে প্রাণনাথ’
অসাধারণ কাব্য প্রণয়। মহাজাগতিক প্রলোভনের মতো চমক লাগিয়ে দেয়, ইঙ্গিত আছে। পাঠককে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না সচকিত করে জাগিয়ে দেয়। যেন অর্থহীন ফ্যান্টাসির জগতের ঘুমের একটা বহুরূপ ছবি অভিজ্ঞান তৈরি করে পাঠকের।
কবি তৈরি করেছেন এসবারড়িটি এর অভ্যন্তরে সংকল্প নেই আছে স্বপ্ন, অভিনবত্বটুকু কবিতার প্রাণ এই অভিনবত্বের জন্যই একই বিষয়ে বিভিন্ন কবির কবিতা ভিন্ন ভিন্ন প্রক্ষেপন গ্রাহ্য করতে হলে পাঠককে অবশ্যই কবিতাপ্রেমিক হওয়া প্রয়োজন। প্রেম আমাদের সর্বময় অভিযোজনের ক্ষমতা দেয়। ভালোমন্দের প্রভেদ তৈরি করাও প্রত্যেকটি কবিতা থেকে স্বতন্ত্র্য আস্বাদ গ্রহণের জন্য বিশেষ ছাঁচে গঠন করে দেয় আমাদের মনকে। যদিও বিষয় হিসেবে প্রেম এ সময়ের কবিতা থেকে নির্বাসিত প্রায়। কিন্তু আমাদের কবি আসিফ নূর সবার জন্য তুলে ধরেছেন প্রতিভার চিরন্তন মৌলিকতা, অর্ন্তভেদী উৎকর্ষ নিঃসন্দেহে কবিকে অভিভূত ও দ্রুবিভূত করেছিলেন বলেই শিরদাঁড়া সোজা করে মানবীয় ঋতুতার দুর্বিনীতি অহংকারে সচলায়তনের প্রণোদনা যোগায় কবির প্রতিটি উচ্চারণ। জয়তু বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর।

বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর ও “কবিতা সংগ্রহ” — নাসের ভূট্টো

নাসের ভুট্টো;

কবি আসিফ নূরের কাব্যমানসের বৈশিষ্ট্য সমকালিন কাব্যসতীর্থ থেকে পৃথক। আধুনিক কবির রোমান্টিক গীতিধর্মিতার চেয়ে মহা কাব্যিক ক্লাসিক ধৈর্য তাঁর মানস গঠনে বৈশিষ্টতা দিয়েছে। তাই প্রতিটি গ্রন্থের জন্য একটি পৃথক এবং সামগ্রিক চেতনা ধারণে আধুনিক বাংলা কাব্য পরিত্যাগ করেছিলো, আসিফ তা পুর্নবিবেচনা করেছেন। আসিফ নূর কবিতা মৌল প্রবণতা তাঁর ইতিহাস চেতনা মহাকালের ইশারা থেকে উৎসারিত যে সমাজ সময়চেতনা যে সময়ের মধ্যে সংস্থাপিত মানুষের জৈবিক অস্তিত্ব এবং পরিণতি লিপিবদ্ধ করা। আসিফ যে কারণে আলাদা সেটি হল- এ জনপদের আদিম রূপটি কবিতার সাহায্যে তিনিই ফুটিয়ে তুলেছেন। যে জনপদের ভয়াল শ্বাপদ রূপের পাশাপাশি সম্ভাবনাও তিনি আবিষ্কার করেছেন। চিত্রের যে দিকটা আবিষ্কার করেছিলেন এস, এম সুলতান।আসিফ তার কবিতায় সেই কাজটি করেছেন। সুলতানের চিত্রকলায় আমরা পাই, কৃষি নির্ভর সমাজের পেশীকূল মানুষ সেই মানুষের সংগ্রামশীলতা। আসিফের কবিতা পড়ুয়ার পাঠ- অভিজ্ঞতাকে মাঝে মাঝে অতিক্রম করে যেতে চায়। আসিফ বৈচিত্র্যময় তার একটি গ্রন্থ থেকে আরেকটি গ্রন্থ সৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে আলাদা হয়ে যায়। যদিও পরিণামের একই লক্ষ্যে তার অভিজ্ঞতাকে আসিফের কাব্যগ্রন্থের নাম বিবেচনায় সে সত্য ধরা পড়ে।
আসিফের কবিতার আদিম বাঙালিয়ানা লক্ষ্য করা গেলেও তাঁর হাহাকার তাঁর কাছে বর্তমানের মূল্য সর্বাধিক কারণ তার মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। আসিফ নুরের কাছে অতীতের যে মূল্য তা ইতিহাসের ধাম্ভিকতার মধ্যে রয়েছে। আসিফ মানুষের ক্রমিক উন্নতির সম্ভাবনায় আস্থাশীল। কবিকে হতে হবে বর্তমানের প্রতি দায়িত্ববান এবং ভবিষ্যতের দ্রষ্টা।
কবি আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। বইটি প্রকাশ করেছেন ‘ভাষাপ্রকাশ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মহান একুশে বইমেলা-২৪।
আসিফ নূর বিগত কুড়ি শতকের নব্বই দশকে আবির্ভূত অন্যতম ধীমান কবি। লেখনীর মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন ভিন্নধারা। কবি, রম্যোপন্যাস, অনুবাদক ও সম্পাদক। তাঁর লেখার পরিমাণ বিপুল। মানুষের ভালোবাসা ছাড়াও কবি হিসেবে অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা বইমেলা সম্মাননা ২০২৩, দরিয়ানগর আন্তর্জাতিক কবিতামেলা সম্মাননা ২০২২, ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ সম্মাননা ২০২২, শ্রুতি সম্মাননা ২০১৮, হুদা মেলা সম্মাননা ২০১২ এবং মূল্যায়ন সম্মাননা ২০১১।

ভাষা বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য এবং কাব্য দর্শনের নানা পরিবর্তনের কাল পরিসর ধরে ব্যক্তিগত ও একই সঙ্গে কবি কেমন করে শুদ্ধতম হয়ে উঠলে তার ব্যাখ্যা-উদ্ধৃতি সহযোগে না দিলে মুখোশের অন্তরালে আসল রূপটা চেনা বড় দায়। আসিফ নুর তার অনেক কবিতাই জটিল বিষ্ময়কর হলেও পদ্ধতি নির্মাণের কারুকার্য দেখে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। তার কবিতার দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বৈপরীত্য জটিলতা আমাদের আরও উৎসুক ও আগ্রহী করে তুলে তার কবিতায়।
আসিফ নূরের ‘কবিতা সংগ্রহ’ কাব্যগ্রন্থের ‘ সমুদ্র দর্শন’ কবিতাটি একবার পড়তে চাই-
‘সমুদ্র আমাকে ডাকে।
দূরতমা কোনো এক সুরের মতোন,
দূরতমা কোনো এক নারীর মতোন,
ঘুমের গভীরে এসে সমুদ্র আমাকে ডাকে: আয় আয় আয়।’
সহজ সরল উক্তি, বোধশক্তি বিশাল। তার সময়ের কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম কবি, যিনি তৈরি করতে পেরেছেন। প্রকৃতি ও জীবনের অসীম সৌন্দর্যের মাঝে মানুষের দুঃখ বেদনাকে মায়া দিয়ে প্রকাশ করেছেন এক নতুন ভঙ্গিতে, ভিন্ন চেতনায়। জীবনের দুঃখ বেদনাকে তুলে ধরেছেন কারুশিল্পীর শিল্পের ছোঁয়ায়। তার বাক্য চেতনা ও ভাবাবেগ রবীন্দ্র উত্তর সাহিত্যাকাশে নব ঘুরে ভেসে আসে আমাদের কাছে। আসিফ নূর সাহিত্যের উত্তরাধিকারের দায়িত্ববোধ থেকেই তৈরি করেছেন তার কবিতার শিল্পভাবনা। তিনি নিবিড় নীরব পথে নির্জনতায় খুঁজেছেন কবিতার পথঘাট। মানুষ ছাড়াও বিশুদ্ধ প্রকৃতি ও সমুদ্র গর্জন, সীমার মাঝে অসিমের বিচরণ ও লালকাঁকড়ার বর্ণনায় নির্মাণ কৌশল সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ করে তুলে ধরেছেন তার কবিতাসমূহ। তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন ‘সাম্পানমাঝির গান’ কবিতায়:
‘ বারে বারে ঘর ভাঙে,
বারে বারে বাঁধি ঘর।’
আসিফ নুরের কবিতায় চিত্র রূপময়তা এতটাই স্পষ্ট যে , শব্দ মাত্রই ভেসে উঠে প্রতিটি দিন রাতের শোকের মাস। কবি ব্যক্তি জীবনে নানাবিধ হতাশা, দুঃখ কষ্ট এবং অমানবিক দুনিয়ার এক প্রতিকূল পরিবেশের শিকার বলেই জীবনের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো অনুভব করেছেন মানুষের মন এবং সময় অনুবাদ করে। বেরিয়ে এসেছেন মানুষের শ্বাশত ছায়া। কবির কবিতায় কিছু প্রস্তাবনা লক্ষ্য করা যায়। প্রেম, বিরহ, নষ্টালজিয়া থাকলেও কবি তাতে কাতর নন, কবি তার অতীতকে ফিরে আসতে আহ্বান জানান তারপর অতীত আর বর্তমানের তফাৎ মহাকাল চেতনার একাকার করে ফেলেন- ‘ক্ষয়’ কবিতায়। প্রথম দুটি লাইন বেশ লাগে।
‘ লোহা আর চুম্বক এখন
বড় বেশি দূরে দূরে থাকে।’
উপরোল্লেখিত কবিতায় কবি’র কাছে গন্ধমের লাবণ্য চুম্বন দিলে আরো আক্রান্ত হয় বৈশাখী ঝড়। অন্ধকার ঝরে… মধ্য দুপুরে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আগন্তুক প্রতিক্ষার পাখি। তিনি অঞ্জলি দেন সর্বদা বাস্তবতার পায়ে। আদি থেকে ভালোবাসে সত্যের দানা। তাই বলে নুরের কবিতায় হতাশা নেই, দুর্দশা নেই তা নয় এক বিন্দু ঐশ্বরিক আলোর জন্য অথবা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নেমে আসা খরস্রোত নদীর কাছে একটু বিরল জলের জন্য চাতক পাখির মতো করে তার পৃথিবী দেখতে গিয়ে বারবার বোধের ধূলোতে আটকে ফেলে জীবনের সব শুদ্ধতা। এভাবে বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে আসিফ নুরের কবিতা। আসিফের কবিতা অনেকাংশ সরল, আধুনিক জটিলতা যা এসেছে তা সরলতাকে অবগাহন করতে যেয়ে।
কবি আসিফ নূরের কাব্য সংগ্রহের ‘অবাক মতবিনিময় সভা’ কবিতাটি বারবার আমার বুকের ভিতরে অহর্নিশ ডাক পাড়ে।
‘মতবিনিময় সভাশেষে জমেছে দারুণ মদবিনিময়-
বিজ্ঞ বক্তাগণ, যারা এতক্ষণ সেমিনারমঞ্চে পরস্পরে
বিপরীত বক্তব্যের খৈ ফুটিয়েছেন মাইক্রোফোনের ঠোঁটে,
এখন সবার ভাব গলায় একই মদের নেশায়
দ্বিমত- ত্রিমত সব মত ভেসে গেছে রঙ্গরসের বন্যায়।’
কবি আসিফ নূর তাঁর নিজস্ব রাজধানীর সঙ্গে গভীর বিজড়িত থাকেন এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকর্মেই তার নিজস্ব নগরের একটা বিশেষ রূপ ধরা পড়ে যা স্বতন্ত্র্য প্রতিস্বিকতায় অতুলনীয়। প্রত্যেক কবিতারই থাকে একটা নিজস্ব চরিত্র, স্বতন্ত্র্য, জলবায়ু, আলাদা বৈশিষ্ট্য, চাল-চলন, যানবাহন, স্বতন্ত্র্য ভূগোলের অবকাঠামোময় কবিতার চালচিত্র তার আত্মার এ স্বরূপ আমরা চিত্রিত দেখি, তার সমকালিন কবিদের কাব্যকথায়, সবুজ সময়ে কবি বাঁচতে চান। তিনি এক মন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, কবি বারেবারে নবপ্রাণের নব নন্দনের সন্ধানী। সন্ধান করেন মানুষের ভেতরের মানুষটিকে। আলাদা করেন মুখ ও মুখোশ। পুরাকাল, সমকাল আর ভাবিকাল- সকল কালের আকাশ মিলেমিশে যে একটা আলাদা ও ইশারামন্ড়িত মায়াডোর নির্মাণ করতে পারে, এ তাঁর কবিতার চলনে- বলনে মূর্ত হতে চায়, চারিত হতে চায় পাঠকের বোধেও। মত থেকে মতামত তারপর সুন্দর একটি পথ, যে পথে সমর্পিত সত্যের নিবিড় ধ্বনি এনে দেবে তাবৎ মানুষের কল্যাণ ও মূল্যায়ন। অথচ মতবিনিময়ে মদ বিনিময় সবার দৃষ্টিতে ধরা না পড়লেও কবির চোখ যেন প্রকৃতির অবারিত উপলব্ধি। তাই কবি বিশ্বমানুষের ভাষা বুঝেন। পৃথিবীর সিলেবাসের দিকে খেয়াল করেই অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন।

বিচিত্র চেতনার কবি রূপ দেখেছেন নিজের ভেতর, অনুভব করেছেন ভেতরের একজন। যে নতুন যাত্রা আমরা কেবল শুদ্ধতম কবি আসিফ নূরের কাছ থেকে আশা করতে পারি।
তাই তিঁনি অকপটে স্বীকার করেন:’বাউলিয়ানা’ কবিতায়-
‘বাউলের নাম নদী আর
একতারার নাম স্রোত, তার
ফেনিল গানের নাম ঢেউ।’
কবিতার রং রস আর রূপ আর রূপ যেন নিবিড় ভাবে মিশে আছে এই কবি শিল্পীর সত্তায় তার কবিতার সমুদ্রের ঢেউ হয়ে যেন দৌড়ে বেড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে দূরের কোন সাগরে। অন্য জগতে যে জগতে আমরা প্রতিটি মানুষ যাপন করছি।
আমাদের সময়ে বহুমাত্রিক আলোক মানুষ কবি আসিফ নূর। এই কবিতার কাব্য প্রয়াসের কেন্দ্রে রয়েছে ব্যক্তি মানুষ, জাতিমানুষ ও বিশ্ব মানুষের সমীকৃত প্রতীতি। এই বাঙালি কবি সমকালিন বিশ্ব কবিতার এক তাৎপর্যপূর্ণ কারুকৃত।
কবিতার পাঠক এখন কবিরাই। এমন আন্দোলিত, শিহরিত ঘুরের রেশ নান্দনিক বিভায় অমোঘ আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কবিতাকে বিশেষ প্রেমের প্রণোদনায় গ্রহণ পূর্বক পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া একমাত্র কবি আসিফ নূরের সম্ভব। তার কবিতায় প্রেম- অপ্রেমে, আশা-নিরাশা, বিনয় ঔদ্ধত্যÑঘুম জাগরনের নানান অনুষঙ্গে বহুমাত্রিক দ্যোতনা তৈরি করে, সৃষ্টি করে ব্যঞ্জনাময় আলো আঁধারি।
মহৎ কবি তার কবিতার শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা কবিতার এমন বিনোদন তৈরি করেন- বিহ্বলে, আনন্দে আমরা দায়গ্রস্ত হয়ে পড়ি। এই মর্মভেদী ভালোলাগা থেকে ঘরে আসার উপায় থাকে না। আশি দশকের শক্তিমান কবি আসিফ নূর সেই দায় চাপিয়েছেন আমাদের মনের ওপর। তার অবচেতনা, বিপন্নতা, অন্ধকার, নির্জনতা, ইতিহাস চেতনা, জাগতিক বিপরীতে অভিমান সূচক ঘুম দ্বারা আমরা আক্রান্ত, হচ্ছি এখনো। এর মধ্যে নতুন কোনো ঘুমের অনুভূতি আমাদের নিরলসভাবে আবেশ লাগিয়ে দেওয়ার বিশেষভাবে এই মহৎ কবির ঝুড়ি নেই বাংলার সাহিত্য আকাশে।
কবির ‘উপকূলগাথা’ শিরেনামের কবিতার শেষের দুটি লাইন বেশ ভালো লেগেছে-
‘মাঝিবউ অস্হিরমাত-
কখন ফিরবে প্রাণনাথ’
অসাধারণ কাব্য প্রণয়। মহাজাগতিক প্রলোভনের মতো চমক লাগিয়ে দেয়, ইঙ্গিত আছে। পাঠককে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না সচকিত করে জাগিয়ে দেয়। যেন অর্থহীন ফ্যান্টাসির জগতের ঘুমের একটা বহুরূপ ছবি অভিজ্ঞান তৈরি করে পাঠকের।
কবি তৈরি করেছেন এসবারড়িটি এর অভ্যন্তরে সংকল্প নেই আছে স্বপ্ন, অভিনবত্বটুকু কবিতার প্রাণ এই অভিনবত্বের জন্যই একই বিষয়ে বিভিন্ন কবির কবিতা ভিন্ন ভিন্ন প্রক্ষেপন গ্রাহ্য করতে হলে পাঠককে অবশ্যই কবিতাপ্রেমিক হওয়া প্রয়োজন। প্রেম আমাদের সর্বময় অভিযোজনের ক্ষমতা দেয়। ভালোমন্দের প্রভেদ তৈরি করাও প্রত্যেকটি কবিতা থেকে স্বতন্ত্র্য আস্বাদ গ্রহণের জন্য বিশেষ ছাঁচে গঠন করে দেয় আমাদের মনকে। যদিও বিষয় হিসেবে প্রেম এ সময়ের কবিতা থেকে নির্বাসিত প্রায়। কিন্তু আমাদের কবি আসিফ নূর সবার জন্য তুলে ধরেছেন প্রতিভার চিরন্তন মৌলিকতা, অর্ন্তভেদী উৎকর্ষ নিঃসন্দেহে কবিকে অভিভূত ও দ্রুবিভূত করেছিলেন বলেই শিরদাঁড়া সোজা করে মানবীয় ঋতুতার দুর্বিনীতি অহংকারে সচলায়তনের প্রণোদনা যোগায় কবির প্রতিটি উচ্চারণ। জয়তু বিশুদ্ধতম কবি আসিফ নূর।

 

 

 

 

কবি নাসের ভূট্টো 

কবি ও প্রান্ধিক
২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, কক্সবাজার।

আগ্নেয়াস্ত্র ওয়ান শুটারগানসহ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০-সিপিসি৩

মো:টিটুল মোল্লা,ফরিদপুর।।
এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর থানাধীন ছোট নুরপুর এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ০১ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ মানিক মোল্লা ওরফে বেকায়দা মানিক (২৯), পিতা-কোরবান আলী মোল্লা, সাং-ছোট নুরপুর, থানা-রাজবাড়ী সদর, জেলা-রাজবাড়ী বলে জানা যায়। এসময় তার নিকট থেকে ০১টি দেশীয় তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সে বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজবাড়ীসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মানিক উক্ত অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে উল্লেখিত এলাকায় মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিল। ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে পূর্বে আরো ৪টি ( চার) মামলা ছিল।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা রুজু করতঃ সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান আর নেই

মো:টিটুল মোল্লা”ফরিদপুর।।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করিয়াছেন। (১৭ ফেব্রুয়ারি) শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে সকল স্তরের গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। লায়েকুজ্জামান ১৯৬৪ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ী ফরিদপুরের নগরকান্দায়। লায়েকুজ্জামান এর আগে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে সম্প্রতি তিনি রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক মানবজমিন ও সকালের খবরে কাজ করেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিন দর্পণ পত্রিকায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন।

লায়েকুজ্জামান রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করলেও কর্মজীবনে তিনি পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার এস আর জে সুমন বলেন, শনিবার বিকালে কর্মস্থল রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকা অফিসে কর্তব্যরত অবস্থায় বুকে ব্যথা অনুভব করলে সহকর্মীরা তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মহান একুশে বই মেলায় সুলতানা দিল আফরোজের ত্রিরত্ন

“মহান একুশে বই মেলায় সুলতানা দিল আফরোজের ত্রিরত্ন”

সুলতানা দিল আফরোজ,কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে তাঁর জন্ম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে জন্ম নেওয়া এই লেখকের জন্ম তারিখ ২০শে ডিসেম্বর। পিতা জনাব জামাল আহমেদ পেশায় একজন কৃষিবিদ। মাতা হাবিবুন নাহার একজন গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পিতার বদলিযোগ্য চাকরির সুবাদে শৈশবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কৈশোরে চলে আসেন চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল ও কলেজ এবং চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে পড়ালেখা করেছেন।১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা,কর্ণফুলী উপজেলার দৌলতপুর কাজিবাড়ির মরহুম সৈয়দ আমিনুল ইসলাম এবং মরহুমা সৈয়দা নুরজাহান বেগমের মেঝছেলে জনাব এস এম আশরাফুল ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আবার শুরু হয় দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলা। এই ছুটে চলায় যুক্ত হয়েছে পৃথিবীর কয়েকটি দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতাও। এক কন্যা,এক পুত্র এবং স্বামীকে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার।স্বামীর কর্মক্ষেত্রে থাকা এবং ছুটে চলার পথে তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নিবিড় এবং নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সে দায়িত্ব পালন করেন। করোনাকালে জীবনের ব্যস্ততা কিছুটা কমে আসার ফাঁকে তিনি লেখালিখিতে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর লিখা তিনটি বই,‘আমার শৈশব আমার বাবা বেলা’(জানুয়ারি ২০২১),‘স্মৃতির আঙিনায়’ (ফেব্রুয়ারি ২০২১),‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’(ফেব্রুয়ারি ২০২৩) পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে।এ ছাড়াও তিনি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এবং লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখে চলেছেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রকৃতির’ তিনি একজন নিয়মিত লেখক। তাঁর লিখা প্রবন্ধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য (ক)হৃদয়ে মাটি ও ভাষা (খ)প্রসঙ্গ নারী দিবস এবং আমরা (গ)স্মৃতিতে ঈদ এবং ঈদ কড়চা। ধারাবাহিকভাবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে লিখা হয়েছিল যা পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করার একান্ত ইচ্ছা রয়েছে এমন কিছু লিখা হলো_(ক)খাদ্য সংস্কৃতির বিবর্তন বহে ধীর লয়ে (খ)প্রসঙ্গ মির্জা গালিব।বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ‘কর্ণফুলীর বাঁকে-পান্থজনের কথকতা’ শিরোনামের একটি বই নিয়ে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এটি ভিন্ন আঙ্গিকে বই আকারে প্রকাশিত হবে।জাতীয় বইমেলা-২০২৩-এ সিলেট ভ্রমণের উপর তাঁর লিখা বই ‘ভ্রমণে ভাবনায় সিলেট’ প্রকাশিত হয়ে জনপ্রিয় হয়েছে। তাঁর সাবলীল লেখনিতে খুঁজে পাওয়া যায় স্মৃতিচারণ কিংবা ভ্রমণকাহিনি তেমনি দেশপ্রেম,প্রকৃতি,মাটির সোঁদা গন্ধ,ইতিহাস,ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মের সাথে শেকড়ের এক মেলবন্ধন গড়ে তুলতে তাঁর এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। তাঁর লিখায় বিমূর্ত হয়ে উঠে জীবনের বৃহত্তর ক্যানভাস। শৈশব হতেই তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত পাঠক। ধীরে ধীরে এই পাঠাভ্যাস তাঁকে একজন লেখকে রূপান্তর করে।
এবারের মহান একুশে বইমেলা- ২৪ এ কথাসাহিত্যিক সুলতানা দিল আফরোজের সময়ে স্বল্পতার কারনে কোন বই প্রকাশ না পেলেও দেশ পাবলিকেশন স্টল নং ৪৭৮_৪৮০ পাওয়া যাবে লেখকের তিনটি বই।
বইগুলো ছুঁয়ে দেখুন, কথা বলুন, একটু সময় দিন দৃষ্টিজয়ীদের সঙ্গে।

ফরিদপুরে কৃষক দলের সহ-সভাপতিকে অব্যাহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

মো:টিটুল মোল্লা,ফরিদপুর।।

ফরিদপুর মহানগর কৃষক দলের সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিককে মিথ্যা অভিযোগে অব্যাহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে লায়লা আউয়াল মার্কেটের অফিস কক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর সিদ্দিক তার বক্তব্যে বলেন, গত ৮ জানুয়ারি কৃষক দলের দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি এবং বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু যে অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

তিনি বলেন, গত রোববার (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বিকেলে তার এলাকা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। তার আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকার বিএনপি কর্মী সমর্থক সহ-সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
ফলে স্থানীয় মুরুব্বিরা তাকে ফোন করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিষয়টি দেখতে বলেন। তাদের কথামতো তিনি সেখানে গিয়ে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা না করেন সে অনুরোধ করে উপস্থিতদের সামনে একটি বক্তব্য দেন।

কিন্তু স্থানীয় একটি পক্ষ ওই ভিডিও ছড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মিথ্যা অভিযোগ জানায়।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বিএনপির রাজনীতি করার ফলে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক লীগের এক নেতা বাদী হয়ে দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলার ১৪ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি তিনি। এ পর্যন্ত একাধিকবার জেল খেটেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ নির্বাচন বর্জনের লক্ষ্যে তিনি কৃষক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছেন।

তার দাবি, ফরিদপুর শহরের রাজনীতিতে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি ওই এলাকার নেতৃত্ব দেন। কিন্তু দলের মধ্যে আন্তঃকোন্দলের ফলে একটি পক্ষ তাকে দুর্বল করতে বিষয়টি রংচং মাখিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল বুঝিয়েছে। তিনি সঠিক ঘটনা বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে তাকে দলে পুনর্বহালের দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর মহানগর কৃষক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুন-অর-রশীদ মামুন।

অন্যের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, সহ-সভাপতি আবু তাহের, সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম মোল্যা, মিলন খন্দকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবু সায়ীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

1 2 3 365